প্রতীকী ছবি।
শুধু ১৪ এবং ১৫ অগস্ট—দু’দিনে পাঁচ নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল ডায়মন্ড হারবারে। প্রশাসন কোনও মতে আটকায়। হুগলির আরামবাগে লকডাউন চলাকালীন চার নাবালিকার বিয়ে আটকাতে পারে প্রশাসন। কিন্তু আরও চার জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাদের উদ্ধার করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে আলাদা থাকার মুচলেকা নেওয়া হয়।
গত মার্চে লকডাউনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কলকাতা লাগোয়া চার জেলায় যে কত নাবালিকার বিয়ে হয়েছে, তা অজানা প্রশাসনের ও এ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলির। তবে, সেই প্রবণতা যে বেড়েছে, তা সকলেই স্বীকার করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এই পর্বে চার জেলায় অন্তত ১৭৪টি নাবালিকা বিয়ে আটকানো গিয়েছে।
কেন বাড়ছে নাবালিকা বিয়ের চেষ্টা? কারণ, স্কুল বন্ধ। ফলে, ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’ও বন্ধ। নাবালিকার বিয়ের খবর তার সহপাঠীরা সে ভাবে পাচ্ছে না। তাই প্রশাসনের কাছেও খবর সহজে পৌঁছচ্ছে না। বাড়িতে লোকজনের আসা-যাওয়া কমেছে। বেশি নিমন্ত্রণ করতে হচ্ছে না। ফলে, বিয়ের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কমেছে। গরিব পরিবারের অনেক বাবা-মায়েরা এই সুযোগে নাবালিকা মেয়ের জন্য ‘ভাল পাত্র’ তাই হাতছাড়া করতে চাইছেন না। এমনটাই মনে করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ক’মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭৮টি নাবালিকার বিয়ে বন্ধ হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় ৫৯টি। হাওড়ায় বন্ধ হয়েছে ৭টি বিয়ে। হুগলিতে সংখ্যাটা ত্রিশের বেশি।
কিন্তু এই পরিসংখ্যানে কেউই বিশেষ ভরসা করছেন না। হাওড়া জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মতে, স্বাভাবিক অবস্থাতেই যেখানে যত নাবালিকা বিয়ে হয়, তার অনেক কম খবর আসে। সেগুলি আটকানো হয়। তার উপরে ভিত্তি করে কিন্তু নাবালিকা বিয়ের প্রকৃত সংখ্যা বোঝা সম্ভব নয়। করোনা আবহে খবর আসার সংখ্যা কমেছে। এ থেকে পরিষ্কার, সব খবর না-আসায় প্রশাসনের অগোচরে নাবালিকা বিয়ে হয়ে চলেছে।
স্কুল বন্ধ থাকাকে নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। স্কুলে স্কুলে গড়ে ওঠা ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর সদস্য-ছাত্রীরা এর আগে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সহপাঠীর বিয়ের চেষ্টার কথা জানতে পেরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে। তার জেরে ওই বিয়ে রোখা গিয়েছে, এমন বিস্তর নজির রয়েছে।
আমপান-ধস্ত উত্তর ওই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সমস্যাটা আরও গভীর। গ্রামাঞ্চলের বহু গরিব পরিবারের মাথায় এখনও পাকাপোক্ত ছাদ নেই। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি মনে করছে, এই অবস্থায় অনেকেই নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে বিয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। অর্থসঙ্কটও এই প্রবণতা বৃদ্ধির একটা বড় কারণ।
হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে কাজ করা চাইল্ড লাইনের কর্মী আবদুল্লা গাজি বলেন, ‘‘করোনা আবহে কয়েক গুণ বেশি নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে। মেয়ের পিছনে খরচ না করে ‘ভাল পাত্র’ পেলেই বিয়ে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অনেক গরিব পরিবার।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে অহরহ নারী পাচারের ঘটনা ঘটে। এখানে নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা যথেষ্ট। অনেক ক্ষেত্রে দু’টি ঘটনার মধ্যে যোগ থাকার নজির পেয়েছেন প্রশাসনের লোকেরা। ডায়মন্ড হারবার চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দেবারতি সরকারও মানছেন, লকডাউনে নাবালিকা বিয়ে বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘‘১৪ এবং ১৫ অগস্ট—দু’দিনে আমার যে পাঁচ নাবালিকার বিয়ে আটকাই, তাদের পরিবারের লোকজন ধরে নিয়েছিলেন, পুলিশ প্রশাসন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবে। কেউ খবর পাবে না।’’
হাওড়ার বাউড়িয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার রহিমা খাতুন বলেন, ‘‘করোনা আবহে দু’টি নাবালিকা বিয়ে আমরা রুখে দিয়েছি। তাদের অভিভাবকেরা জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় তাঁদের মনে হয়েছিল মেয়েদের আর সেখানে না পাঠিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়াই মঙ্গল। আমাদের অগোচরে নিশ্চয় এই রকম আরও অভিভাবক নাবালিকাদের বিয়ে দিচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy