বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এমন ছবির দেখা মিলল দিনভর। — অমিত মোহান্ত
নিষেধই সার। তাকে আক্ষরিক অর্থেই ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে চলল অবাধে ধূমপান। প্রকাশ্যেই।
বুধবার এই ছবিই দেখা গেল বালুরঘাট-সহ দক্ষিণ দিনাজপুরের একাধিক জায়গায়। যা দেখে বোঝার উপায় নেই একদিন আগেই প্রশাসন প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে এই জেলায়। তবে এ জন্য নিষেধের বার্তা জেলার ব্যাপক অংশের মানুষের কাছে না পৌঁছনোই কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ধূমপান-মুক্ত এলাকা হিসাবে রাজ্যের মধ্যে প্রথম এই জেলাকে তুলে ধরার কথা প্রচারে ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন সরকারি কর্তারাই। ওই কর্মসূচির নোডাল অফিসার তথা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, ‘‘জেলার ৮টি ব্লক ও শহর এলাকায় এনজিওদের দায়িত্ব ভাগ করে সচেতনতার প্রচার চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমেও প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে নজরদারি ও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’
ধূমপান-মুক্ত এলাকা গড়ার প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে এ দিন সকালে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে একটি ধূমপান রোধে কাউন্সেলিং-কেন্দ্র চালু হয়। সেটির উদ্বোধন করে জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শুক্রবার দুদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত ওই কেন্দ্র খোলা থাকবে। কেউ ধূমপান ছাড়তে চাইলে ওই কেন্দ্রে চিকিৎসকের মাধ্যমে ধূমপানে আসক্তদের পর্যায়ক্রমে কাউন্সেলিং করা হবে। ১৮ বছরের নীচে বয়সীদের ধূমপানের কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তা ছাড়তে উৎসাহ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে প্রকল্পে কাজ হলেও বাস্তবের বদল হয়নি। এ দিন বালুরঘাটের বাসস্ট্যান্ড থেকে অফিস চত্বর এলাকায় অনেককে প্রকাশ্যে বিড়ি ও সিগারেট টেনে ধূমপানের ‘মৌতাত’ নিতে দেখা যায়। দুপুর দুটোর পর টিফিনের সময় জেলাশাসকের কালেক্টরেট ভবন চত্বরে একাংশ সরকারী কর্মীকে চায়ের সঙ্গে সিগারেট-বিড়ি টানতে দেখা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি দেখেই হাতের সিগারেট কেউ কেউ আড়াল করেছেন। আবার শহরের প্রধান তহবাজার এলাকায় প্রকাশ্যে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অনেকে তা কেয়ার না করে দেদার বিড়ি সিগারেট টেনেছেন। বাজারের এক পান সিগারেট বিক্রেতার কথায়, সিগারেট যেখানে তৈরি হয়। সেখানেই অভিযান চালিয়ে সরবরাহ বন্ধ করা হোক। তবে ধূমপান বন্ধ হবে। তবে সাবধানতা অবলম্বন করে অনেকে বাজারের বাথরুমের পাশে গলিতে গিয়ে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিয়েছেন।
শুধু সিগারেটেই নিস্তার নেই। এ দিন সব্জি ও মাছ বাজারের মাঝখানের জায়গা থেকে ভরদুপুরে গাঁজার গন্ধও মিলেছে। সিগারেট ও বিড়ির মশলা ফেলে তারমধ্যে গাঁজা ভরে লুকিয়ে টানতে সমস্যা নেই বলে অনেকে জানিয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘নজরদারির জন্য বিশেষ এনফোর্সমেন্ট স্কোয়াড তৈরির কাজ চলছে।’’ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে বলে তিনি দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে বালুরঘাটে প্রকাশ্যে ধূমপানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সচেতনতা পদযাত্রা করা হয়েছিল। এ দিন থেকে তা কার্যকরের জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে মঙ্গলবার দিনভর শহরে মাইকে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সরকারি বা বেসরকারি কোনও স্তরেই ওই বিষয়ে প্রচার চালাতে দেখা যায়নি। খবরের কাগজ পড়ে শহরের বাসিন্দারা প্রকাশ্যে ধূমপানে নিষেধের বিষয়টি জেনেছেন। তবে প্রশাসনকে নজরদারি ও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। তাই এ দিন অফিস চত্বর থেকে বাসস্ট্যান্ডের মতো জনবহুল এলাকায় অনেকেই সিগারেট টেনে দিব্যি আড্ডা জমিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy