এক আবাসিককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত নেশামুক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্ণধারের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বীরনগর এলাকায়। এ দিন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক তথা কেন্দ্রের কর্ণধার বিজিত দাস ওই আবাসিককে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পরে হাসপাতালে দেহ ফেলে স্থানীয় কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিজিতবাবু উধাও হয়ে যান বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ওই আবাসিকের নাম মানস শিকদার (৪৩)। তাঁর বাড়ি মালদহ জেলার নালাগোলা এলাকায়। মানসবাবু নেশাসক্ত হয়ে পড়ায় গত ২৫ মার্চ তাঁকে বীরনগর এলাকার ওই কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। শনিবার রায়গঞ্জের ডিএসপি (সদর) শুভেন্দু মণ্ডল ও রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে ভিডিও রেকর্ডিং করে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে দেহটি ময়নাতদন্ত করায় পুলিশ। মৃতের দুই পা, হাঁটু, চোখ, বুক, পিঠ-সহ সারা শরীরে একাধিক আঘাত ও কালশিটে দাগের চিহ্ন মিলেছে।
এ দিন বিকেলে মৃতের মাসতুতো দাদা সুশান্তকুমার সরকার বিজিতবাবুর বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর পরেই জিজ্ঞসাবাদের জন্য বিজিতবাবুর বাবা তথা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি বিদ্যুৎবিহারী দাসকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মানসবাবুর দেহ দেখেন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান তথা রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর পবিত্র চন্দ। মোহিতবাবুর অভিযোগ, পুরসভার অনুমতি ছাড়াই বেআইনি ভাবে কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছিল। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, বিজিতবাবুর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে কেন্দ্রটিকে সিল করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে রক্তমাখা একটি প্লাস্টিকের রড উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত বিজিতবাবুও প্রায় তিন বছর আগে নেশাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। পরিবারের তরফে সেই সময় তাকে কলকাতার একটি নেশা মুক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে আসার পরে বছর খানেক আগে বীরনগর এলাকায় মাসিক ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে নেশামুক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি চালু করেন। সেখানে বিজিতবাবু একাই কাউন্সেলিং ও বাইরের থেকে ফার্মাসিস্ট নিয়ে গিয়ে নেশাসক্ত আবাসিকদের সুস্থ করার চেষ্টা করতেন। অনেক সময়ে আবাসিকদের রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসাও করাতেন তিনি। বর্তমানে ওই কেন্দ্রে ৯ জন আবাসিক থাকলেও এ দিন ঘটনার কথা জানাজানি হতেই পরিবারের লোকজন তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।
বাড়ির মালিক দেবাশিস বিশ্বাসকে এ দিন বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর ছেলে দিবাকরবাবু বলেন, ‘‘আমরা টাকার বিনিময়ে বিজিতবাবুকে বাড়ি ভাড়া দিয়েছি। সেখানে কি ধরনের কাজকর্ম হতো তা আমাদের জানা নেই।’’ দু’জন আবাসিক অভিযোগ করেন, শনিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রের একটি ঘরে মলত্যাগ করলে মানসবাবুকে বেধড়ক মারধর করা হয়। কে মারধর করেছে তা ওই আবাসিকরা দেখেননি বলে দাবি করেন।
মৃতের দাদা সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘ভাই নেশাসক্ত হয়ে পড়ায় এক আত্মীয়ের পরামর্শে ১০ হাজার টাকা ডোনেশন দিয়ে গত ২৫ মার্চ তাঁকে ওই কেন্দ্রে ভর্তি করি। ভাই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিজিতবাবুকে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে দেওয়ার শর্ত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বিজিতবাবু কেনও ভাইকে পিটিয়ে খুন করলেন, তা বুঝতে পারছি না। পুলিশের কাছে কঠোর শাস্তি দাবি করেছি।’’
এ দিন বিজিতবাবুকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত হেমতাবাদের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বিদ্যুতবিহারীবাবুর দাবি, শুরুতে তাঁর ছেলে ছাড়াও বেতনভুক্ত কলকাতার দুই যুবক ওই কেন্দ্রে নেশাসক্তদের কাউন্সেলিংয়ের কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে ওই দুই যুবক কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে তাঁর ছেলের উপর চাপ বাড়ে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে কাউকে পিটিয়ে খুন করবে, তা বিশ্বাস হচ্ছে না। ছেলে এখন কোথায় তাও আমি জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy