—প্রতীকী চিত্র।
‘ঠিয়া পার্টি’-কে তোলা দিতে হবে বিঘে প্রতি দু’হাজার টাকা। তবেই গঙ্গা নদীবক্ষে গজিয়ে ওঠা চরে মিলবে ধান বা কলাই ডাল চাষের অনুমতি। অন্যথা হলে, হয় ফসল পাকার পরে তা লুট করা হবে অথবা মাড়িয়ে বা পুড়িয়ে নষ্ট করে দেওয়া হবে। সঙ্গে মারধর তো রয়েছেই। এমনটাই অভিযোগ। ঠিয়া পার্টির এমন জুলুমবাজিতে রীতিমতো ত্রস্ত চার দিকে গঙ্গা নদীতে ঘেরা মানিকচক ব্লকের নারায়ণপুর চরের কয়েকশো কৃষক।
এ দিকে ঠিয়া পার্টির দৌরাত্ম্য কমাতে মালদহ জেলা পুলিশের তরফে গঙ্গা নদীবক্ষে একটি টহলদারি লঞ্চ চালু করা হলেও চরের কৃষকদের হানাদারি থেকে নিস্তার মিলছে না বলেই দাবি। রবিবার সরকারি নানা পরিষেবা দিতে জেলা ও ব্লক প্রশাসনের একঝাঁক কর্তা নারায়পুর চরে গেলে তাঁদের কাছে সেই দুর্দশার কথা তুলেও ধরেন কৃষকেরা। কর্তারা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন।
কারা এই ঠিয়া পার্টি? ঝাড়খণ্ডের জলদস্যুরাই এ নামে মালদহে পরিচিত। যন্ত্রচালিত নৌকো ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নদীবক্ষে লুটপাট চালানোই তাদের মূল কারবার। যে গাছের গুঁড়ির উপরে রেখে মাংস কাটা হয়, আঞ্চলিক ভাষায় তাকেই ‘ঠিয়া’ বলা হয়। চরে কান পাতলে এখনও শোনা যায়, সত্তর-আশির দশক থেকে এই দস্যুরা মানিকচক ব্লকের গদাই চর, ভুতনির চরের বাসিন্দাদের ত্রাসে পরিণত হয়। তৎকালীন বিহার থেকে নৌকোয় গঙ্গা পেরিয়ে যখন-তখন গ্রামে ঢুকে গুলি-বোমা ছুড়ে লুটপাট করে তারা ফিরে যেত। লুটপাটে বাধা দিলে ঠিয়ার উপরে রেখে মাংস কাটার কায়দায় বাসিন্দাদেরও টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হতো, যাতে দেহ চিনতে পারা না যায়। সেই থেকেই ওই দস্যুদলকে চরে ‘ঠিয়া পার্টি’ বলে ডাকা হতে থাকে।
ভুতনির মায়েরা এক সময় ঠিয়া পার্টির হানার কথা বলেই সন্তানদের ঘুম পাড়াতেন। তবে, ২০১৬ সালে ভুতনিতে পূর্ণাঙ্গ থানা চালু হওয়ার পরে সেই হানাদারি প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু ভুতনিতে না গেলেও ঠিয়া পার্টি গঙ্গাবক্ষে এখনও আগের মতোই সক্রিয় বলে অভিযোগ। এখন গঙ্গাবক্ষে গজিয়ে ওঠা চরে চাষ করতে গেলে বা ঝাড়খণ্ড থেকে নৌকোয় করে স্টোনচিপস বা বোল্ডার আনতে গেলে ঠিয়া পার্টিকে তোলা না দিলে রক্ষা নেই।
মানিকচক ঘাট থেকে রাজমহলের দিকে যন্ত্রচালিত নৌকোয় গঙ্গাবক্ষে প্রায় ৪৫ মিনিট গেলে মিলবে নারায়ণপুর চরের দেখা। দিনে তিন বার করে একটি নৌকোই সেখানে যাতায়াত করে। ভাড়া জনপ্রতি দশ টাকা। চরে অন্তত দু’হাজার মানুষের বাস। সেই জমি ও পাশের পশ্চিম নারায়পুর চরে কৃষিকাজই মূল জীবীকা। উৎপাদিত ফসল মানিকচকের মথুরাপুর বা রাজমহল হাটে বিক্রি করেই চলে সংসার। এখন আমন ধান বোনা চলছে চরে। কৃষক সুখ চৌধুরী (নাম পরিবর্তিত) বললেন, “তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। দিন দশেক আগে ঠিয়া পার্টি ২৫-৩০ জন এসে নিদান দিয়েছে ৬ হাজার টাকা রাখতে। জমিতে যখনই যাচ্ছি সঙ্গে টাকা রাখছি।’’ দস্যুরা কখন আসবে তা ওরাই জানে। ফলে পুলিশ টহল দিলেও কৃষকদের তোলা দিতেই হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অশোককুমার মোদক বলেন, “পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগ হলে পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy