প্রতীকী ছবি।
রেশনের বিল করতে হবে অনলাইনে—সোমবার রাজ্য খাদ্য দফতরের জারি করা এমন একটি নির্দেশিকায় বিতর্ক বেধেছে। রেশন ডিলারদের বড় অংশের অভিযোগ, কোনও আলোচনা না করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দফতর। পাশাপাশি, নির্দেশিকায় থাকা নিয়মের ‘গেরো’য় রেশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলছেন গ্রাহকদের একাংশ। দাবি, ‘সার্ভার’-এর সমস্যায় ঘণ্টার পরে ঘণ্টা রেশন দোকানে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বাড়ছে হয়রানি।
খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ যদিও বলেন, ‘‘নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী সকলেই রেশন পাবেন। তবে বিল করতে হবে অনলাইনে। নির্দেশিকাটি ডিলারদের কোথাও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে কি না, খোঁজ নিচ্ছি। রাজ্যের সমস্ত জেলার খাদ্য নিয়ামকদের মাধ্যমে ডিলারদের বিষয়টি বোঝানো হবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নতুন নিয়মে জুনের প্রথম দিন থেকেই ‘ই-পস’ যন্ত্রে বিল দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে সরাসরি খাদ্য দফতরের ‘পোর্টাল’-এ কোন গ্রাহককে কত মাল দেওয়া হচ্ছে, সে তথ্য জমা হবে। পাশাপাশি, এ-ও জানানো হয়েছে, যে সব রেশন গ্রাহকদের মোবাইল নম্বর বা আধার কার্ড রেশন কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মাল তুলতে গেলে বায়োমেট্রিক যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দিতে হবে অথবা মোবাইলে খাদ্য দফতরের তরফে পাঠানো ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) জানাতে হবে।
তবে জেলার বহু গ্রাহকের এখনও রেশন কার্ডে আধার বা মোবাইল নম্বর ‘লিঙ্ক’ করানো হয়নি বলে দাবি। তা ছাড়া, বহু গ্রাহক এমনও রয়েছেন, যাঁদের রেশন কার্ড থাকলেও খাদ্য দফতরের ‘পোর্টাল’-এ নাম নথিভুক্ত করা নেই। এত দিন এ ধরনের গ্রাহকদের ‘অফলাইন’-এ মাল দিতেন বলে জানান রেশন ডিলারেরা। এখন তাঁরাও অনলাইনে মাল পাওয়ার যোগ্য কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় ডিলারদের বড় অংশই। রাজ্য ‘এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক গুরুপদ ধক বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা সার্ভার অচল হয়ে থাকায় গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ নেওয়া যাচ্ছে না। মোবাইলে অনেক সময়ে ‘ওটিপি’-ও আসছে না। এ দিকে, রেশন কার্ডের সঙ্গে যাঁদের আধার কার্ড বা মোবাইল নম্বর সংযুক্ত হয়নি বা যাঁদের পোর্টালে নাম নেই অথচ রেশন কার্ড রয়েছে, নতুন নিয়মে তাঁদেরও মাল দেওয়া যাচ্ছে না।’’
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য সাফ জানান, নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যাঁদের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার বা মোবাইল নম্বরের সংযুক্তিকরণ হয়নি, তাঁদের অগস্ট পর্যন্ত মাল দেওয়া যাবে। ‘পোর্টাল’-এ নাম না থাকা গ্রাহকদেরও একই ভাবে রেশন দেওয়া যাবে।
বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সীমা হালদার বলেন, ‘‘অগস্টের মধ্যে যাতে জেলার বাকি গ্রাহকদের আধার সংযুক্তিকরণ হয়ে যায়, তা দেখা হচ্ছে। সার্ভারের সমস্যাটি রাজ্যকে জানানো হয়েছে।’’
তবে নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে ভোগান্তির অভিযোগ তুলছেন গ্রাহকদের অনেকেই। বড়জোড়ার বাসিন্দা দেবাশিস ভাণ্ডারি বলেন, “সকালে রেশন তুলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সার্ভারের সমস্যা হওয়ায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরে মাল পেয়েছি। আর যে সব গ্রাহকদের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার বা মোবাইল নম্বরের ‘লিঙ্ক’ করানো নেই, তাঁদের ডিলার মাল না দিয়েই ফিরিয়ে দিয়েছেন।”
বিষয়টি মেনে নিয়ে গুরুপদবাবু বলেন, “নতুন নির্দেশিকা জারি হওয়ার আগে ডিলারদের এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই বহু ডিলার গোটা বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন।” তাঁর দাবি, “সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে কোনও কাজ করতে আমরা নারাজ। প্রশাসনের তরফে সমস্ত ডিলারদের সহজ ভাবে নির্দেশিকায় কী বলা হয়েছে ও কোন পথে তা বাস্তবায়িত হবে, তা বোঝানো হোক।” জেলা প্রশাসন সূত্রে যদিও জানা যাচ্ছে, সরকারি নির্দেশিকা বাংলায় ‘লিফলেট’ আকারে ছাপিয়ে রেশন ডিলারদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেশন দোকানের বাইরেও তা রাখা হবে, যাতে গ্রাহকেরাও বিষয়গুলি জানতে পারেন।
গোটা বিষয়ে ‘পরিকল্পনার অভাব’ রয়েছে দাবি করে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে রেশন গরিব মানুষের বড় ভরসা। সেখানে কোনও কিছু না ভেবে, কোনও আলোচনা না করেই রাজ্য সরকার এমন নির্দেশিকা জারি করে আখেরে মানুষকে হয়রানির মধ্যে ফেলেছে। সমস্ত মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে রেশন পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।” তবে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছর লকডাউন-পর্বে রেশন বিলি নিয়ে বেশ কিছু ‘গরমিল’-এর বিষয় সামনে এসেছিল। তার পরেই একটি ‘ইন্টিগ্রেডেট’ ব্যবস্থা চালু করতে পদক্ষেপ হয়। সেখানে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করা, রেশন সামগ্রী নিয়ে ডিলারেরা যাতে কারচুপি করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যার ফলশ্রুতি, এই নতুন ব্যবস্থা। এ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত প্রচারও চলেছে বলে প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি।
রাজ্য খাদ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডিরও দাবি, “কারা রেশন তুলছেন, ঠিকঠাক রেশন সামগ্রী পাচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত করতেই নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এতে রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসবে। কোনও গ্রাহকই রেশন থেকে বঞ্চিত হবেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy