লাইন দিয়ে ভোট। প্রহরায় নিরাপত্তাকর্মীরা। শিলিগুড়ি লাগোয়া গুলমা চা বাগান এলাকায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
প্রথম পর্বে উত্তরবঙ্গের চার আসনেই ভোট পড়ল ৮০ শতাংশের বেশি। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার এই চারটি আসনের মধ্যে কোচবিহার ছাড়া অন্য তিন আসনে ভোটদানের হার গত বারের থেকে বাড়তে চলেছে। ২০০৯ সালে চারটি কেন্দ্রের মধ্যে কোচবিহারে ভোটদানের হার বেশি ছিল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত লোকসভা ভোটে কোচবিহারে ভোট পড়েছিল ৮৪.৩৫ শতাংশ। এ দিন রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, ভোটদানের হার ৮৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, দার্জিলিঙে গতবার ভোট পড়েছিল ৭৯ শতাংশের কিছু বেশি, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ বার ভোটদানের পরিমাণ ৮২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। জলপাইগুড়িতে গত বার ৮২ শতাংশ এবং আলিপুরদুয়ারে ৭৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়ে। এবারে জলপাইগুড়িতে ৮২ শতাংশ এবং আলিপুরদুয়ারে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ভোটগ্রহণ ঘিরে শাসক-বিরোধী সব দলেরই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ থাকলেও, উত্তরবঙ্গের কোথাও বড় মাপের কোনও সংঘর্ষের খবর আসেনি। তবে কয়েকজন ভোটকর্মী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের ৪ ভোটকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের সকলকেই জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অসুস্থ ভোটকর্মীদের নাম মহম্মদ শাহজাহান আলম, অচিন্ত্য দাস, দীপককুমার শর্মা এবং কমল শাহ। মহম্মদ শাহজাহান আলম রাজগঞ্জের বুথের প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন। অচিন্ত্যবাবু রিজার্ভ ভোটকর্মীদের মধ্যে ছিলেন। দীপকবাবু মালবাজারের এবং কমলবাবু বেরুবাড়ির বুথে ভোটকর্মীর দায়িত্বে ছিলেন। তবে কর্মীদের অসুস্থতার কারণে কোথাও ভোটগ্রহণ অবশ্য বিঘ্নিত হয়নি।
দোমোহনি এলাকার একটি বুথে ভোটের লাইন। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।
যদিও, ভোটযন্ত্র বিকলের কারণেও এ দিন বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বিপর্যস্ত হয়েছে। আলিপুরদুয়ারে অন্তত ৫টি বুথে ভোটযন্ত্রের ত্রুটির কারণে ভোটগ্রহণ শুরুর সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়, একটি বুথে যন্ত্র-বিভ্রাটের কারণে ভোট গ্রহণ মাঝপথে থমকেও যায়। ধূপগুড়ি শহরের একটি বুথে আবার ভোটগ্রহণ শেষে ভোটযন্ত্রে বিভ্রাট ধরা পড়েছে। শহরের ১৫/১১৯ নম্বর বুথে ভোট গ্রহণের শেষে কত ভোট পড়ল তার বোতাম চাপ দিলে, দেখা যায় যন্ত্রে কোনও ভোটই নথিভুক্ত হয়নি। প্রশাসনের থেকে বিষয়টি কমিশনকে জানানো হয়েছে। ওই বুথে ফের ভোটগ্রহণ হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। উত্তর দিনাজুপুরের চোপড়ার সুজালির একটি বুথেও সময়মতো ভোটযন্ত্র চালু না হওয়ায় ভোট গ্রহণ ১ ঘণ্টা পিছিয়ে যায়। চাদরাগছ বুথ এবং বধুগছ বুথে ভোট শুরু হওয়ার পর ইভিএম যন্ত্র বিকল হয়ে যায়।
এ দিন, ভোট নিয়ে উৎসাহ দেখা গিয়েছে চা বাগান এবং সীমান্ত এলাকাতেও। জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বন্ধ রায়পুর চা বাগানে ভোট গ্রহণ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ দেখা গিয়েছে বলে ভোটকর্মীরা দাবি করেছেন। এ দিন ভোট দিয়ে বুথের বাইরে পা রাখতে রামসিংহ মুণ্ডা, মিনতি এক্কার মতো শ্রমিকরা সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। ভোট দেওয়া নিয়ে তাঁদের কোনও চাপের মুখে পড়তে হয়নি বলেও শ্রমিকরা জানিয়েছেন। বাগানে স্থায়ী শ্রমিক সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি। জনসংখ্যা ২ হাজারের বেশি। ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে বাগানটি বন্ধ রয়েছে। একই রকম উৎসাহ দেখা গিয়েছে সীমান্ত এলাকাতেও। হলদিবাড়ির ব্লক নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকার বুথগুলিতে নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে।
শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাসের আশিঘরের কাছে একটি বুথে এক তৃণমূলকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সিপিএম সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আহত তৃণমূলকর্মীর নাম তাপস শীল। তাঁর বাবা বিশ্বনাথবাবু থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। যদিও প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। চোপড়ায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। কয়েকটি বুথে দলের এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নকল এপিক কার্ড নিয়ে ভোট দিতে যাওয়ার অভিযোগে চোপড়ার সুজালি এলাকাতে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
লোকসভার সঙ্গেই এ দিন কুমারগ্রাম এবং ময়নাগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচন হয়েছে। গত বিধানসভা থেকে কুমারগ্রামে এ বারের উপ নির্বাচনে কম ভোট পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বার কুমারগ্রামে উপ নির্বাচনে ৮১ শতাংশ ভোট পড়েছে, দু’হাজার এগারোর বিধানসভা নির্বাচনের থেকে ৪ শতাংশ কম। নির্বিঘ্নে ভোট হয়েছে বলে সব দলের প্রার্থীরাই দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy