দ্বন্দ্ব চিত্র ১: সরকারি সভায় প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়েছিলেন সাবিত্রী-কৃষ্ণেন্দু।
আগের বারের লেটার মার্কস। এ বারে টেনেটুনে পাশ।
২০১১ সালে দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৫টিই পেয়েছিল তৃণমূল। এ বার ৬টিতে দু’টি।
মালদহের মতো এই জেলাতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দাঁত ফুটিয়ে এমন অবস্থা করবে, তা আঁচ করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ডিসেম্বর থেকেই জনসভা থেকে জেলা স্তরের নেতাদের সতর্ক করতে শুরু করেছিলেন। ভোটের মুখেও জনসভা করতে এসে মঞ্চে নেতাদের উপস্থিতি থেকেই দ্বন্দ্ব কতয়া গভীরে ছড়িয়েছে তা বুঝতে পেরে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মঞ্চেই আঙুল তুলে সতর্ক করেছিলেন কয়েকজন নেতাকে। কিন্তু সেখানেও মালদহের ছায়া পড়েছে এই জেলায়। লোকসভা ভোটের সময় মালদহে প্রচার সেরে হেলিকপ্টারে ওঠার আগে মমতা সাবিত্রী মিত্র, দুলাল সরকার ও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে গোলমাল না করে এক সঙ্গে কাজ করতে বলেন। তারপরে তিনি মালদহের মাটি ছাড়তেই ফের শুরু হয়ে যায় কোন্দল। দক্ষিণ দিনাজপুরেও বিধানসভা ভোটের প্রচার সেরে মমতা হেলিকপ্টারে ওঠার পর থেকেই ফের শুরু হয়ে যায় গোষ্ঠীবিবাদ।
এখন প্রশ্ন, জেলার হাল ধরবেন কে? প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র এবং বর্তমান জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী পরস্পরের দ্বন্দ্বে দুজনেই নিজের নিজের কেন্দ্র হরিরামপুর এবং বালুরঘাটে হেরে গিয়েছেন। জেলার আর এক অভিজ্ঞ তৃণমূল নেতা সত্যেন রায়ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গঙ্গারামপুরে করুণ ভাবে পরাজিত হয়ে সন্ন্যাস নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন।
বিপ্লববাবুর সঙ্গে দলের একাধিক বিধায়কের বিবাদের জেরেই তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে শঙ্করবাবুকে ওই পদে বসিয়ে রাজ্য নেতৃত্ব দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ পুরো ফেল করে গিয়েছে। ভোটের মুখে নানা ঘটনায় তা প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল। হরিরামপুরে সোনা পাল যেমন তাঁর ‘কাকু’ বিপ্লব মিত্রকে হারাতে প্রকাশ্যে জেহাদ ঘোষণা করে কাজে নেমে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ। বালুরঘাটে শঙ্করবাবু এবং তাঁর অনুগামী গঙ্গারামপুরের প্রার্থী সত্যেন রায়কে হারাতে বিপ্লববাবু তাঁর অনুগামী কর্মীদের আদা-জল খেয়ে ময়দানে নামতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে পাল্টা অভিযোগও দলের মধ্যে উঠেছে।
যে কারণে, ভোটের ফল বেরোনোর পরে তৃণমূল সূত্রই জানাচ্ছে, বিপ্লব অনুগামীরা খুশি। তাঁরা দলের অন্দরে দাবি করছেন, বিপ্লববাবুকে সরিয়ে শঙ্করবাবুকে জেলা সভাপতি করার পরে কোনও লাভ হল না। বিপ্লববাবু সরাসরি বলেন, ‘‘গোষ্ঠীকোন্দল ছিল। আমি যাতে জিততে না পারি, তার চেষ্টা করা হয়েছে।’’ শঙ্করবাবুর অবশ্য সতর্ক মত, ‘‘পর্যালোচনা না করে কিছু বলবো না।’’
তৃণমূলের অন্দরের খবর, এই জেলায় দলের সাংগঠনিক ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে।
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, শঙ্করবাবু এবং বিপ্লববাবুদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সুযোগ আর দলনেত্রী দেবেন না। বরং সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে সামনে রেখে জেলায় নতুন করে দলের সংগঠনকে সাজিয়ে তুলতে রাজ্য নেতৃত্ব চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে বলে খবর।
অথচ এ জেলায় গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে পরপর পঞ্চায়েত, পুরসভা, লোকসভা ভোটে ধারাবাহিক ভাবে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। তাই এ বারে বিধানসভা ভোটে ছয়ে-ছয় আসন জেতার পরিস্থিতি তৈরি ছিল। বাদ সাধে দলের চরম গোষ্ঠীকোন্দল। বর্তমানে তপন কেন্দ্রে বাচ্চু হাঁসদা এবং কুমারগঞ্জ কেন্দ্রে তোরাফ হোসেন মণ্ডল পুনরায় জয়ী হলেও নেতৃত্বে আসার মতো যোগ্যতা এখনও ওই দুজনের তৈরি হয়নি বলে দলের একাংশ মনে করেন। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর অনুগামী কুমারগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী তোরাফ হোসেন মন্ডল এ বারই প্রথম ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। বাম শিক্ষক সংগঠন ছেড়ে পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক বাচ্চুবাবু পাঁচ বছর আগে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে তপন থেকে জেতেন। মন্ত্রীগোষ্ঠীর অনুগামী হলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঝাপটা এবারে বাচ্চুবাবুকে ততটা বেগ দেয়নি, যতটা খোদ শঙ্করবাবু এবং সত্যেনবাবুদের ক্ষেত্রে হয়েছে।
বালুরঘাটের এক তৃণমূল কর্মীর সরস মন্তব্য, নাটকের শহর বালুরঘাটে এ বার “নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ” নামে তৃণমূলের একটি পালা মঞ্চস্থ হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
—ফাইল চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy