ক্রমশ সাধারণ রোজগেরে মধ্যবিত্ত মানুষের নাগাল থেকে দূরে সরছে সোনা। বুধবার কলকাতার বাজারে তা আরও উঁচুতে উঠে গেল। এক দিনেই ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম বাড়ল ১৮০০ টাকা। পৌঁছল ৯৫,৭০০ টাকায়। জিএসটি ধরে ৯৮,৫৭১ টাকা। অর্থাৎ এক লক্ষের দোরগোড়ায়। পাল্লা দিয়ে চড়েছে গয়নার সোনাও (২২ ক্যারাট)। এ দিন প্রথম বার তা ৯০,৯৫০ টাকায় পৌঁছেছে। কর ধরে৯৩,৬৭৮.৫০ টাকা।
গয়না ব্যবসায়ীদের দাবি, পয়লা বৈশাখের বাজার ভাল যায়নি। বিশেষত ছোট এবং মাঝারি দোকানগুলির। তাদের বিক্রি কমেছে ৫০-৬০ শতাংশ। বিয়ের মরসুম শুরু হলেও কেউ একান্ত বাধ্য না হলে কিনতে আসছেন না। যাঁরা আসছেন, তাঁদের কেউ না কিনে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ বাড়ির পুরনো সোনার বিক্রি করছেন। একাংশ হালকা ওজনের গয়না কিনছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, গত কয়েক বছরে হালকা গয়নার ঝোঁক এমনিতেই বেড়েছে। কারণ, বহু মানুষের আয় তেমন না বাড়লেও দৈনন্দিন জীবনযাপনের খরচ বেড়েছে লাফিয়ে। ফলে বহু মধ্যবিত্তের গয়না কেনার শখ তো উধাও হয়েছেই। বিয়ের খরচেও গণ্ডি টানতে হচ্ছে।ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-এর ১৫ এপ্রিল খুচরো সোনা (জিএসটি ছাড়া) ছিল ৭৩,৫০০ টাকা। এক বছরে ২২,০০০ টাকারও বেশি দামি হয়েছে। শুধু গত এক মাসেই বেড়েছে ৭৩৫০ টাকা। এই সময়ে গয়নার সোনা চড়েছে ৬৯৫০ টাকা। জেজে গোল্ডের ডিরেক্টর হর্ষদ আজমেরা বলেন, “এখন নতুন সোনা কেনার লোক কম। বরং পুরনোর বিক্রি বেড়েছে।’’ স্বর্ণঋণ সংস্থা আইআইএফএলের আঞ্চলিক কর্তা নিলয় ঘোষ জানান, সোনা বন্ধক দিয়ে ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪০%। বনগাঁর সিংহ জুয়েলার্সের মালিক বিনয় সিংহের আক্ষেপ, “এখন সব জিনিসের দাম চড়া। সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। সাধারণ মানুষ গয়না কিনবেন কী করে? বিক্রি প্রায় ৫০% কমেছে।’’ বেলঘরিয়ার ছোট ব্যবসায়ী সন্ধ্যা জুয়েলার্সের স্বপন মান্নাও হতাশ। বলছেন, “২২ বছরে এমন খারাপ পয়লা বৈশাখ কাটাইনি। গত বারও প্রায় ২০০ ক্রেতা এসেছিলেন। এ বার মাত্র ৩০ জন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)