পশ্চিমবঙ্গ চা উন্নয়ন পর্ষদের আওতাধীন বাগানগুলিতে বোনাস নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা গিয়েছে। আজ, মঙ্গলবার দেবীপক্ষের সূচনা। এখনও নিগমের পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে থাকা ৫টি বাগানের শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়নি। উল্টে, উত্তরবঙ্গের বাগানগুলিতে ২০ শতাংশ হারে বোনাসের চুক্তি হলেও পাহাড়ের বাগানগুলিতে নিগমের তরফে পাহাড়ে ১০ শতাংশ বোনাস দেওয়ার কথা বলায় শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সোমবার মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনের তরফে ২০ শতাংশ হারে বোনাস না দেওয়া হলে অনশন করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, পাহাড়ের জন্য বরাবরই আলাদা বোনাস এবং মজুরি চুক্তি হয়।
পাশাপাশি, ডুয়ার্সে দ্রুত ২০ শতাংশ হারে বোনাসের দাবিতে নিগমের একটি বাগানের সামনে গেট মিটিং করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাতে উল্লেখযোগ্য তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনও অংশ নেয়। পাহাড়ে পান্ডাম, রংগারুং, রংমুক সেডার এবং ডুয়ার্সে হিলা ছাড়াও জঁয়গা এলাকায় নিগমের মহুয়া চা বাগান রয়েছে।
মোর্চার শ্রমিক সংগঠন দার্জিলিং তরাই ডুয়ার্স প্লান্টেশন লেবার ইউনিয়নের তরফে জানানো হয়েছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০ শতাংশ হারে বোনাস চুক্তি ঠিক হয়েছে। প্রতিবারই পাহাড়ের এই চুক্তি অনুসারেই নিগমের আওতায় থাকা ৩টি বাগানে বোনাস দেওয়া হয়।
সংগঠনের মুখপাত্র মিলন প্রধান জানান, ২০০৮ সালে নিগমের বাগানগুলির বোনাসের বিষয় নিয়ে আমরা আমরণ অনশন আন্দোলন শুরু করেছিলাম। সেই সময় রাজ্য সরকারের শ্রম দফতর থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল, দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তিতে অন্য বাগানে যে হারে বোনাস দেওয়া হবে, সেটাই একই হার কার্যকারী হবে নিগমের বাগানগুলিতেও। এ বছরও সেভাবেই বোনাস নিয়ে প্রথম থেকেই আলোচনা হয়। মিলন প্রধান বলেন, “গত ১৭ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে নিগমের তরফে জানানো হয়েছে, এবছর ১০ শতাংশের বেশি বোনাস এখন দেওয়া সম্ভব হবে না। তাও সরকারি অনুমোদনের পর তা সম্ভব হবে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুরজ সুব্বা জানান, পাহাড় সমতল মিলিয়ে নিগমের পাঁচটি বাগান রয়েছে। প্রতিটি বাগানেই আমরা ২০ শতাংশ হারে বোনাস চেয়েছি। পাহাড়ের আলাদা হবে না। সব জিটিএ কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। আমরা শনিবার অবধি দেখব, নইলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু হবে। এই প্রসঙ্গে জিটিএ-র ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ রমেশ আলে বলেন, “এদিনই আমরা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে সমস্ত কিছু জানিয়ে একটি ফ্যাক্স পাঠিয়েছি। পরিস্থিতির উপর লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।”
আর দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ওই তিনটি বাগানে জন্যও আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি নিগমের তরফে আমাদের জানানো হয়েছে, ওই বাগানগুলিতে ১০ শতাংশের বেশি বোনাস দেওয়া হবে। এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না।”
অন্যদিকে, দ্রুত বোনাসের দাবিতে গেট মিটিং করল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। এদিনে সকালে ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের হিলা চা বাগানে কাজে যোগ দেওয়ার আগে একঘন্টা গেট মিটিং হয়। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কংগ্রেস, আদিবাসী বিকাশ পরিষদের শ্রমিক সংগঠনও অংশ নেয়। বেশিরভাগ বাগানে গত শনিবারের মধ্যেই পুজোর বোনাস মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে রাজ্য সরকারের চা উন্নয়ন নিগম পরিচালিত হিলা চা বাগানে এখনও বোনাস হয়নি। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের বাগানের ইউনিট সম্পাদক দুর্গা মাহালি বলেন, “বোনাস দেরিতে মিললে শ্রমিকরা পুজোর বাজার করার সময় পাবে না।” ওই বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরে বোনাস মেটানো হবে। তবে শ্রমিকেরা তা আগে চেয়েই আন্দোলনে নেমেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy