সাহসিনী: অনুশীলনে পারমিতা। নিজস্ব চিত্র
বোলপুর হোক বা সাঁইথিয়া— উদাহরণ হয়তো হাতেগোনা। কিন্তু, ইভটিজিং বা উত্ত্যক্ত করলে আর পার পাওয়া যাবে না, দিতে হবে পাল্টা মার। বুধবার সকালের বোলপুরের ঘটনা দিন বদলের সেই ছবি আরও এক বার চাক্ষুস করাল।
চলতি বছরের মার্চে দিনের আলোয় সাঁইথিয়ার নির্জন রাস্তায় তিন তরুণ ঘিরে ধরে উচ্চমাধ্যমিক দিতে যাওয়া প্রিয়াঙ্কা সিংহ রায়কে কটূক্তি করে। প্রিয়াঙ্কা প্রতিবাদ করায় হাত ধরে বলে, ‘একটু পাশে চল’। ভড়কে না গিয়ে বোনকে সাইকেলটা দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল প্রিয়াঙ্কা। ছেলেগুলো জানত না, প্রিয়াঙ্কা তায়কোয়ন্দো-র ব্লু-বেল্ট। ছ’বছর ধরে সে এই মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মিনিট পাঁচ-ছ’য়েকের মধ্যেই তিন যুবককে কাহিল করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল ওই পরীক্ষার্থী।
বুধবার সকালের বোলপুরও সেই ছবির পুনরাবৃত্তি দেখল। সকাল আটটা নাগাদ মকরমপুরে টিউশন নিতে যাচ্ছিল বোলপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিল বান্ধবী সাথী ঘোষ। এক জনের বাড়ি গোয়ালপাড়া, অন্য জন থাকে প্রান্তিকে। প্রান্তিক রেলস্টেশন পেরিয়ে মূল রাস্তায় উঠে নবনির্মিত ব্রিজ পেরোতেই পিছু নেয় মোটরবাইক আরোহী এক যুবক। কুকথা বলতে থাকে। প্রিয়াঙ্কার মতো এ ক্ষেত্রেও ঘাবড়ে না গিয়ে তলপেটে মোক্ষম দু’টো ‘পাঞ্চ’ আর হাতে একটা ‘চপার’ মেরে রাস্তাতেই ধরাশায়ী করে বীরপুঙ্গবকে! যার প্রশংসা করেছেন জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালও। ঘটনায় খুশি ছাত্রীর ক্যারাটে প্রশিক্ষক কৌশভ সান্যাল। তাঁর কথায়, ‘‘১৫ বছর ধরে ক্যারাটে শেখাচ্ছি। মেয়েরা অনেকবারই বাস্তবে ক্যারাটের পাঞ্চ, কিক প্রয়োগ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: বিডিওর গাড়ি রুখে বোর্ডে বাধা, নালিশ
পারমিতা জানায়, এই যুবক বেশ কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন ভাবে তার বান্ধবী সাথীকে উত্ত্যক্ত করছিল। সাথীর কাছে এই কথা শুনে তারা একসঙ্গে টিউশন যেতে শুরু করে দিন কুড়ি আগে। বুধবার হঠাৎ আবার তার আবির্ভাব হয়। উত্ত্যক্ত করে পারমিতাকেও। গোটা বিষয়টি জানিয়ে পরিবার থেকে শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে অভিভাবকদের একটি অংশের মতে, এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মেয়েদের আত্মরক্ষার শিক্ষা থাকা কত জরুরি। জেলার নানা প্রান্তেও কখনও নাবালিকা ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, কখনও আবার কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর কাছ থেকে জিনিসপত্র ছিনতাই— বহু বার এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে জেলার মানুষ। প্রতিকার পেতে ক্যারাটের উপর জোর দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বীরভূম জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের উদ্যোগে শান্তিনিকেতন মেলার মাঠে গোরা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশিক্ষণে প্রায় ৫০ জন ছেলেমেয়ে বিনামূল্যে ক্যারাটে, আত্মরক্ষার নানা পদ্ধতি শেখে। যাদের অর্ধেক মেয়ে।
পারমিতা বলছে, ‘‘যদি ক্যারাটে না জানতাম তা হলে প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও জোটাতে পারতাম কিনা সন্দেহ। আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে ক্যারাটে।’’ বোলপুরের ঘটনা কানে গিয়েছে সাঁইথিয়ার প্রিয়াঙ্কা সিংহ রায়েরও। প্রিয়ঙ্কা এখন বোলপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। প্রিয়ঙ্কাও বলছেন, ‘‘সে দিনটা ছবির মতো মনে আছে। তিনটে ছেলে রাস্তার পাশে ডেকেছিল। ইঙ্গিত ভাল ছিল না। কিন্তু, ভয় পাইনি ।’’ আর সাথীর কথায়, ‘‘জানতাম ও ক্যারাটে শেখে। কিন্তু, কয়েক সেকেন্ডে ঘায়েল করে দেবে ভাবতেই পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy