Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
বিশ্বকর্মা পোর্টাল: নাম তুলেছেন ১৬,১৪৫ জন শ্রমিক 
Krishnagiri

ভিন্ রাজ্যের বাসে পরিযায়ী শ্রমিকেরা

বিশ্বকর্মা পোর্টাল: নাম তুলেছেন ১৬,১৪৫ জন শ্রমিক, কাজের সন্ধান মিলেছে ১,৫২৭টি।*

রওনা: পুরুলিয়ার কাশীপুর থেকে তামিলনাড়ুর কৃষ্ণাগিরির উদ্দেশে শ্রমিকেরা।— নিজস্ব চিত্র।

রওনা: পুরুলিয়ার কাশীপুর থেকে তামিলনাড়ুর কৃষ্ণাগিরির উদ্দেশে শ্রমিকেরা।— নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২০ ০১:০৮
Share: Save:

লকডাউন ঘোষণার পরে কেউ ফিরেছিলেন শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে। কেউ ভাড়া করা বাসে। পুরুলিয়ার কাশীপুর এবং হুড়া ব্লকের এমন ৩৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক বুধবার দুপুরে একটি বাসে চেপে রওনা হয়েছেন তামিলনাড়ুর কৃষ্ণাগিরির উদ্দেশে। তাঁদের মধ্যে কাশীপুরের দলালতা গ্রামের নির্মল গড়াই বলেন, ‘‘আমরা কৃষ্ণাগিরিতে গ্রানাইট পাথর বসাই। লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরেছিলাম। কিন্তু সংসার চালাতে কিছু তো করতে হবে।’’ ওই গ্রামেরই উত্তম মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে যাঁরা বাড়ি ফিরেছিলেন, অনেকেই কাজের যায়গায় ফিরতে শুরু করেছেন। ডাকও আসছিল। আমরাও যাচ্ছি।’’

লকডাউনে কাজ হারিয়ে প্রায় ৩৯ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক পুরুলিয়ায় ফিরেছিলেন। তাঁদের কাজের সন্ধান দিতে ‘বিশ্বকর্মা’ নামে একটি পোর্টাল তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ওই পোর্টালের মাধ্যমে অনেকে বিকল্প কাজের খোঁজ পেয়েছেন। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন ব্লকে দশ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই জেলায় থেকে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।’’

তবে তামিলনাড়ু রওনা হওয়া ওই শ্রমিকদের অধিকাংশই দাবি করেছেন, পোর্টালের কথা তাঁরা শুনেছেন। কিন্তু কোথায় গেলে নাম তোলা যাবে, তা জানেন না। কাশীপুরের ঢোলকাটা গ্রামের বরুণ কৈবর্ত্য এবং পাঁড়াশোল গ্রামের মেঘনাথ রায় ও বয়করা গ্রামের জয়দেব মাহাতো জানান, তামিলনাড়ুতে গ্রানাইটের কাজ করে মাসে প্রায় কুড়ি হাজার টাকা পান। তাঁরা বলেন, ‘‘এখানে ঠিক মতো কাজ মিলছিল না। পোর্টালের নাম কী ভাবে তুলতে হয়, সেটাই বুঝতে পারিনি।’’

সুজয়বাবু জানান, প্রতি ব্লকে চালু হয়েছে ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’। সেখানে গেলেই এই ব্যাপারে সহায়তা পাওয়া যাবে। ফেরার বাসে থাকা হুড়ার ডোলকাটা গ্রামের কৃষ্ণপদ কর্মকার আবার জানান, ব্লক অফিস থেকে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল। কোথায়, কী কাজ করতেন, সে সব জানতে চাওয়া হয়েছি। কিন্তু তার পরে কাজের সন্ধান কিছু মেলেনি। ওই শ্রমিকদের প্রায় সবাই জানিয়েছেন, লকডাউনে বাড়ি ফিরে রেশনের চাল পেয়েছেন। একশো দিনের কাজও মিলেছিল। কিন্তু মাটি কাটার অভ্যাস চলে যাওয়ায় করতে চাননি।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিক ও ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’গুলির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি প্রতিটি জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের রিপোর্ট তৈরি করে জমা করার নির্দেশ দেন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘গত ১৫ জুলাই থেকে বিভিন্ন ব্লকে বাংলা সহায়তা কেন্দ্রগুলি চালু রয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে একশো দিনের কাজে যুক্ত করা গিয়েছে। ‘বিশ্বকর্মা’ পোর্টালে নাম তুলেছেন মোট ১৬,১৪৫ জন শ্রমিক। কাজের সন্ধান মিলেছে ১,৫২৭টি। তবে কত জন কাজ পেয়েছেন, তা জানা যায়নি।

কাশীপুরের লিয়া গ্রামের সমীর রায় তামিলনাড়ুতে প্রায় বারো বছর গ্রানাইটের কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে কিছু দিন বাড়িতে থেকে যাই। লকডাউনে অনেকটা সে রকম হল।’’ বছর তিনেক আগে তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন কাশীপুরের পাঁড়াশোলের মেঘনাথ রায়। তিনি বলেন, ‘‘এখানে কাজ না পেয়েই প্রথমে ঘর ছেড়েছিলাম। আবার যাচ্ছি। কিছু তো একটা করতে হবে। ওখানে এখন আর সমস্যা নেই বলে জানতে পেরেছি।’’

(* তথ্যসূত্র: পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Labours Tamil Nadu Krishnagiri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy