ফুটপাথ এমনই। তাই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার উপর দিয়েই চলতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
পথ নিরাপদ হবে কী ভাবে, তারই পথ খুঁজছে শহর।
বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করলে স্কুল-কলেজ, কর্মস্থলে যাওয়ার দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েইছে। তবে কী ভাবে যান নিয়ন্ত্রণ হতে পারে, তার কোনও যথাযথ পরিকল্পনা হয়নি এখনও। তাই দাবি উঠছে খোলামেলা কনভেনশন করার।
শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করলে যে কোনদিন বড় মাপের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন মালদহের নাগরিকেরা। স্কুল শিক্ষক থেকে গৌড় বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, প্রশাসনের অফিসার কিংবা নাট্যকর্মী, সকলেই বিষয়টি নিয়ে একমত। তাই নাগরিকদের সমস্যাটা ঠিক কোথায়, কী ভাবে সমাধান হতে পারে, শহরের বিশিষ্ট জনেরা কী ভাবছেন তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার দাবি উঠেছে শহরে। নাগরিক সমাজের তরফে দ্রুত শহরে ফুটপাত সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে ‘কনভেনশন’-এর দাবি তোলা হয়েছে। পুরসভার তরফে কেন নাগরিক কনভেনশনের আয়োজন করা হবে না সেই প্রশ্নও উঠেছে।
ইংরেজবাজার পুরসভার তরফে অবশ্য আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তাঁরা আলোচনা করেই পদক্ষেপ করে থাকেন। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার বলেন, “আমরা ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ, বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসব। সকলের মতামত নিয়েই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা হবে।”
কিন্তু, কবে নাগরিক কনভেনশন হতে পারে সেই ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট রূপরেখা মেলেনি। তাই উদ্বিগ্ন শহরবাসীর একটা বড় অংশ। যেমন বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার মতে, “স্কুলের শুরু ও ছুটির সময়ে সামনের রাস্তায় ডিভাইডার দেওয়া ভীষণ জরুরি। শুরু ও ছুটির সময়ে অন্তত এক ঘন্টা ওই রাস্তায় ছোট গাড়ি চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা দরকার।”
টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্ববিকাশ দত্ত আবার মনে করেন, রাস্তা-ফুটপাত জবরদখল করে ব্যবসা অথবা বেআইনি পার্কিং রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তিনি জানান, শহরের কোন রাস্তা একমুখী হবে আর কোন রাস্তা দ্বিমুখী হবে তা নিয়ে নতুন করে পুরসভা-প্রশাসনকে চিন্তাভাবনা করতে হবে। জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কমল বসাক বাসস্ট্যান্ডের সামনে দিয়ে যাতায়াতের সমস্যার সমাধান দ্রুত করার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বাসস্ট্যান্ডের ঢোকার রাস্তাটি বিশেষ চওড়া নয়। তাই দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে সকলেই। দুর্ঘটনাও ঘটে। বাস বার হওয়ার রাস্তাটিও ছোট। রাস্তা চওড়া না হলে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”
মালদহ স্টেশনের সামনেও নিত্যযাত্রীদের চলাফেরার রাস্তা মসৃণ নয়। পুরসভা-প্রশাসনও তা জানে। বহুবার আর্জি জানানো সত্ত্বেও কেন স্টেশনের সামনে যানজট রুখতে পুলিশ-পুরসভা উদ্যোগী হচ্ছে না কেন সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন অনেকে। যেমন, জেলার নাট্যকর্মী অচিন্ত্য সেনগুপ্ত বলেন, “স্টেশনের কাছে অবৈধ রিকশা ঢোকা আটকাতে ব্যর্থ প্রশাসন। যথেচ্ছ পার্কিংও রোখা যাচ্ছে না। পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের দিয়ে সেখানে নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার।” উপরন্তু, তিনি মনে করেন, স্টেশনের কাছে আজহারউদ্দিন মার্কেটের বেসমেন্টে একটি পার্কিং জোন করলে সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।
শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি নার্সিংহোমের কাছে ফুটপাত না থাকায় রোজই যানজটে থমকে যেতে হয় পথচারীদেরও। ওই নার্সিংহোমের কয়েকজন কর্মী জানালেন, কিছু দিন আগে মাসখানেকের জন্য সিভিক ভলান্টিয়াররা নার্সিংহোমের সামনের পার্কিং জোনটির দায়িত্ব সামলান। আচমকা তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে কিছুটা দূরে বার্লো স্কুলের সামনে গাড়ি রাখা হয়। এতে নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। নার্সিংহোমের সামনে যথেচ্ছ পার্কিং হওয়ায় রোজই যানজট হচ্ছে সেখানে। ওই এলাকায় শহরের দু-দুটো বড় স্কুল রয়েছে। বার্লো এবং বিবেকানন্দ স্কুল। ফলে, পড়ুয়াদের দুর্ভোগ চলছেই।
এমন ক্ষোভ-হতাশার ছবি শহরের প্রায় প্রতি এলাকাতেই। শিক্ষক বিপ্লব রায় বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের মাঝেমধ্যেই মোটরবাইকের ধাক্কায় জখম হওয়ার ঘটনা ঘটে।” মকদমপুরের বাসিন্দা তথা আইনজীবী অমিতাভ রায়, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পল্লবী সরকার ও কেয়া মণ্ডল, সকলেই জানান, উদ্বেগ মাথায় নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। পল্লবী বলেন, “আমাদেরকে বাস ধরার জন্য দৈনিক অতুল মার্কেটে আসতে হয়। ওই জায়গায় হাঁটার কোনও জায়গাই নেই। গাড়ি চাপা পড়ার আশঙ্কা প্রতি পদে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান দরকার।” ইংরেজবাজারের ঘোড়াপিরের বাসিন্দা বধূ সুতপা ঘোষ তো শঙ্কিত। তিনি বলেন, “আমাকে বাজার করার জন্য প্রতিদিন রথবাড়ি যাতায়াত করতে হয়। তবে রাস্তা যে ভাবে দখল হয়ে থাকছে তাতে বাজারে আসতে ভয় হচ্ছে। কারণ, সম্প্রতি পা হড়কে পথ দুর্ঘটনায় এক শিক্ষিকার মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।”
মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “বেআইনি পার্কিং রুখতে নিয়মিত অভিযান চলে। তা আরও বাড়ানো হবে। ফুটপাতের সমস্যা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।”
(শেষ)
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’। অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড, শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১। প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/anandabazar.abp।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy