Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
চাঞ্চল্য সিউড়িতে

সরকারি অফিসে ঝুলন্ত দেহ

গোটা টেবিল জুড়ে পেপার ওয়েট দিয়ে সযত্নে রাখা বেশ কয়েকটি কাগজ। সঙ্গে চশমা, মোবাইল, কলম, ওষুধ, টাকা আর চাবির কিছু গোছা। একটি কাগজে জেলাশাসকের উদ্দেশে লেখা— ‘আমার বুকে খুব ব্যথা, আর পারছি না’। সেই টেবিলেরই উল্টো দিকে ঝুলছে এক বৃদ্ধের দেহ।

টেবিলে পড়ে রয়েছে নানা জিনিসপত্র। (ইনসেটে) অশোক দে। বৃহস্পতিবার সকালে সিউড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

টেবিলে পড়ে রয়েছে নানা জিনিসপত্র। (ইনসেটে) অশোক দে। বৃহস্পতিবার সকালে সিউড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

গোটা টেবিল জুড়ে পেপার ওয়েট দিয়ে সযত্নে রাখা বেশ কয়েকটি কাগজ। সঙ্গে চশমা, মোবাইল, কলম, ওষুধ, টাকা আর চাবির কিছু গোছা। একটি কাগজে জেলাশাসকের উদ্দেশে লেখা— ‘আমার বুকে খুব ব্যথা, আর পারছি না’। সেই টেবিলেরই উল্টো দিকে ঝুলছে এক বৃদ্ধের দেহ।

বৃহস্পতিবার সকালে সিউড়ির ফলিত অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান দফতরে আধিকারিকের ঘরে ওই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন সহকর্মীরা। খবর পেয়ে ছুটে এলেন খোদ জেলাশাসকও। দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালেন পুলিশ ও দমকলকর্মীরা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অশোক দে (৬০)। তিনি ওই দফতরেরই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন। বাড়ি সিউড়ির কলেজ পাড়ায়। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁর অবসর নেওয়ার দিন ছিল। তার আগেই এমন ঘটনায় হতবাক সবাই। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদ থেকে অশোকবাবু আত্মঘাতী হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। তবে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়। কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী।

পুলিশ ও দফতর সূত্রের খবর, সিউড়িতে জেলাশাসকের দফতর সংলগ্ন সংখ্যালঘু দফতরের তিনতলায় রয়েছে জেলা ফলিত অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান দফতর। অশোকবাবু ওই দফতরে দারোয়ান তথা ফারাতের (‌চেয়ার টেবিল পরিষ্কারকারী) কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী বছর পাঁচেক আগে মারা গিয়েছেন। একমাত্র ছেলে অসীম আসানসোলে পুলিশে চাকরি করেন। ছেলে পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকেন। কলেজপাড়ার বাড়িতে অশোকবাবু বর্তমানে একাই থাকতেন। বিকেলে অফিস ছুটির আগেই কাজে যোগ দিতেন। রাতে প্রহরার কাজ শেষে প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে অফিসের তালা খুলে দিতেন। তারপর সুইপার এসে ঝাঁট দিতেন। ঝাঁট দেওয়া শেষ হলে অশোকবাবু চেয়ার টেবিল ও আসবাবপত্র পরিষ্কার করা শুরু করতেন। তার পর বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ি চলে যেতেন। বুধবারও এই রোজনামচার হেরফের হয়নি।

কিন্তু, বৃহস্পতিবার সকালে অফিস ঝাঁট দিতে এসে সুইপার শিশির মাহারা দেখেন, অফিসের গেটের তালা তখনও খোলা হয়নি। বহু ডাকাডাকি করেও তিনি অশোকবাবুর কোনও সাড়া পাননি। চিন্তিত শিশিরবাবু মনোজিৎ দাস নামে দফতরের এক সিনিয়ার কর্মীর বাড়ি গিয়ে সে খবর দেন। মনোজিৎবাবু বলেন, ‘‘শিশিরবাবুকে সাইকেল দিয়ে অশোকদার বাড়িতে পাঠাই। তিনি ঘুরে এসে জানান, সেখানেও কেউ নেই।’’ তত ক্ষণে ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছুঁই ছুঁই। অফিসকর্মীরা একে একে আসতে শুরু করেছেন। কিন্তু তখনও অফিসের তালা খোলেনি। ১০টা নাগাদ অফিসে আসেন দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হেমন্ত সরকার। হেমন্তবাবু বলেন, ‘‘অশোকবাবুর কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পৌনে ১১টা নাগাদ পুলিশ ও দমকল বাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। দমকল কর্মীরা তালা ভাঙার পরে পুলিশ তিনতলার ঘর থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় নাইলনের দড়ির ফাঁস লাগানো অশোকবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে।’’ অশোকবাবুর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

আর ক’দিন পরেই যে মানুষটা কর্মজীবন থেকে অবসর নেবেন, তাঁর এমন মৃত্যুতে হতবাক ডিরেক্টর থেকে অফিসের সহকর্মীরা। মনোজিৎবাবু বলেন, ‘‘বুধবার বিকেলে অফিসের কাজে যোগ দিয়ে অশোকদা বলছিলেন, ওঁর শরীরে খুব ব্যাথা। তখনও বুঝতে পারিনি যে এমনটা ঘটে যাবে।’’ মনোজিৎবাবুর মতোই তাঁর এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না সহকর্মী বিজন দাস, মলয় সরকারেরা। পুলিশ জানায়, ঝুলন্ত দেহের পাশেই একটি কাঠের মই ছিল। সম্ভবত ওই মইয়ে উঠে ফ্যানে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলেছেন অশোকবাবু। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। অশোকবাবুর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

স্কুলে মারধর। অপরাধ, দরজা খুলতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। আর সেই ‘অপরাধে’ই স্কুলের ৩৫ বছরের কর্মীকে সপাটে থাপ্পড়, ঘুষি মারার অভিযোগ উঠল পরিচালন সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার বর্ধমানের কাটোয়ার আক্রা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের একাংশ। দিনভর লাটে উঠল পঠনপাঠন।

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। ওই দিন স্কুলের এক শিক্ষিকার বিদায় সংবর্ধনার অনুষ্ঠান ছিল। দুপুরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন সভাপতি প্রভাত মহলাদার এবং উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নামে পরিচালন সমিতির আরও এক সদস্য। তখন স্কুলের দরজা তালাবন্ধ দেখে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হরিপদ আচার্যের নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন প্রভাতবাবু। খানিক বাদে দরজা খোলেন রোহিত সাঁতরা নামে এক জন। হরিপদবাবুর ছেলে বিদ্যুৎ আচার্যের অভিযোগ, স্কুলে ঢুকেই গালিগালাজ শুরু করেন সভাপতি। আচমকা বচসা বাধে দু’জনে। অভিযোগ, সভাপতি সপাটে চড়, ঘুষি মারতে শুরু করেন হরিপদবাবুকে। ঘাড়ে ও মাথায় চোট পেয়ে হরিপদবাবু মাটিতে পড়ে যান। ঘটনার প্রতিবাদে ক্লাস বয়কট করেন স্কুলের ১৮ জন শিক্ষক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE