আমবাড়ি-গজলডোবা যাওয়ার রাস্তায় চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ সাধারণ পথচারীরা। এমনকী দিনে-দুপুরে ওই রাস্তায় ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করেই আমবাড়ির কাছে ভোটপাড়া এলাকায় পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়।
চাঁদা তুলতে বাধা দেওয়ায় ও জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করায় পাল্টা পুলিশের উপরে চড়াও হয় এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তাদের ঘেরাওয়ের মুখে আটকে পড়েন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা, এডিসি ভোলানাথ পাণ্ডে, এসিপি পিনাকী মজুমদার সহ আমবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির অফিসাররা। দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন পুলিশ কমিশনার থেকে আমবাড়ি ফাঁড়ির ওসি নবেন্দু সরকার ও কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার।
এই ঘটনার পর এলাকায় পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, ‘‘এলাকায় নজরদারি শুরু হয়েছে। চাঁদার জুলুম কমাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আরও কিছু লোকের নাম পাওয়া গিয়েছে। আমরা তাঁদের খোঁজ চালাচ্ছি।’’ তবে পুলিশ কমিশনারের তেমন আঘাত লাগেনি বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থল থেকে মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এদিন তাদের জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পেশ করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে, জোর করে চাঁদা তোলা, সরকারি কাজে বাধা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশকে মারধরের অভিযোগে মোট ১১ টি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার কয়েকটি জামিন অযোগ্য। এই ঘটনায় দুটি আলাদা মামলা করেছে ভক্তিনগর থানার পুলিশ।
শিলিগুড়ি লাগোয়া ভক্তিনগর থানা এলাকার আমবাড়ি থেকে তিস্তা-মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানেলের ধার দিয়ে গজলডোবা পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা দিনে দুপুরেও নির্জন থাকে। তবে ডুয়ার্সে যাওয়ার বিকল্প পথ হওয়ায় দিনের বেলায় প্রচুর দূর পাল্লার গাড়ি চলে। রাজ্য সরকারের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ও পর্যটন দফতরের যৌথ উদ্যোগে গজলডোবায় তৈরি হচ্ছে পর্যটন হাব। তা সত্ত্বেও এই এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়েনি।
গোটা রাস্তায় আলোও নেই। সেই সুযোগে সারা বছরই বারো মাসে তেরো পার্বণ উপলক্ষে চাঁদা তোলার হিড়িক লেগে থাকে বলে এলাকাবাসীদের একাংশের অভিযোগ। তা দিতে অস্বীকার করলে প্রথমে হুমকি, এরপরে ঘড়ি, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এর জেরে বহু গাড়ি চালক তাঁদের গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা চাউর হয়ে যাওয়াতে এদিন গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে এক গাড়িচালক স্বীকার করেন, তাঁদের প্রতি সপ্তাহেই কোনও না কোনও চাঁদা আদায়কারীর পাল্লায় পড়তে হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘কখনও কীর্তন, কখনও কোনও না কোনও পুজো কখনও উৎসব। বিভিন্ন অছিলায় চাঁদা তোলা হয়।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দা মনোহর দাস বলে, ‘‘গাড়ি হলে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। তবে মোটর সাইকেলের আরোহীর কাছ থেকে ১০ টাকার বেশি আমরা নিই না।’’
কিন্তু এটা তো বেআইনি! যদিও তা মানতে নারাজ তাঁরা। তাঁদের একজনের দাবি, ‘‘চাঁদা চাইলে কেউ দেয় কেউ দেয় না। জোর করা হয় না।’’ ছিনতাইয়ের অভিযোগও মানতে চাননি তাঁরা। তবে চাঁদা চেয়ে জুলুম করা হচ্ছে বলে এক চালক আমবাড়ি ফাঁড়িতে সেদিন অভিযোগ জানালেন কেন প্রশ্নে উপেন রায়ের দাবি, ‘‘মিথ্যা কথা বলেছেন ওই অভিযোগকারী।’’ তবে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ থাকলেও তা সম্বন্ধে বৃহস্পতিবারের আগে পর্যন্ত কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেন এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের খগেশ্বর রায়। তিনি বলে, ‘‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। শনিবার এলাকায় যাব। তার পরেই কী হয়েছে তা জানার চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy