বিজন নন্দীকে গ্রেফতারের দাবিতে মিছিল বামেদের। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
মামলা দায়েরের পরেও তৃণমূল নেতা জন নন্দীকে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশ গড়িমসি করছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। গত মঙ্গলবার পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে অফিসারকে মারধর করে দুই জনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তৃণমূল নেতা জন-সহ ছয়জনের নামে পুলিশ মামলা করেছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে বাসিন্দারা এর পরেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। পুলিশের উপর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিক বটেই নিচু তলার পুলিশ কর্মীদের মনোবল ঠিক রাখতে অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেছেন, ‘‘পুলিশকে শুধু মামলা করলেই হবে না। অভিযুক্ত বিজন নন্দীকে আগে গ্রেফতার করুক, তাহলে বুঝব পুলিশের সত্যিই কাজ করেছে।’’ জীবেশবাবুর অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় ঘটল। তার পরে পুলিশ মামলা করা নিয়ে গড়িমসি করছিল বলেও আমরা খবর পাই। শেষে, তা হয়েছে। আমরা এখন চাই জনকে গ্রেফতার করা হোক। না হলে আমরা আন্দোলনে নামব। একই দাবি তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক সুবীন ভৌমিকও। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ নিজেরাই আক্রান্ত হওয়ার পর এত লুকোছাপা করছিল কেন তাই বোঝা যাচ্ছিল না। এখন মামলা হয়েছে ঠিকই। তবে পুলিশের সঠিক সদিচ্ছা থাকলে ওকে গ্রেফতার করুক।’’
এনজেপি এলাকায় অনেক বাসিন্দাও চান, ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরা হোক। তাঁরা জানান, এনজেপিতে একাংশ দাদা’র দাদাগিরি কয়েক দশক ধরে চলছে। তেলের কারবার, তোলাবাজি, ঠিকাদারির লভ্যাংশ-সহ বিভিন্ন হুমকি এবং ভয় দেখানোর ঘটনা একাধিকবার সামনে এসেছে। অভিযুক্তরা সব সময় শাসক দলের আশ্রমে থাকায় ভক্তিনগর থানা এবং এনজেপি ফাঁড়িতে ‘উপর মহলে’র নির্দেশে কার্যত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। গত তিন বছরে অন্তত কয়েক দফায় ফাঁড়িতে গিয়ে হুমকি বা দাদাগিরি করার অভিযোগ সামনে এসেছে। সেক্ষেত্রে ওই দাদা’দের এই দফায় গ্রেফতার করা না হলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বাসিন্দাদের মনে প্রশ্ন থেকেই যাবে। বহু মানুষই এলাকায় নিরাপত্তা হীনতায় ভুগবেনই।
বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন বসু বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের নিরাপত্তা পুলিশ-প্রশাসন সুনিশ্চিত করতে হবে। এলাকার থানা, ফাঁড়িই যদি নিরাপদ না থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে!’’
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার গভীর রাতে পুলিশকে পিটিয়ে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটার পরদিন সকালেই অভিযোগ হয়েছিল। পুলিশ ১৬ সেপ্টেম্বরের তারিখে মামলা করলেও তা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তা সামনে আসে। বিভিন্ন দলের নেতাদের বক্তব্য, কেন থানায় ঢুকে তাণ্ডব ভাঙচুর, পুলিশকর্মীকে মারধরের ঘটনা ঘটার পরে দু’দিন সময় লেগে গেল এটাও দে্খা দরকার। এক্ষেত্রে একাংশ পুলিশ অফিসারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়।
প্রায় দেড়দিন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকার পর এদিন রাত থেকে পুলিশ অফিসারেরা মুখ খোলা শুরু করেছেন। ভক্তিনগর থানার কয়েকজন অফিসার রাতে জানান, উপর মহলের নির্দেশ রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে। তাঁরা তল্লাশি শুরুর কথা জানিয়েছেন। তবে এলাকার আইন শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখেই ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হচ্ছে। পুলিশ গ্রেফতারির প্রস্তুতির কথা স্বীকার করলেও দলের জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদকের নামে মামলা হয়েছে বলে জানেন না বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি কিছু জানি না।’’ একই দাবি করেছেন অভিযুক্ত নেতা বিজন নন্দীও।
গত মঙ্গলবার রাতে মদ্যপ অবস্থায় বিজনবাবু-সহ অনুগামীরা এনজেপি ফাঁড়িতে হামলা চালান বলে অভিযোগ। সেই সময় অন্য একটি মামলায় স্বপন পাল নামের এক সিপিএম সমর্থককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। অভিযুক্তরা স্বপন পাল সহ উপস্থিত সিপিএমের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাপস চট্টোপাধ্যায়, শম্ভু দে সহ আরও কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মারধর করে বলে অভিযোগ। একজনকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ফাঁড়ি লাগোয়া মাঠে ফেলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। থানায় ভাঙচুর করে ডিউটি অফিসারকেও মারধর করা হয়। পরে তৃণমূলের দুই কর্মীকে অভিযুক্ত ফাঁড়ি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy