Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ই-লেনদেনে হাতের ইশারাই ভরসা ওঁদের

হাত দু’টোকে সম্বল করে ধূপকাঠি তৈরি শিখেই ওঁরা জীবনধারণের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন। কিন্তু শুধু ওতেই আর দিন গুজরান হচ্ছে না। এ বার নিজের রোজগার হাতে পেতে সেই হাত-চোখের ইশারাতেই শিখতে হচ্ছে এটিএম-এর ব্যবহার বা ই-লেনদেন।

মূক ও বধির স্বপ্নতোরণের সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলছে। ছবি: সন্দীপ পাল

মূক ও বধির স্বপ্নতোরণের সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলছে। ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৪
Share: Save:

হাত দু’টোকে সম্বল করে ধূপকাঠি তৈরি শিখেই ওঁরা জীবনধারণের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন। কিন্তু শুধু ওতেই আর দিন গুজরান হচ্ছে না। এ বার নিজের রোজগার হাতে পেতে সেই হাত-চোখের ইশারাতেই শিখতে হচ্ছে এটিএম-এর ব্যবহার বা ই-লেনদেন।

মূক ও বধির প্রতিবন্ধীদের হাতের কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করার প্রশিক্ষণ দেয় জলপাইগুড়ির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নতোরণ। ব্যাঙ্কে তাঁদের কারও অ্যাকাউন্ট আছে, কারও নেই। সংগঠনের নামেই কর্ণধার দেবাশিস চক্রবর্তী সব টাকাটা তুলে মাস গেলে তাঁদের মজুরি দিতেন। কিন্তু বাধ সাধল নোট সমস্যা। ব্যবসায়িক সংস্থা না হওয়ায় মাসে নগদ ৫০ হাজার টাকাও তুলতে পারছেন দেবাশিসবাবু। ফলে গত মাসে মজুরি দিতে পারেননি কাউকে।

এ বার তাই তিনি স্থির করেন অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে রংমালা, অসীমদের ই-লেনদেনে দরো করবেন। অবশেষে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এই ব্যাঙ্ক লেনদেনের প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধীদের অভ্যস্ত করাতে এখন প্রশিক্ষণ চলছে রায়কত পাড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অফিসে। হাতের ইশারায় বাবলাকে শেখানো হচ্ছে ওটিপি-র মানে। ছবি দেখে লক্ষ্মীকে বুঝতে হচ্ছে ডেবিট কার্ডের ব্যবহার। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘সকলে সাদা-কালো টাকার তরজা নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিবন্ধী মানুষরা কী ভাবে ডিজিটাল লেনদেন করবে তা নিয়ে কেউ তো কিছু বলছেন না।’’

এক কেজি ধূপকাঠি তৈরি করে আয় হয় পনেরো টাকা। খুব পরিশ্রম করেও মাসে ২০০ কিলো বেশি ধূপকাঠি তৈরি সম্ভব হয় না। তাতে বড়জোড় ৩ হাজার টাকা মেলে। ওই সামান্য মজুরির পথও যদি তাঁদের বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে তাঁদের একটা দিন কাটানোও দুষ্কর হয়ে ওঠে। দেবাশিসবাবু জানান, ওই সামান্য টাকায় হয়তো কারও সংসার চলে না। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের হাতে তা তুলে দিয়ে সম্মান অর্জন করা যায়। হঠাৎ করে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ঠেলায় গত মাসে ওদের সে সম্মানটুকুও দিতে পারা যায়নি।

মজুরি না পেয়ে মূক ও বধির যুবক-যুবতীরা কোথাও কোনও বিক্ষোভ দেখাননি। কিন্তু মুখে ফুটে কিছু বলতে না পারলেও ইশারায় এ ক’দিন সে কথাই আলোচনা করছিলেন লক্ষ্মীরা নিজেরাও। প্রতিবন্ধীদের এই সমস্যার কথা ব্যাঙ্ক কর্তারাও বুঝতে চায়নি বলে আক্ষেপ সংগঠনের কর্মীদের।

স্বপ্নতোরণে এখন গড়ে ১৫ জন জন নিয়মিত কাজ করেন। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া দোমহনির বাসিন্দা আটত্রিশ বছরের বাবলা পাসোয়ান মাধ্যমিক পাশ। মূক ও বধির ওই যুবককে সংগঠনের অফিসেই থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন দেবাশিসবাবু। মজুরি বাবদ পাওয়া তিন হাজার টাকা দিয়েই খাওয়ার খরচ জোগাড় হয়। গত মাসে টাকা না পেয়ে দু’বেলা ডাল-ভাতই খেতে হয়েছে। মাছ-মাংস সাধ্যে কুলোয়নি। কাদোবাড়ি এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী রায় ধূপকাঠির সঙ্গে ল্যামিনেশনও তৈরি করেন। মাসে আড়াই হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। তাও গত মাসে জোটেনি।

গত সপ্তাহেই কয়েক জনকে অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছে স্বপ্নতোরণ। আগামী মাসের প্রথম দিন সকলকে অ্যাকাউন্টেই মজুরি দেওয়া হবে। তবে ওঁদের প্রতিবন্ধকতার সুযোগ নিয়ে টাকা তোলা বা জমা দেওয়ায় কেউ প্রতারণা করবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কায় দেবাশিসবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

digital transaction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE