Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
অবৈধ কয়লা কারবারে চুপ পুলিশ-প্রশাসন

রাস্তায় নামল ধস, বিপদের মুখে খয়রাশোলের বাসিন্দা

বেআইনি খাদান থেকে কয়লা তোলার ফলে রাস্তা ছুঁয়ে নামল বিশাল ধস। তার জেরে যান চলাচল বন্ধ হতে বসেছে ওই রাস্তায়। মঙ্গলবার খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানার পারশুণ্ডি থেকে আড়ং যাওয়ার রাস্তার ওই ঘটনা। পরিস্থিতির বদল না ঘটলে সিউড়ি থেকে চলাচলকারী দু’টি বাসই বন্ধ হয়ে যাবে।

কয়লা চুরির জেরে ধর নেমে রাস্তায় বিপজ্জনক ফাটল। —ফাইল চিত্র।

কয়লা চুরির জেরে ধর নেমে রাস্তায় বিপজ্জনক ফাটল। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

বেআইনি খাদান থেকে কয়লা তোলার ফলে রাস্তা ছুঁয়ে নামল বিশাল ধস। তার জেরে যান চলাচল বন্ধ হতে বসেছে ওই রাস্তায়। মঙ্গলবার খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানার পারশুণ্ডি থেকে আড়ং যাওয়ার রাস্তার ওই ঘটনা। পরিস্থিতির বদল না ঘটলে সিউড়ি থেকে চলাচলকারী দু’টি বাসই বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে যোগোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এলাকার বেশ কিছু গ্রাম।

বিপজ্জনক এই পরিস্থিতি দেখে সকাল থেকেই ক্ষোভ ছড়ায় গোটা এলাকায়। সেই ক্ষোভ ঢাকতে জেসিবি যন্ত্র ব্যবহার করে গর্ত বুজিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন কিছু লোক। পাশাপাশি বেআইনি কয়লা কারবার প্রকাশ্যে চলে আসবে, এই আশঙ্কায় সংবাদমাধ্যমকেও ওই এলাকায় ঢুরতে বাধা দেন এক শ্রেণির লোক। যদিও মাটি ফেলে গর্ত ঢাকার ওই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় এলাকারই কিছু বাসিন্দা। চিন্তিত বাস মালিকেরাও। জেলার বাসমালিক সংগঠনের জেলা সম্পাদক শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আপাতত রাস্তা থেকে কিছুটা নেমে গ্রামের ভিতর দিয়ে বাস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে রাস্তার বর্তমান অবস্থাটা দ্রুত না বদলালে বাস বন্ধ করতেই হবে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’ এ নিয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও এ দিন ফোন ধরেননি জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। সাড়া মেলেনি জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীরও।

এ দিকে, এ ব্যাপারে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি উঠেছে এলাকার সংবেদনশীল মানুষের পক্ষ থেকেও। তাঁদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, এই অবৈধ কয়লা কারবারে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশেরও প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন তারা কোনও পদক্ষেপ করবেন না, পুলিশ-প্রশাসনের কাছে তার জবাবদিহি ওই বাসিন্দারা দাবি করেছেন। এলাকাবাসীরই অপর একটি অংশ অবশ্য দাবি করছে, শুধু পুলিশ-প্রশাসনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ এলাকাবাসীর একাংশও ওই অবৈধ কয়লা কারবারে যুক্ত রয়েছেন। মদত রয়েছে রাজানৈতিক দলেরও। সেই চক্রকে খেপিয়ে তুলতে পুলিশ-প্রশাসন সহজে রাজি হবে না বলেই ওই বাসিন্দাদের মত। অতীতেও একাধিক বার ওই কারবারকে ঘিরেই উত্তপ্ত হয়েছে খয়রাশোল ও কাঁকরতলা থানার বিস্তীর্ণ এলাকা। সেখানে একাধিক খুন ও হিংসাত্মক ঘটনার মূলেই রয়েছে অবৈধ কয়লা সাম্রাজ্য। অবৈধ কয়লা কারবারের সঙ্গেই বিভিন্ন সময়ে শাসক-বিরোধী নানা নেতার নামও জড়িয়েছে। বস্তুত, গোটা খয়রাশোল ব্লকের অর্থনৈতিক ভিত্তিই কয়লা কারবারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল। বারবার দাবি উঠলেও এমন এক ঘুঘুর বাসায় ঢিল মারার সাহস কেউ-ই দেখাননি।

এ দিন ঠিক কী ঘটেছে?

নামপ্রকাশ না করার শর্তেই এলাকাবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বড়রা গ্রাম থেকে আসার পথে পারশুণ্ডি জঙ্গল পেরিয়েই রাস্তার দু’ধারে প্রায় তিনশো বেআইনি কয়লা খাদান গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে নিয়মিত তোলা হয় কয়লা। স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘পুলিশের একাংশের মদতেই কয়লা মাফিয়াদের উদ্যোগে একটি খোলামুখ কয়লাখনিই তৈরি হয়েছিল। সেখান থেকে ভারী যন্ত্র লাগিয়ে প্রতি দিন গড়ে ৪০-৫০ ডাম্পার কয়লা তোলা হচ্ছিল।’’ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া হতেই কয়লা তোলা বন্ধ হয়। কিন্তু তাতেও ছেদ পড়েনি ছোটবড় অবৈধ কয়লা খাদান থেকে কয়লা তোলার এই ফাটকা কারবারে। ফলে মাটিরতলা ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। বিপত্তি তাতেই। এ দিন হঠাৎ-ই রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় ওই ধস নামে।

এ দিকে, এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, পারশুণ্ডি পঞ্চায়েতের আড়ং নামের একটি বড় গ্রাম ছাড়াও বড়কোলা ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ওই রাস্তা ব্যবহার করেন। যখন বাস বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই চাপা ক্ষোভ ছড়ায়। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘ঠিক একই কারণে পূর্ব রেলের অন্ডাল–পলাস্থলী শাখাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে দীর্ঘদিন। ইঁদুর যে ভাবে মাটির নীচে সুরঙ্গের জাল বিস্তার করে, এখন এই এলাকার রাস্তার নীচের সেই একই অবস্থা।’’ ঠিক কোন কারণে এলাকার এই কোটি কোটি টাকার অবৈধ কারবার নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন এমন নীরব, তার সদুত্তর অবশ্য দিতে পারেননি কর্তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

khayrashol landslide illegal coal mining
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE