Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

খালের জলে দিনভর পড়ে মর্টার শেল, এল কোথা থেকে?

 অনুসন্ধান: এগুলো কাদের, মর্টার শেলগুলি দেখে বোঝার চেষ্টা করছেন বিএসএফ আধিকারিকরা। নিজস্ব চিত্র

অনুসন্ধান: এগুলো কাদের, মর্টার শেলগুলি দেখে বোঝার চেষ্টা করছেন বিএসএফ আধিকারিকরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চটহাট (ফাঁসিদেওয়া) শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১২
Share: Save:

কলকাতাগামী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে ফাঁসিদেওয়ার গোয়ালটুলি মোড় হয়ে মেরেকেটে দশ কিলোমিটার। আবার মহানন্দা খাল ধরে ফাঁসিদেওয়ার সদরের দিক থেকে এগিয়ে গেলে কিলোমিটার চারেক। দু’পাশে ধূ ধূ মাঠ আর মহানন্দার খাল, যার পোশাকি নাম মহানন্দা ক্যানেল। বিক্ষিপ্তভাবে ধান ও আনজের খেত। বহু দূরে ছটিয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রাম। আবার গ্রামের ভিতরের ফাঁসিদেওয়া-চটহাটের নিজবাজার এলাকার মূল রাস্তা ধরে সোজা গেলেই জাতীয় সড়ক হয়ে ইসলামপুর। সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত। যে এলাকার এমনই ভৌগোলিক অবস্থান, সেখান থেকে অত্যাধুনিক চারটি মর্টার উদ্ধারকে ঘিরে ফাঁসিদেওয়া ব্লক জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

ফাঁসিদেওয়ায় কোনও সেনা ছাউনি নেই। নেই কোনও ফায়ারিং রেঞ্জ। শুধুমাত্র সীমান্ত ধরে বিএসএফের টহলদারিও চলে। তার মধ্যে সীমান্তের পাশে সেতুর নীচে এমন মর্টার রাখার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও চক্র রয়েছে, সন্দেহ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাংশের। তাদের ধারণা, সম্ভবত কোনও এলাকা থেকে চুরি করে মর্টারগুলি পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। সীমান্তের এপার-ওপার করার চেষ্টা হচ্ছিল কি না তা-ও দেখা উচিত। ওই অফিসারেরা জানাচ্ছেন, বছর পাঁচেক আগেও নিজবাড়ির খাল লাগোয়া একটি আনাজের খেত থেকে চারটি বোমা উদ্ধার হয়। মোড়ানো কাগজ, ছাপ দেখে তা বাংলাদেশের দিক থেকে আনা হয়েছিল পরিষ্কার হয়। তখন থেকেই বোঝা গিয়েছিল, এই সীমান্তে দুষ্কৃতীরা সক্রিয়।

বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি আজমল সিংহ কাথাট বলেন, ‘‘মর্টারগুলি বাইরে থেকে আনা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। উদ্ধার করা মর্টারগুলি একটিও আমাদের নয়। কারা, কী উদ্দেশ্যে তা খালের সেতুর নীচে জড়ো করেছিল, তা দেখা হচ্ছে।’’

ফাঁসিদেওয়া ব্লকের লালদাসজোত থেকে মুড়িখাওয়া এলাকা অবধি প্রায় ২২ কিলোমিটার বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। যা চটহাট, ফাঁসিদেওয়া এবং জালাস নিজামতারা গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় রয়েছে। এর মধ্যে বিএসএফের লালদাস, বাণেশ্বর, ফাঁসিদেওয়া, কালামগছ এবং মুড়িখাওয়াতে সীমান্ত চৌকি রয়েছে। তবে সীমান্তের লালদাস থেকে ধনিয়ামোড় অবধি কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। পরবর্তী বন্দরগছর অবধি প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার কোনও বেড়া নেই। মহানন্দা নদীর জন্য বরাদ্দ হলেও এখনও নদীর এ পাশে কাঁটাতার বসেনি। সেই সুযোগেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা বরবারই সেখান দিয়ে সীমান্তে সক্রিয় বলে সন্দেহ। ঘটনাস্থল থেকে তা প্রায় ১০ কিলোমিটার। গবাদি পশু, নদীর পাথর থেকে সাইকেল, মোটরবাইক নিয়মিত পারাপার হয় বলে অভিযোগ।

এমনকি, গত তিন বছর আগে সীমান্ত দিয়ে এপারে এসে বিএসএফের ম্যানপ্যাক চুরির মতো ঘটনাও সামনে এসেছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা চাষবাস করেন। কয়েক জন আবার মৎসজীবী।

এই এলাকায় মর্টার কেন এবং কোথা থেকে এসেছে, তা ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের। চটহাট অঞ্চলের তৃণমূলের যুব সভাপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন, মহম্মদ ইলিয়াস বা মহম্মদ মুর্শিদ আলমদের কথায়, ‘‘আতঙ্কে তো রাতে ঘুম হবে না! যদি বোমাগুলি ফেটে যেত! তা হলে তো এই খাল, গ্রাম, সেতু কিছুই থাকত না। বুধবার এলাকায় মিছিল হয়েছিল। কিন্তু বহিরাগত কাউকে দেখা যায়নি। আমরা বিএসএফকে আরও নজরদারি বাড়াতে বলব।’’

পুলিশের অনুমান, এ দেশের হলে তা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টারির তৈরি। কিন্তু ক্যারিয়ারে নথি না মেলায়, তা কোথাকার বোঝা যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Mortar Shell BSF Canal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE