হাতে-হাতে: তৈরি হচ্ছে রাখি।
কারও শুধু মনে পড়ে একটা ভাই ছিল। আবার কারও স্পষ্ট মনে রয়েছে পিঠোপিঠি এক দাদার কথা। কিন্তু হাত বাড়িয়ে সেই দাদা বা ভাইয়ের হাতে রাখি পরানোর কোনও উপায় নেই ওদের। তাই যেদিন শুনলো রাখি পূর্ণিমায় ওদের ‘বাড়ি’তে অনেক দাদা-ভাইরা আসবে, খুশি ছলকে পড়েছিল জলপাইগুড়ির অনুভব হোমের আবাসিকদের চোখে-মুখে। সঙ্গে সঙ্গে আবদার হয়েছিল সে দিন লুচি-পায়েস খাওয়ার। সে আবদারও মেনেছে হোম কর্তৃপক্ষ।
হোমের আবাসিকরা নিজেরাই রাখি তৈরি করেছে। কাপড়ের ব্যাগ কেটে পুঁতি সেলাই করে তৈরি হয়েছে নীল-সাদা রঙের রাখি। হোম সূত্রের খবর, আজ শনিবার প্রশাসনের আধিকারিকদের রাখি পরাতে যাবে হোমের কচিকাঁচারা। পরদিন রবিবার হোমে রাখিবন্ধন উৎসব হবে। নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা আসবেন। শহরের অন্য হোমেও নিয়ে যাওয়া হবে অনুভবের মেয়েদের। দোকান থেকে না কিনে আবাসিকদের দিয়ে রাখি তৈরি করানোর কারণ ব্যাখ্যা করলেন হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায়। তাঁর কথায়, “মেয়েরা সকলেই পরিবারবিচ্ছিন্না। বিভিন্ন সামাজিক উৎসবে বাড়ির কথা ওদের বারবার মনে পড়ে। হোমে উৎসবের আয়োজন হলেও হয়ত বাড়ির জন্য মন খারাপ হয় ওদের। তাতে আয়োজনের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না।’’ তাঁর মতে হোমের মেয়েদের উৎসব আয়োজনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হলে ওরা অনেক হাসিখুশি থাকতে পারে।
গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে রাখি তৈরির কাজ। হোমের উঠোনে টেবিল পেতে বড় দিদিরা কাপড় কাটছে। ছোটদের হাতে সুচ-সুতো না দেওয়া হলেও ভিড় করছে সকলেই। রাখি তৈরি করাই যেন উৎসবের চেহারা নিয়েছে। কেউ তৈরি হওয়া রাখি হাতে নিয়ে খেলছে, কেউ বা খেলার ছলে অন্যকে পরাচ্ছে। হোমের তরফে জানা গেল আগামী রবিবার রাখি উতসবের দিন লুচি পায়েসের সঙ্গে মাংস ভাতও থাকছে ভোজের মেনুতে।
এ দিন রাখিতে পুঁতি জুড়তে জুড়তে হঠাতই আনমনা হয়ে পড়ল পম্পা (নাম পরিবর্তিত)। একটি স্টেশন থেকে তাকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনি সে। নিজের হাতে সদ্য তৈরি করা একটি রাখি দেখিয়ে বলে, “এই রাখিটা নিজের কাছে রেখে দেব। দাদার মুখটা আমার এখনও মনে পড়ে। দাদার জন্য রেখে দেব। যদি আবার কোনওদিন পরানোর সুযোগ পাই।” উঠোনে পড়ে আসা আলতো রোদে তখন পম্পার চোখ চিকচিক করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy