সচেতনতা প্রচারের ফল মিলেছে। নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে আগের তুলনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেকটাই কমেছে। তার জেরে পাহাড়ে বেড়েছে সবুজের পরিমাণ। বেড়েছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও। সমীক্ষার পরে এমনই দাবি করছে বন দফতর। একই ঘটনা ঘটেছে আর এক পর্যটনকেন্দ্র বড়ন্তিতেও।
গড়পঞ্চকোটের বনাঞ্চল রক্ষায় দফতর নানা ব্যবস্থা নিলেও ফি বছর পাহাড়ে আগুন লেগে প্রচুর গাছের ক্ষতি হত। বিপদে পড়ত বন্যপ্রাণীরাও। আগুন ঠেকাতে পাহাড় লাগোয়া গ্রামগুলিতে লাগাতার প্রচার চালায় বন দফতর।
রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসার নীলাদ্রি সখা বলেন, ‘‘গত বছর পাহাড়ে মাত্র তিন হেক্টর এলাকার গাছপালা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে এর কয়েক গুণ বেশি জঙ্গল পুড়ত।’’ তাঁর মতে, স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও বনকর্মীদের সক্রিয়তাতেই এই সাফল্য এসেছে।
বন দফতরের দাবি, এর ফলে ১৩৪০.৩৫ হেক্টর এলাকা নিয়ে অবস্থিত গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে সবুজ বেড়েছে। পাহাড়ের বনাঞ্চলের ৭০ শতাংশ শাল জঙ্গল। বাকি অংশে আসন, লোহাজাগি, পুতলা, শ্বেতিশাল, মাকড়কেন্দ, বেলকেন্দ, সিধার মতো গাছ আছে। এছাড়া এখানে অন্তত দুশো ভেষজ গাছ রয়েছে। ‘মেডিসিনাল প্ল্যান্ট কনভারজেশন এরিয়া সার্ভে’তে দেখা গিয়েছে ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে ৫০ ধরনের গাছ, ৩৩ ধরনের ছোট গাছ ও ১১০ ধরনের গুল্ম ও ১৭ ধরনের লতানে গাছ আছে। রেঞ্জ অফিসার বলেন, ‘‘পাহাড়ে আগুন লাগলে ভেষজ উদ্ভিদেরও ক্ষতি হত।’’
সাঁতুড়ির বড়ন্তি পাহাড়েও বনাঞ্চল বাড়ছে। বন দফতরের দাবি, সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বড়ন্তি, দণ্ডহিত, পারুলি এলাকায় গত চার-পাঁচ বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ সবুজায়ন বেড়েছে। বিশেষ করে পারুলিতে প্রায় ৩০ হেক্টর শালগাছের একটা বিশাল জঙ্গল তৈরি হয়েছে।
জঙ্গল বাড়ার কারণেই ওই দুই পাহাড় এলাকাই শুধু নয়, সামগ্রিক ভাবে রঘুনাথপুর রেঞ্জ এলাকায় বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে বলে বনসুমারিতে জানা গিয়েছে। গত বছর বনসুমারি করেছে বন দফতর। বন্য প্রাণীদের বিষ্ঠা, রোম, পায়ের ছাপের উপরে ভিত্তি করে বনসুমারি হয়েছে।
দফতরের দাবি, গড়পঞ্চকোট এলাকায় হায়নার সংখ্যা বেড়েছে। দুই প্রজাতির শেয়াল বেড়েছে ভাল মতো। ওয়াইল্ড ক্যাট বা বনবেড়ালের সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল। বনসুমারিতে দেখা গিয়েছে, বনবেড়ালের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। বড়ন্তির জলাধার ও দামোদর নদ এলাকায় পাওয়া গিয়েছে মেছো বেড়াল বা ফিসিং ক্যাট। বিশেষ করে গড়পঞ্চকোট ও বড়ন্তিতে মিলেছে বিরল প্রজাতির ‘রাস্টি স্পটেড ক্যাট’।
বনাঞ্চল বাড়ার কারণে গন্ধগোকুলের সংখ্যাও রঘুনাথপুর এলাকায় অতীতের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে বলে দাবি বন দফতরের। বনকর্মীদের দাবি, গন্ধগোকুল বেড়েছে তার প্রমান মিলছে লোকালয় থেকে গত কয়েকমাস ধরে প্রচুর পরিমাণে গন্ধগোকুল উদ্ধারের ঘটনাতেই।
বেড়েছে বনশুয়োর ও সজারুর সংখ্যাও। বিশেষ করে গড়পঞ্চকোটে ময়ূরের সংখ্যা বাড়ার ঘটনা ইতিবাচক দিক বলে দাবি বন দফতরের। বড়ন্তি এলাকার দণ্ডহিত পাহাড়ে হরিণের সংখ্যা অনেক পরিমাণে বেড়েছে। রেন্জ অফিসার নীলাদ্রি সখা বলেন, ‘‘একসময়ে পাহাড় থেকে লোকালয়ে পুকুরে জল খেতে এসে কুকুরের আক্রমণে হরিণের মৃত্যু পর্যন্ত এখানে হয়েছে। তাই পাহাড়ের উপরেই জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে হরিণ বাঁচাতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশংসনীয় ভাবে সচেতনতা বেড়েছে। যার জেরে গত দু’বছরে হরিণের মৃত্যু ঘটেনি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)