সিউড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
বিতর্কিত মন্তব্য করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এ বারও ভোটের আগে তাঁর নানা মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। হেঁয়ালির আড়ালে তিনি কী বলতে চেয়েছেন, তা নিয়ে প্রতিবার চলে কাটাছেঁড়া। তিনি অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার দলের শিক্ষক সংগঠনের সভায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির করা মন্তব্য ঘিরেও ঠিক তেমনটাই হল।
কী বলেছেন তিনি?
এ দিন সিউড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশে অনুব্রত বলেন, ‘‘এ বার ভোটের অনেক গুরুত্ব আছে। অনেক মানে আছে। তাই প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে গুরুত্ব দিয়ে ভোটটা করে দিতে হবে। ভোটের দিন ভোটকর্মীদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। প্রলয়কে (তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রলয় নায়েক) বলব, যাঁরা যেখানে ডিউটি করছেন, সেখানকার ব্লক সভাপতিদের নম্বর দিয়ে দেবে। আপনাদের যদি কোনও ক্ষতি হয় তাহলে আপনারা আমাকে ধরবেন। কোনও রকম অসুবিধা হবে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কিন্তু একটা অনুরোধ করব। যাঁরা প্রিসাইডিং থাকবেন, তাঁদের বলব, আমরা ‘পোল ভোটটা’ (৫০০-৬০০) করে নেব, আপনারা সেই সুযোগ দেবেন।’’
অনুব্রতের বলা ‘পোল ভোট’কেই বিরোধীরা ‘ছাপ্পা’-র তকমা দিচ্ছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘এটা তো জলের মতো স্পষ্ট, উনি ছাপ্পা ভোট করানোর সুযোগ দিতে বলছেন দলের শিক্ষক সংগঠনকে! কতটা বেপরোয়া হলে একটা মানুষ দিনের পর দিন এ ভাবে কথা বলার স্পর্ধা দেখাতে পারেন, ভেবে অবাক হচ্ছি।’’ অনুব্রত যে পোলভোটে-র হেঁয়ালি নিয়ে আদতে ছাপ্পা দেওয়ার কথা বলেছেন বলে দাবি সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদারও। তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার উনি কে?’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ প্রসঙ্গে বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দিন কয়েক আগে রামপুরহাটের সভার কথা। ওই সভায় অনুব্রত ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, বীরভূম কেন্দ্রের ১৭ লক্ষ ভোটারের মধ্য ১২ লক্ষ ভোটই যেন তাঁদের দল পায়! তার জন্য ‘অন্য রকম পদ্ধতি’ ব্যবহারের নিদান দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘সিরিঞ্জ তো ছোট ও বড়, দু’রকমই হয়! রোগ সারাতে গেলে যখন যা প্রয়োজন, তা-ই প্রয়োগ করতে হবে।’’ বিরোধীদের দাবি, শাসকদলের অনুকুলে ১২ লক্ষ ভোট তো আর আকাশ থেকে পড়বে না। ছাপ্পা বা সন্ত্রাসের সাহায্য নিতেই হবে। ‘‘তাই বলে ভোটের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মীদের এ ভাবে বলা যায়!’’—প্রশ্ন এক বিরোধী নেতার।
যদিও পোল ভোট বলতে তিনি ঠিক কী বলতে চাইছেন, তা প্রশ্ন করা সত্ত্বেও খোলসা করেননি জেলা তৃণমূলের সভাপতি। এ বারও হেঁয়ালিতেই বলেছেন, ‘‘যাঁদের বলা হয়েছে, তাঁরা নিশ্চই বুঝেছেন।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদকের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ভোটকর্মীদের ওই নির্দেশ দিয়েও ওরা কিছু করতে পারবে না। মানুষ নিজের ভোট নিজে দেবেন, সন্ত্রাস হলে রুখে দেবেন। অন্য দিকে রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘আশা করব, প্রশাসন নিরপক্ষ দায়িত্ব পালন করবেন। তা হলে পোলভোট করা বেরিয়ে যাবে!’’ তিনি জানান, এ দিনের সভার ভিডিয়ো ফুটজে হাতে পেলেই তাঁরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাবেন।
তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রলয় নায়েকের দাবি, ‘‘অহেতুক বিতর্ক তৈরি করছেন বিরোধীরা। আমার ধারণা, কেষ্টদা পোস্টাল ব্যালটের কথা বলতে চেয়েছেন। তা ছাড়া সংগঠনে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের কাছে ভোট নিজেদের অনুকুলে ভোট চাওয়ায় কোনও অন্যায় নেই।’’ এর পাল্টা বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের জেলা সম্পাদক আশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভোট করানো নিয়ে ভোটকর্মীদের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তিক্ত। তাঁরা আতঙ্কিত। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার—ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আমরা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক ও কমিশনকে জানাচ্ছি। নিরাপত্তা দেবে কমিশন। এখানে কোন এক মণ্ডল বা নায়েক কী বলছেন সেটা বিবেচ্য নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy