গাজন মেলায় ফের চড়ক ভেঙে বিপত্তি। প্রায় ২০ ফুট উপর থেকে চড়কের উপরের অংশ-সহ মাটিতে পড়লেন দুই ভক্ত। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের খামারবেড়িয়া গ্রামের গাজন মেলায়। আহত দু’জনকে প্রথমে ওন্দা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আহতদের বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য বছরের মতো চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের খামারবেড়িয়া গ্রামের শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে গাজনের মেলা শুরু হয়। সেই গাজনে রীতি মেনে সন্ধ্যার পর শুরু হয় চড়ক। লোহার যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি চড়কের একপ্রান্তে প্রায় ২০ ফুট উঁচুতে দড়ি দিয়ে ভক্তকে বেঁধে দেওয়া হয়। অন্যপ্রান্তে আর এক ভক্তকে বেঁধে চড়ক ঘোরানো শুরু হয়। চড়ক দেখতে শুধু খামারবেড়িয়া গ্রামই নয়, সোমবার সন্ধ্যায় আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন খামারবেড়িয়া শিব মন্দির সংলগ্ন মাঠে। চড়ক ঘোড়া শুরু করতেই বিপত্তি ঘটে। আচমকাই চড়কের মাঝখানে থাকা লোহার যন্ত্রাংশ কাঠের খুঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে চড়কের উপরের অংশ হুড়মুড় করে মাটিতে আছড়ে পড়ে। চড়কের উপরের অংশের পাশাপাশি প্রায় ২০ ফুট উচ্চতা থেকে মাটিতে আছড়ে পড়েন চড়কে বাঁধা অবস্থায় থাকা দুই ভক্তও। এই ঘটনায় উপস্থিত দর্শক ও পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা হীরালাল গরাই বলেন, ‘‘খামারবেড়িয়া গ্রামে গাজন মেলায় কয়েকশো বছর ধরে এই চড়কের আয়োজন হয়ে আসছে। কিন্তু কখনও এমন দুর্ঘটনা ঘটেনি। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ চড়ক ঘোরার সময় ভক্ত-সহ চড়কের উপরের অংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। তাতেই দু’জন আহত হয়েছেন।’’
বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের নিত্যানন্দপুর গ্রামেও চড়ক থেকে হাত ফস্কে মাটিতে পড়ে জখম হলেন এক ভক্ত। দ্রুত আহত ভক্তকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে গাজন শুরু হয় সোনামুখী ব্লকের নিত্যানন্দপুর গ্রামে। সন্ধ্যার পর রীতি মেনে চড়কের আয়োজন হয় স্থানীয় গাজন মেলায়। চড়ক শুরু হওয়ার আগে রীতি মেনে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে চড়কের উপর চড়েন উত্তর নিত্যানন্দপুর গ্রামের রাজাপাড়ার ভক্ত ডালিম দাস। মাটি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচুতে ঝুলন্ত অবস্থায় চড়কের একপ্রান্ত থেকে অন্যপান্তে যাওয়ার পথে আচমকাই হাত ফস্কে ডালিম নীচে আছড়ে পড়েন। স্থানীয়েরা দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে আহত ডালিম দাসকে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়।