Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
রাজা বললেন, ‘কিছু হয়নি’

ফর্ম তুলতে এসে জুটল লাঠি

তুমুল বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে কাটল বৃহস্পতিবারও জেলায় প্রাথমিকের টেটের ফর্ম বিলি। এ দিন জেলার তিন মহকুমাতেই ভোগান্তি চরম সীমায় পৌঁছয়। প্রার্থীদের দাবি, বুধবার রাত দুটো থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও বৃহস্পতিবার দুপুর একটাতেও ফর্ম পাননি অনেকে। ভিড়ের সামাল দিতে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। তাতে জখমও হয়েছেন অনেকে। রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জোবি থমাস কে অবশ্য বলেন, ‘‘লাঠি চার্জ হয়নি।’’

 সিউড়িতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা।

সিউড়িতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০১:৩৮
Share: Save:

তুমুল বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে কাটল বৃহস্পতিবারও জেলায় প্রাথমিকের টেটের ফর্ম বিলি। এ দিন জেলার তিন মহকুমাতেই ভোগান্তি চরম সীমায় পৌঁছয়। প্রার্থীদের দাবি, বুধবার রাত দুটো থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও বৃহস্পতিবার দুপুর একটাতেও ফর্ম পাননি অনেকে। ভিড়ের সামাল দিতে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। তাতে জখমও হয়েছেন অনেকে। রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জোবি থমাস কে অবশ্য বলেন, ‘‘লাঠি চার্জ হয়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশকে লাইন ঠিক করার জন্য যে টুকু করার সেই ডিউটি করতে হয়েছে।’’
রাজ্যজুড়েই গত দু’দিন ধরে টেটের ফর্ম তোলাকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা শিরোনামে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ তিন মহকুমায় ফর্ম দেওয়ার জন্য নতুন একটি করে কাউন্টার বাড়ালেও আবেদনকারীদের মধ্যে ফর্ম তোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অনেককেই ক্ষোভের সঙ্গে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ পরীক্ষার নামে প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।’’ ফর্ম তুলতে আসা অধিকাংশ আবেদনকারীদের বক্তব্য, কেন সরকার অনলাইন ফর্ম তোলা এবং জমার ব্যবস্থা করল না। ফর্ম তোলা এবং জমা দেওয়ার জন্য প্রায় প্রত্যেকের দাবি আরোও দিন বাড়ানো হোক।

এ দিন, দুপুরে রামপুরহাট-দুমকা রোডের উপর ইউবিআই ব্যাঙ্কের নিশ্চিন্তপুর শাখার সামনের চত্বরে বৃষ্টি পর গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিতে ভিজেও ব্যাঙ্কের সামনে দু’ধারে প্রায় সহস্রাধিক ছেলে মেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে। জানা গেল, বৃষ্টি আসার আগে সকাল দশটার সময় এখানেই পুলিশ লাইনে দাঁড়ানো ছেলেদের উপর লাঠি চার্জ করেছে। বৃষ্টি ভেজা জামা কাপড় পড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে মাড়গ্রাম থানার শাসপুর গ্রামের এক যুবক জানান, ‘‘খামোকা পুলিশ এমন ভাবে আমাকে পায়ে লাঠি দিয়ে মারল এখনও ব্যথা করছে।’’

নলহাটি যুবক মিজানুর রহমান, তারাপীঠ থেকে আসা বিশ্বনাথ লেটরা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘রাত দুটো থেকে তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ভোরের দিকে দুটো লাইন হয়। সকাল দশটা নাগাদ তিনটে লাইন হয়। শান্তিপূর্ণ ভাবেই তিনটে লাইনে সকলে দাঁড়িয়ে ছিল। দশটা নাগাদ পুলিশ এসে লাইন ঠিক করার নাম করে লাঠি চার্জ করতে শুরু করে। এতে তিনটে লাইনই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশের লাঠির আঘাতের ভয়ে অনেকে লাইন ছেড়ে ইতস্তত ভাবে পালিয়ে যায়। পুলিশের ভয়ে অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলেও কিছু পুলিশ কর্মীর নির্দেশে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রাত দুটো থেকে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল, তাঁদের অনেকেই পিছিয়েও পড়ে। অনেকে আবার লাইনে না থেকেও লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়ে পড়ে। কাযর্ত এসব থেকেই বৃশিঙ্খলা শুরু হয়।

লাইনে দাঁড়ানো নলহাটি থানার শীতল গ্রামের অর্পণা কোনাই বলেন, ‘‘কাল লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম পায়নি। সেই জন্য রাতে রামপুরহাটে এক আত্মীয়র বাড়িতে থেকে রাত তিনটে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন দুপুর একটা বাজছে, এখনও ফর্ম পেলাম না। রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত ফর্ম মিলল না।’’ রামপুরহাট পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দুই যুবতী জানায়, তাঁরাও সকাল ছ’টা থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। ফর্ম পাননি। তাঁদের দাবি, ‘‘লাইনে ইঁট, বোতল রেখে এক শ্রেণির দালাল ২০০ টাকা, ৩০০ টাকা চেয়ে লাইনে আগে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে যে।’’

এদিকে রামপুরহাট ইউবিআই ব্যাঙ্কের ফর্ম বিলি নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস কর্মীরা। কংগ্রেস কর্মী শাহাজাদা কিনু বলেন, ‘‘রাত থেকে ছেলেমেয়েরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ পুরসভা থেকে জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে আজ সকালে। সাংসদ শতাব্দী রায়ের দেওয়া মোবাইল টয়লেট ভ্যান পুরসভার মাঠে জলে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। পুরসভার উচিত ছিল ছেলে মেয়েদের ভোগান্তি দূর করার জন্য মোবাইল টয়লেট ভ্যান ইউবিআই ব্যাঙ্কের সামনে রাখা।’’

কংগ্রেস কর্মীরা এ দিন টেট পরীক্ষার ফর্ম বিলি নিয়ে অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে রামপুরহাট শহরে মিছিলও করে। প্রাইমারী টেট পরীক্ষার ফর্ম তোলা এবং ফর্ম জমা নেওয়ার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এসডিও-র কাছে স্মারকলিপি দেয়। অন্যদিকে এবিভিপি বীরভূম জেলা আহ্বায়ক নৃপেন্দ্রনাথ সো ফর্ম বিলি ও জমা দেওয়ার সময় সীমা বাড়ানোর জন্য দাবি করেন। ফর্ম বিলি নিয়ে চরম ভোগান্তির চিত্র সিউড়ি মহকুমাতেও। মহকুমার রাজনগর থানার ভবানীপুর থেকে ভোর চারটের সময় বাস ধরে সকাল আটটায় লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে বিএ প্রথম বর্ষের পরিক্ষাত্রী অরুনাদ্রি ঘোষকে। কাঁকরতলা থানার বড়রার যুবক ইকবাল আলম দু’দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম না পেয়ে ঘুরে গিয়েছেন। এ দিন তিনি ফের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

এ দিকে দিনভর ফর্ম বিলিতে ভোগান্তির জন্য নড়েচড়ে বসেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদ থেকে আজ সকালে রামপুরহাট ১ ব্লক অফিস সংলগ্ন রামপুরহাট পশ্চিমচক্র অফিস থেকে, সিউড়ি বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ইউবিআই ব্যাঙ্কেই আর একটি কাউন্টার বাড়ানো হয়েছে। বোলপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি হল থেকে ফর্ম তোলা এবং জমা নেওয়ার জন্য নতুন করে একটি কাউন্টার খোলা হয়েছে। নতুন ভাবে কাউন্টার বাড়ানো হলেও তিন জায়গাতেই রোদ ও বৃষ্টিতে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে প্রার্থীদের।

জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কোথাও কোনও গণ্ডগোল হয়নি। কিছু বিভ্রান্তির জন্য আজ থেকে তিন মহকুমার নতুন করে তিনটি কাউন্টার করা হয়েছে। সেখান থেকে সকলে ফর্ম পাবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy