বছরখানেক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া নাগরাকাটার ধরণীপুর চা বাগানের জমি ‘অধিগ্রহণ’ করল জেলা প্রশাসন। রেডব্যাঙ্ক গ্রুপের ওই চা বাগানের নিজ বাতিল করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার বাগানে গিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা ‘অধিগ্রহণের’ নোটিশ ঝুলিয়ে দেন। মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি, মালবাজারের মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক পেম্বা লামা ভুটিয়ার উপস্থিতিতে চা বাগানের অফিসঘর ও ম্যানেজারের আবাসনও সিল করে দেওয়া হয়। প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনেই এদিন তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী বচসায় জড়িয়ে পড়ে।
গত বছরের ১৯ অক্টোবর থেকে রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর পরিচালনাধীন রেডব্যাঙ্ক, ধরণীপুর এবং সুরেন্দ্রনগর চা বাগান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাগান তিনটি বন্ধ থাকায় অর্ধাহার অনাহারে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিকরা। অপুষ্টিজনিত রোগে শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগও ওঠে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এরপরই সরকারের তরফে লিজ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠীকে ৩০ বছরের জন্যে তিনটি বাগানের লিজ দেওয়া হয়েছিল বলে ভূমি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। চলতি বছরে সেই লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই লিজ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত মাসে ডুয়ার্সের বান্দাপানি চা বাগানও একই ভাবে অধিগ্রহণ করে প্রশাসন।
মঙ্গলবার সরকারি নোটিশ দেওয়ার পরেই ১১৪০ একরেরও বেশি জমির উপর ধরণীপুর চা বাগানে সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হল। যদিও,এরপরে বাগানটি কী ভাবে চলবে তা অবশ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়নি। মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি জানান, “বাগানের জমি মেপে নতুন করে খতিয়ান তৈরি হবে।”
এ দিকে, জমি অধিগ্রহণের সময়েই বাগানে কাদের আধিপত্য থাকবে, তা নিয়ে গোলমালে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী। দুই সংগঠনের নেতা কর্মীদের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতি বেধে যায়। জেলা পরিষদ সদস্য অমরনাথ ঝাঁ সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বে। তৃণমূল টি ওয়ার্কাস প্ল্যান্টেশন ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। এ দিকে তাঁকে বাগানে দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন তৃণমূলের অন্য সংগঠন তরাই ডুয়ার্স প্লান্টেশন ওয়ার্র্কাস সংগঠনের সদস্যরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। অমরনাথ ঝাঁ বলেন, “বাগানে আমাদের সংগঠনই শক্তিশালী।” তাঁর অভিযোগ, বাগানে ত্রাণ বিলি ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতি রয়েছে। অস্থায়ী ভাবে চা পাতা তোলা নিয়েও অনিয়ম রয়েছে।
অন্যদিকে, তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্সের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোজ কারকি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “ত্রাণ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে যখন কোনও প্রশ্ন নেই, তখন বাইরে থেকে কেন কথা বলা হচ্ছে বুঝছি না।” অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই শাসক দলের দুই সংগঠনের সদস্যদের নিরস্ত করা হয়। তারপরে শান্তিপূর্ণ ভাবেই অধিগ্রহণ পর্ব মিটেছে।
তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারি অধিগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিরোধী ২৩টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, “জমি কার দখলে রয়েছে, তা নিয়ে শ্রমিকদের মাথাব্যথার কিছু নেই। তারা চান দ্রুত বাগান খুলুক।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সম্পাদক তেজকুমার টোপ্পো বলেন, “সরকার জট কাটানোর উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুশি। বাগানের পিএফ সহ বিভিন্ন খাতে কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সেই বকেয়া কে দেবে তা রাজ্য সরকারকেই তা স্পষ্ট করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy