Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ভোটে অন্তর্ঘাতে অভিযুক্ত বিপ্লব

দক্ষিণ দিনাজপুরে দলের বিপর্যয়ে তৃণমূলের কিছু নেতার অন্তর্ঘাতই দায়ী বলে অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তির সরাসরিই জেলার প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের দিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০২:৩১
Share: Save:

দক্ষিণ দিনাজপুরে দলের বিপর্যয়ে তৃণমূলের কিছু নেতার অন্তর্ঘাতই দায়ী বলে অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তির সরাসরিই জেলার প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের দিকে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী এবং প্রভাবশালী নেতা সত্যেন রায় সহ গত বারের একাধিক বিধায়ক এ বার হেরে গিয়েছেন। বিপ্লববাবুর ঘনিষ্ঠ দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাপরিষদের সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতি, ডিপিএসসির চেয়ারম্যানদের প্রকাশ্যে অন্তর্ঘাতকেই তার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। দলীয় সূত্রের খবর, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা, সহকারী সভাধিপতি কালীপদ সরকার এবং ডিপিএসসির চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডুকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রকাশ্যে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছে বিপ্লববাবুর ভাই তথা গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্রের বিরুদ্ধেও। বালুরঘাট পুরসভার দলের কয়েকজন কাউন্সিলারের বিরুদ্ধেও অন্তর্ঘাত করে শঙ্করবাবুকে হারানোর অভিযোগ সামনে আসায় তৃণমূল পরিচালিত দুই পুরসভাতেও নেতৃত্বের রদবদলের সম্ভাবনা দলের অন্দরে জোরালো হচ্ছে।

রবিবার জেলার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক তথা বালুরঘাটের সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ এবং ডিপিএসসি-র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে দল বিরোধিতায় নেমে ভোটে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ পেয়েছি।’’ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোটের পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই দিয়েছিলেন বলে সাংসদ জানিয়েছেন।

ভোটের আগে দক্ষিণ দিনাজপুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানতে রাজ্য নেতৃত্ব জেলা সভাপতি পদ থেকে বিপ্লববাবুকে সরিয়ে দেন। সেই জায়গায় শঙ্করবাবুকে জেলা সভাপতি করা হয়। দলীয় সূত্রের খবর, সে সময় একই অভিযোগে বিপ্লবগোষ্ঠীর নেতা তথা ডিপিএসসির চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডু, সভাধিপতি ললিতা টিগ্গাদেরও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু দলের মহাসচিব পার্থবাবু ভোটের মুখে শুধু বিপ্লবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দেলার অন্য নেতাদের বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে ভোটের পরে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে পার্থবাবু সাংসদ অর্পিতাকে জানিয়েছিলেন।

কিন্তু এতে যে কোনও ফল হয়নি, তা ভোটের আগে ও পরে গঙ্গারামপুরের তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন রায়ের নির্বাচনী এজেন্ট তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু সরকারের অভিযোগ থেকে স্পষ্ট হয়েছে। অমলেন্দুবাবু সরাসরি জেলাশাসককে চিঠি লিখে বিপ্লববাবুদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ করেছিলেন। অমলেন্দুবাবু অভিযোগ করেন, সত্যেনবাবুকে হারাতে ভোটের দিন গঙ্গারামপুরে সরাসরি বিরোধী জোটের কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে জেলাপরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা, সহকারী সভাধিপতি কালীপদ সরকার, বিপ্লববাবুর ভাই প্রচারে নামেন। কুশমণ্ডি কেন্দ্রের অধীন গঙ্গারামপুর ব্লকের শুকদেবপুর এবং জাহাঙ্গিরপুর অঞ্চলে সহকারী সভাধিপতি কালীপদ সরকার ও তার ভাইয়েরা প্রকাশ্যে আরএসপি প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা বলে ঝাঁপিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। শঙ্করবাবুকে হারাতে হিলি ব্লকে বিপ্লবগোষ্ঠীর নেতা ডিপিএসসির চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডু এবং ব্লক সভাপতি আশুতোষ সাহারা সক্রিয় ভূমিকা নেন বলে অভিযোগ দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে।

সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ করলেই তো হবে না। আমরা দলবিরোধী কোনও কাজ করিনি।’’ বিপ্লববাবুর ভাই প্রশান্ত মিত্রের বক্তব্য মেলেনি তবে বিপ্লববাবু জেলার একাংশ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁকে হারাতে পাল্টা অভিযোগ করে সরব হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গোষ্ঠীকোন্দল ছিল। আরও যাঁরা নেতৃত্বে ছিলেন, আমাকে হারাতে তাঁরা পেছন থেকে কাজ করেছেন।’’ সহকারী সভাধিপতি কালীপদ সরকারের দাবি, তিনি হরিরামপুরে বিপ্লববাবুর হয়ে আগাগোড়া প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর এলাকা কুশমণ্ডি কেন্দ্রে শুকদেবপুর এলাকায় দলীয় প্রার্থীর হয়ে বিরুদ্ধে প্রচারের অভিযোগ ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন। কল্যাণ কুণ্ডুরা আগেই জানিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ মিথ্যা।

গত ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতা দখলের সময় এ জেলায় দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র নিজে এবং তার নেতৃত্বে ৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে (কুশমণ্ডি আসনটি জোটের কংগ্রেস দাঁড়িয়ে হারে) মোট পাঁচ জন তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর বালুরঘাটের শঙ্কর চক্রবর্তীকে মন্ত্রী করার মধ্যে দিয়ে গোষ্ঠীকোন্দলের শুরু বলে অভিযোগ। দলের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে হাল ধরে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি করে বিপ্লববাবু মনে করেছিলেন তাঁকেই মন্ত্রী করা হবে। তবে সে সময় পরিষদীয় সচিবের পদ দিয়ে বিপ্লববাবুকে সামলে রাখার চেষ্টা হলেও তিনি দলের কর্তৃত্ব হাতে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠন বলে অভিযোগ। তাঁর হাত দিয়ে জেলাপরিষদের অনুগামী সদস্যরা টিকিট পেয়ে জয়ী হওয়ার সুবাদে কর্তৃত্বের রাশ চলে আসে বিপ্লববাবুর হাতে। মন্ত্রী অনুগামী তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদাকে সরিয়ে জেলাপরিষদ সদস্য কল্যাণ কুণ্ডুকে ডিপিএসসির চেয়ারম্যান করে স্কুল সংসদেও কর্তৃত্ব কায়েম রাখেন বিপ্লববাবু।

তাই ভোটের মুখে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদ থেকে বিপ্লববাবুকে সরিয়ে দিলেও জেলা পরিষদ এবং জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের কর্তৃত্বের রাশ তাঁর হাতেই থেকে যায়। এক দিকে ললিতা টিগ্গা, সহকারী সভাধিপতি কালীপদ সরকার, কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ পাহান, চিন্তামনি বিহা সহ অধিকাংশ জেলাপরিষদ সদস্য এবং বিপ্লব অনুগামী ডিপিএসসির চেয়ারম্যান কল্যাণ কুন্ডুরা আর অন্যপক্ষে বালুরঘাটের বিদায়ী মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী ও তার ঘনিষ্ঠ গঙ্গারামপুরের বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থী সত্যেন রায়, কুশমন্ডির প্রার্থী রেখা রায়, কুমারগঞ্জের বিদায়ী বিধায়ক মহমুদা বেগম ঘনিষ্ঠ তোরাফ হোসেন মন্ডল, তপনের বাচ্চু হাঁসদাদের গোষ্ঠীবিবাদ ভোটের সময় আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয়। ভোটের ফল প্রকাশের পর তাই কাঠগড়ায় সেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বই।

অন্য বিষয়গুলি:

Conspiracy Biplob Mitra assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE