একই দিনে তিনটি থানার ওসিকে পুলিশ লাইনে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল। বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে কালচিনি, জয়গাঁ থানা এবং হাসিমারা ফাঁড়ির দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ওসিকে পুলিশ লাইনে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তিন অফিসারকে কোনও নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। পুলিশের অন্দরে ওই নির্দেশকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা বলা হয়। সাধারণত, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। যদিও আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের তরফে ওই তিন অফিসারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না, বলতে চাওয়া হয়নি। জেলা পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, তিন অফিসারের মধ্যে দু’জনের চলতি মাসেই ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি হবে, অন্য অফিসারের একই থানায় ওসি পদে তিন বছরের বেশি সময় হয়ে গিয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের জেরে জয়গাঁ থানার ওসি-কে ‘ক্লোজ’ করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জয়গাঁ থানার ওসি রিংচেন লামা ভুটিয়া, হাসিমারা ফাঁড়ির ওসি বিভূতিভূষণ বর্মন ও কালচিনি থানার ওসি আশিস থাপাকে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করার নির্দেশ জারি হয়েছে। জেল পুলিশের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অনুপবাবু যখন আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন সে সময়ে ওই তিন অফিসার তাঁর বিরাগভাজন হন। আলিপুরদুয়ার নতুন জেলা হওয়ার পরে, পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পান অনুপবাবুই। মাসখানেকের মধ্যেই তিন অফিসারকে একসঙ্গে ‘ক্লোজ’ করার ঘটনা ঘটল।
যদিও জেলা পুলিশ সুপার অনুপবাবু অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “জয়গাঁ থানা ও কালচিনি থানার ওসি কিছুদিনের মধ্যেই সাব ইন্সপক্টর থেকে ইন্সপেক্টর হয়ে যাবেন। তাঁদের প্রশিক্ষণও হয়েছে। সে জন্য আগে থেকে তাঁদের পুলিশ লাইনে নিয়ে এসে অন্য অফিসারদের ওই থানাগুলিতে পাঠানো হয়েছে। হাসিমারার ফাঁড়ির ওসি ৩ বছর ধরে এক জায়গায় থাকায় তাঁকেও সরানো হয়েছে।”
ওসি-র বদলির নির্দেশ শুনে এ দিন সকাল থেকে জয়গাঁয় বিক্ষোভ শুরু হয়। বাসিন্দাদের দাবি, ওসিকে বদলি করা যাবে না। বিক্ষোভের জেরে অবশ্য জয়গাঁ থানার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। এ দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা ধরে দোকান বাজার বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ দেখান। জয়গাঁর নেতাজি রোড এলাকায় অবরোধও করেন বাসিন্দারা। আন্দোলনকারীদের তরফে অজয় জায়সবাল জানান, “সাধারণ বাসিন্দারা নিজেরাই আন্দোলন শুরু করেন। পুলিশ কর্তারা বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।” জয়গাঁ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রামাশঙ্কর গুপ্ত বলেন, “ওসি রিংচেননলামা ভুটিয়া বছর খানেক আগে এখানে এসেছেন। তার পর থেকেই এলাকায় চুরি ছিনতাই সহ অপরাধমূলক ঘটনা কমেছে।”
গত ৬ জুলাই জয়গাঁর বৌবাজার এলাকায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের সময় পুলিশ লাঠি চালায়। লাঠির ঘায়ে আহত এক ব্যবসায়ী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়েছিল। পর দিন জেলা পুলিশ সুপারকে বিনা কারণে লাঠি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগও জানায় জয়গাঁ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ সুপার তদন্তও করেন। ওসি রিনচেনবাবু অবশ্য লাঠি চালানোর কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে এ দিন দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy