Advertisement
১৭ অক্টোবর ২০২৪
শব্দ-তাণ্ডব, স্বীকার প্রশাসনের
Loud DJ Music

নিয়ম মানছে কে, বক্সে নাকাল সদর

প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বেশ কিছু বছর ধরেই মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে শব্দবাজি এবং ডিজে বক্স ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন।

সিউড়ির রাস্তায় পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডি জে বক্স।

সিউড়ির রাস্তায় পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডি জে বক্স। সমাজমাধ্যম থেকে নেওয়া ছবি।

সৌরভ চক্রবর্তী
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩৬
Share: Save:

সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেলা সদরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় দেদার বাজল ডিজে বক্স। শহর জুড়ে এই শব্দ তাণ্ডবে কাহিল বহু মানুষ। এই বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছেও একগুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে। যে-সব পুজো কমিটি নিয়ম বহির্ভূতভাবে তারস্বরে বক্স বাজিয়েছে, আগামী দিনে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে, পুলিশের উপস্থিতিতেই এ ভাবে নিয়ম ভাঙার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বেশ কিছু বছর ধরেই মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে শব্দবাজি এবং ডিজে বক্স ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। পুজো কমিটিগুলিকে প্রশাসনের কাছে পুজোর ছাড়পত্র নেওয়ার সময়েও ডিজে বক্স ব্যবহার করা হবে না বলে জানাতে হয়৷ অনলাইনে পরিবেশবান্ধব পুজোর ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও শব্দ দূষণ না-করার কথা আগাম জানানো অন্যতম শর্ত। সিউড়ি শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এই সব নিয়ম কাগজে-কলমেই রয়ে গিয়েছে। বাস্তবে অনেক পুজো কমিটিই যে নিয়মের তোয়াক্কা করছে না, তা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় তারস্বরে বক্স বাজা থেকেই স্পষ্ট।

সোমবার ও মঙ্গলবার সিউড়ি শহর জুড়ে বিভিন্ন পুজো কমিটির প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। যার ফলে দুই দিনই শহর জুড়ে বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ ছিল, যানজটের শিকার হতে হয় বহু মানুষকে। তবে, এই সমস্যাকে মেনে নিয়েই সাধারণ মানুষ রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা প্রত্যক্ষ করেছেন৷ কিন্তু, বেশ কিছু শোভাযাত্রায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি প্রবল আওয়াজের ডিজে বক্স বাজানো হয় বলে অভিযোগ। বিকট আওয়াজে অনেকেই, বিশেষ করে বয়স্কেরা অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন৷ দুই দিনই সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত প্রায় একটা-দেড়টা পর্যন্ত চলে এই তাণ্ডব। বিশেষত মসজিদ মোড়, বাজারপাড়ার মতো জনবহুল এলাকায় প্রবল আওয়াজে বক্স বাজানোর বিরোধিতা করেন অনেকেই৷ পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগও জানান অনেকে।

মসজিদ মোড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা অনিব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, টিনবাজার এলাকার বাসিন্দা চিরন্তন দে বলেন, “যে মাত্রায় বিসর্জনের শোভাযাত্রায় আওয়াজ করা হয়েছে, তা যে কোনও সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করার পক্ষে যথেষ্ট। বাড়ির ভিতরে দরজা, জানলা বন্ধ করেও থাকা কঠিন হয়ে পড়ছিল। রাস্তা থেকে আসা আওয়াজে জানলার কাচ কাঁপছিল। শারীরিক অস্বস্তিতে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। কয়েক বছর আগেও সিউড়ির পরিস্থিতি এমন ছিল না।”

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, “এই ধরনের আওয়াজ স্থায়ী বধিরতা, গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা তৈরি করে। সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে ডিজে বক্স বাজানো সম্পূর্ণ আইন-বিরুদ্ধ। এই ঘটনা ঘটলে সেই বক্স বাজেয়াপ্ত করা এবং জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে কে শোনে কার কথা!’’ তাঁর দাবি, এখানে দুষ্কৃতীরা আইনের ঊর্ধ্বে। তাই যেমন চলছে, তেমনই চলবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিসর্জনের শোভাযাত্রা করেছিল টিনবাজার সংলগ্ন একটি বড় ক্লাব৷ সেই ক্লাবের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের প্রশাসনের তরফ থেকে বার বার বারণ করা হয়েছিল, গাড়ি আটকে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সবটা আমাদের হাতেও থাকে না। ক্লাবের ছেলেদের বারণ করলে একটু আওয়াজ কমাচ্ছিল, আবার ফাঁকা জায়গা পেলেই আওয়াজ বাড়িয়ে দিচ্ছিল।’’ তাঁর দাবি, তাঁরা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন, শব্দবিধি মেনেই বিসর্জনে বক্স বাজবে। কিন্তু, অধিকাংশ পুজো কমিটিই সেটা মানেনি।

পুজো কমিটিগুলিকে মাইকের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা আছে সদর মহকুমাশাসকের হাতে। বিসর্জনে নিয়ম না মানার কথা স্বীকার করে মহকুমাশাসক সুপ্রতীক সিংহ বলেন, “পুজো মণ্ডপে বক্স ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হলেও বিসর্জনে অনেকেই তা মানেনি। আমার কাছেও একাধিক অভিযোগ এসেছে। আমরা সেই সব পুজো কমিটিকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছি। কালীপুজোর সময় যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনা চলছে।’’

এই পুজো কমিটিগুলি ভবিষ্যতে আবার এমন কাজ করলে, তাদের পুজোর অনুমতি দেওয়া বা সরকারি অনুদান দেওয়ার বিষয়টিও নতুন করে ভেবে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।

অন্য বিষয়গুলি:

Suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE