ঘটা করে নানা সচেতনতা চললেও ডাইনি অপবাদ দিয়ে মহিলাদের উপরে হামলা, খুনের ঘটনা কমছে না উত্তর দিনাজপুরে। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি জেলা ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ডাইনি প্রথার বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে। সেখানে গাঁ-গঞ্জে যে ধরনের রোগ হয় তা সারাতে কী করণীয় সেটাও বারেবারে বোঝাবেন ওই স্বাস্থ্যকর্মীরা।
জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-১ স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তিন মাসে জেলার বিভিন্ন ব্লকে ডাইনি সন্দেহে দুজন আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। একজন আদিবাসী মহিলাকে খুনের চেষ্টা করা হয়। কুসংস্কার ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবের জেরেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের মধ্যে কুসংস্কার জাকিয়ে বসেছে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০ ডিসেম্বর থেকে জেলার রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, ইটাহার, করণদিঘি, চোপড়া, ইসলামপুর, গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকে আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্সরা আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচার শুরু করেছেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার জন্যও সচেতন করছেন তাঁরা।
স্বাস্থ্য দফতরের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বিনা চিকিৎসা ও হাতুড়ে চিকিৎসকদের কাছে ভুল চিকিৎসার কারণে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। এর পরেই স্থানীয় কোনও মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে সন্দেহ করার বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে। তার জেরেই ওই মহিলার উপর হামলা বা তাঁকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটে বলে অনুমান। তবে সচেতন করার কাজ শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক অসুস্থ আদিবাসী নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নিচ্ছেন না। সে কথাও স্বাস্থ্য দফতরের নজরে এসেছে। সে জন্য আদিবাসীদের সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সদস্যদেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৯ অক্টোবর কালিয়াগঞ্জের বালাবন্ত আদিবাসী পাড়া এলাকায় পার্বতী পাহান (৪২) নামে এক মহিলাকে ডাইনি সন্দেহে প্রতিবেশীদের একাংশ পিটিয়ে মারেন বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত ৭ অক্টোবর সুনীল পাহান (৪২) পার্বতীদেবীর এক প্রতিবেশী মারা যান। সুনীলবাবুর মৃত্যুর পর পার্বতীদেবীকে ডাইনি বলে অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশীদের একাংশের বিরুদ্ধে।
গত ৫ ডিসেম্বর ইটাহারের সোনাপুর এলাকায় একইভাবে অসুস্থ হয়ে মারা যান সোমাই হেমব্রম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পরদিন মুংলি মুর্মু নামে এক পঞ্চাশোর্ধ এক মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে প্রতিবেশীদের একাংশ মারধর করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। গত ১০ ডিসেম্বর চোপড়ার গাধাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা কুকিবালা ওঁরাও (৩২) নামে এক মহিলাকে ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশীদের একাংশের বিরুদ্ধে।
গত এক বছরে ওই এলাকায় অসুস্থ হয়ে ছয় আদিবাসী বাসিন্দার মৃত্যু হয়। কুকিবালাদেবীর কুপ্রভাবেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন প্রতিবেশীদের একাংশ। এর পরে তাঁঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালের জুন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত জেলার ৯টি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ডাইনি সন্দেহে ৭ জন আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy