Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
বেলাগাম ট্রাকে পিষে মৃত ৪

মাছ ধরা দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনা

পরিবারের যে কোনও উৎসব থাকলেই জাল ফেলা হয় বাড়ির পুকুরে। এমনটাই রীতি গাজলের ময়না গ্রামের দাস পরিবারের। শুক্রবার জামাই ষষ্ঠীতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এ দিন আর সপরিবার একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া হল না। পুকুরে মাছ ধরার পর্ব চলার সময় লাগোয়া জাতীয় সড়কে পণ্য বোঝাই একটি ট্রাক উল্টে যায়।

দুর্ঘটনার পরে ময়না গ্রামের পুকুর থেকে তোলা হচ্ছে লরিটি। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

দুর্ঘটনার পরে ময়না গ্রামের পুকুর থেকে তোলা হচ্ছে লরিটি। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৭:৩১
Share: Save:

পরিবারের যে কোনও উৎসব থাকলেই জাল ফেলা হয় বাড়ির পুকুরে। এমনটাই রীতি গাজলের ময়না গ্রামের দাস পরিবারের। শুক্রবার জামাই ষষ্ঠীতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এ দিন আর সপরিবার একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া হল না। পুকুরে মাছ ধরার পর্ব চলার সময় লাগোয়া জাতীয় সড়কে পণ্য বোঝাই একটি ট্রাক উল্টে যায়। তাতে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় মাছ ধরা দেখতে আসা ওই পরিবারের সদস্য দুই স্কুল পড়ুয়া সহ চারজনের। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন আরও একজন।

এ দিন কাক ভোরে এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামজুড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বিষ্ণু দাস(৫০) ও তাঁর এক মাত্র সন্তান স্মৃতির(১০)। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে বিষ্ণুবাবুর ভাইপো প্রবীর দাস(২১) এবং ভাইজি সন্দীতা দাসের(১০)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে তাঁর অপর এক ভাইপো সুদীপ্তও। মালদহ শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ট্রাকটিকে আটক করা হয়েছে। ট্রাক চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

ময়না গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণু দাস পেশায় ছিলেন ধান ও চাল ব্যবসায়ী। বিষ্ণুবাবুরা পাঁচ ভাই। তিনিই ছিলেন বড়ো। একান্নবর্তী পরিবার ছিল তাঁদের। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুবাবু বাড়ির ছোটদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। কাজের বাইরে বাড়িতে যতক্ষণ থাকতেন তাঁকে ঘিরে থাকত ছোটরা। বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি পুকুর রয়েছে দাস পরিবারের। মাছ চাষ করা হয় এই পুকুরে। পরিবারের প্রথা মেনে জামাইষষ্ঠীর ভোরে জেলেদের নিয়ে পুকুরে মাছ ধরতে যান বিষ্ণুবাবু। পিছু নেয় তাঁর নিজের মেয়ে ও ভাইদের ছেলেমেয়েরাও।

মাছ ধরা দেখার উৎসাহে ঘুম চোখেই পাঁচটা নাগাদ বিষ্ণুবাবুর সঙ্গ নিয়েছিল তাঁর মেয়ে স্মৃতি, খুড়তুতো বোন সন্দিতা, ভাই সুদীপ্ত এবং দাদা প্রবীর দাস। স্মৃতি এবং সন্দিতা দু’জনই গাজলের ময়না হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। প্রবীর ইটাহার মেঘনাদ সাহা কলেজ থেকে সম্প্রতি স্নাতক হয়েছিলেন। আর সুদীপ্ত স্থানীয় একটি বেসরকারি হাই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন।

ভোরের আধো আলোয় জাতীয় সড়কের ধারে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে মাছ ধরা দেখছিল তাঁরা। সেই সময় মালদহ থেকে রায়গঞ্জ গামী একটি পণ্য বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় পুকুরে। ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে যান পরিবারের পাঁচজন।

বিকট আওয়াজ পেয়ে ছুটে যান দাস পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের উদ্ধার করে গাজল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিষ্ণুবাবু, প্রবীর ও সন্দীতাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্মৃতি এবং সুদীপ্তকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসার পথেই মৃত্যু হয় স্মৃতির। মালদহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সুদীপ্তকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তীব্র গতিতে যাচ্ছিল ট্রাকটি। তার জেরেই এমন দূর্ঘটনা বলে দাবি গ্রামবাসীদের। ওই পরিবারের সদস্য আশিস দাস বলেন, ‘‘উৎসব হলেই পুকুর থেকে বড়ো মাছ ধরে খাওয়া হয়। সকলে মিলে খুব মজা হয়। কি ভাবে এমন হয়ে গেল আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ আহত সুদীপ্তের বাবা সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘ছেলে মেয়েরা মাছ ধরা দেখতে ভালোবাসে। তাই সকালে কাউকেই নিষেধ করা হয়নি। এমন অবস্থা হবে তা আমরা ভাবতে পারিনি।

জামাই ষষ্ঠীর সকালে গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারেই ছিল উৎসবের মেজাজ। প্রস্তুতিও চলছিল পুরোদমে। কিন্তু এই দুর্ঘটনায় থমকে যায় গোটা গ্রামই। দাস পরিবারের শোকে সামিল হন গোটা গ্রামের মানুষ।

অন্য বিষয়গুলি:

accident gajol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE