এক বিজেপি কর্মীকে, তাঁর বাড়িতে ঢুকে লাঠি, রড, চেন দিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠল এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম বিজেপির ওই কর্মীকে সংকটজনক অবস্থায় প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ও পরে অবস্থা অবনতি হওয়ায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঘটনাটি বীরভূমের ইলামবাজার থানার রামনগর এলাকার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলামবাজার থানার রামনগরের বাসিন্দা বিজয় হাঁসদা শুক্রবার সকাল সাতটা নাগাদ নিজের বাড়িতেই ছিলেন। অভিযোগ, ওই সময়ে ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য পুস্পাদেবীর স্বামী সোম কিসকুর নেতৃত্বে সাত-আটজন তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাকে মারধর করে। এ দিন বিজয়বাবুর স্ত্রী মণি হাঁসদা বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালে স্বামী বাড়িতে ছিলেন। ওই সময়ে আচমকা সোম কিসকুর নেতৃত্বে তার সাত আট জন সঙ্গী বাড়িতে ঢুকে স্বামীকে মারধর করেছে। লাঠি, রড, চেন দিয়ে মেরেছে, এমনকী বাড়ি থেকে বাইরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে মাটিতে ফেলে মারধর করেছে। কি কারণ জানতে চাওয়ায়, ওরা কোনও কথা শোনেনি। গোটা পরিবারের সামনে সমানে তাকে মারধর করেছে। যাওয়ার সময়ে বলে গিয়েছে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে খুন করে দেবে।’’
মণি হাঁসদার দাবি, গুরুতর জখম অবস্থায় প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ও পরে অবস্থায় অবন্নতি হওয়ায় বর্ধমানে তাঁর স্বামীকে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় যেহেতু তাঁরা বিজেপি করছে, তাই ওই আক্রোশের কারণে তাঁর স্বামীকে মারধর করা হয়েছে। মাস ছয়েক আগেও, কোনও কারণ ছাড়াই আমরা বিজেপির মিটিং, মিছিলে যাওয়ায় প্রথমে শাসিয়ে গিয়েছিল ওরা। পরে মারধর করেছিল। তিনি বলেন, ‘‘সে দিনের কথা পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পরে লিখিতও দিয়েও কোনও কাজ হয়নি। ফের আমার স্বামীকে খুনের চেষ্টা করেছে তৃণমূলের লোকেরা। সেই কারণেই গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে, শুক্রবার ইলামবাজার থানায় সোম কিসকু ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে লিখিতও অভিযোগ জানিয়েছি।’’
জানা গিয়েছে, এলাকায় খেলাকে কেন্দ্র করে রামনগর লাগোয়া খয়েরবুনি এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে একটি অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠান দেখতে বিজয় হাঁসদা রাতে বেরিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে, এ দিন ভোরের দিকে বিজয় বাড়ি ফেরেন। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ, বাড়িতে ঢুকে সোম কিসকু ও তার সঙ্গীরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ। বিজেপির অন্যতম জেলা সম্পাদক তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহের অভিযোগ, ‘‘এলাকায় আদিবাসী সমাজ শাসক দল তৃণমূলের কাছে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
সামনের ৩ তারিখ ইলামবাজার ব্লকের মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণডিহি এলাকায় পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচন রয়েছে। ওই আসনে বিজেপি ৮০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পাবে জেনে, এলাকায় এলাকায় আদিবাসী সমাজে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর তারা আক্রমণ এবং সন্ত্রাস করছে। যাতে আশঙ্কিত এবং আতঙ্কিত হয়ে মানুষ ভোট না দিতে যান, তার জন্য এভাবে পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ করেছে তৃণমূল।’’
এই ঘটনায়, তিনি ইলামবাজার থানায় তৃণমূলের ৭ অভিযুক্তের নামে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত, কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকে, এলাকায় শাসক দলের অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেরিয়ে, খুনের হুমকি দিলেও পুলিশ তাদের না ধরায়, ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।
যদিও, তৃণমূল গোটা বিষয়টা সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি জানিয়েছে। জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম বলেন, “এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। গ্রাম্য বিবাদের জেরে মারপিটের একটি ঘটনা বলে শুনেছি। সবিস্তারে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy