Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

দাঁত ও হাড়ে ক্ষয়, আক্রান্ত ১৩০০ শিশু

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, জেলার আটটি ব্লকের মধ্যে গঙ্গারামপুর, তপন, বংশীহারি, কুশমণ্ডি ও কুমারগঞ্জ ব্লকে বহু নলকূপের জলে ফ্লুয়োরাইডের দূষণ বেশি। গত বছর ওই পাঁচটি ব্লকের ১৯৭টি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

আক্রান্ত: ফ্লুয়োরোসিসের কবলে পড়ুয়ারা। গঙ্গারামপুরের একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

আক্রান্ত: ফ্লুয়োরোসিসের কবলে পড়ুয়ারা। গঙ্গারামপুরের একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
Share: Save:

দাঁত ও মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে হাজারেরও বেশি শিশু। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সমীক্ষার রিপোর্ট, জেলার পাঁচটি ব্লকে নলকূপের জলে মাত্রাতিরিক্ত ফ্লুয়োরাইড মিলেছে। সেই জল খেয়েই ফ্লুয়োরোসিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে এলাকার ছয় থেকে এগারো বছরের প্রায় ১৩০০ শিশু।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, জেলার আটটি ব্লকের মধ্যে গঙ্গারামপুর, তপন, বংশীহারি, কুশমণ্ডি ও কুমারগঞ্জ ব্লকে বহু নলকূপের জলে ফ্লুয়োরাইডের দূষণ বেশি। গত বছর ওই পাঁচটি ব্লকের ১৯৭টি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তাতে স্কুল ও এলাকার নলকূপের জল পান করে, এ রকম প্রায় ১৩০০ শিশুর ব্যাপক দাঁতের ক্ষয় রোগ ধরা পড়েছে। ইতিমধ্যে ওই পাঁচটি ব্লকে নলকূপের জল পান করে ২২৩টি গ্রামের শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মিলিয়ে দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন অন্তত দু’হাজার বাসিন্দা।

এমনিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বেঁধে দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এক লিটার জলে ফ্লুয়োরাইডের সহনমাত্রা এক মিলিগ্রাম। গঙ্গারামপুরের বিষ্ণুপুর ও গোপালপুরের সমস্ত নলকূপ জলে ফ্লুয়োরাইডের পরিমাণ মিলেছে প্রায় আট মিলিগ্রাম। অর্থাৎ স্বাভাবিক সহনমাত্রার চেয়ে আটগুণ বেশি। কুশমণ্ডির বেরইল পঞ্চায়েতের সরলা, আকচা পঞ্চায়েতের জোতসুদাম এবং তপনের আজমতপুর পঞ্চায়েতের বজ্রাপুকুর এলাকায় এক লিটার জলে ফ্লুয়োরাইডের মাত্রা মিলেছে প্রায় ৭ মিলিগ্রাম।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, ‘‘ফ্লুয়োরাইডযুক্ত জল পান করে ওই পাঁচটি ব্লকের পড়ুয়া থেকে বাসিন্দারা ফ্লুয়োরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর থেকে আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, জন্ম থেকে কোনও শিশু গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ফ্লুয়োরাইডযুক্ত জল খেতে থাকলে প্রথমে তার দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়। তারপর সে দাঁতের ক্ষয়রোগের শিকার হয়ে পড়ে। তবে সময় মতো সাবধানতা অবলম্বন ও চিকিৎসা না হলে মেরুদণ্ডের হাড়ের বিকৃতিও ঘটে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, পরিশুদ্ধ পানীয় জল পানই চিকিৎসার প্রথম ও একমাত্র শর্ত।

গঙ্গারামপুরের তৃণমূল বিধায়ক গৌতম দাস বলেন, ‘‘ফ্লুয়োরাইড মিলেছে যে সব এলাকায় সেই সব জায়গার বাসিন্দাদের পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করতে পিএইচই-কে জলাধার তৈরির জন্য বলা হয়েছে।’’ অন্য দিকে, জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি জেলা স্তরে বৈঠক হয়েছে। ফ্লুয়োরাইড দূষণযুক্ত ব্লকে পিএইচই কাজ শুরু করেছে।’’

পিএইচই-র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদ্যোৎকুমার বলেন, ‘‘ওই ব্লকগুলিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জলাধার থেকে আক্রান্ত এলাকাগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dental Problem Spinal Cord Disease Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE