পোড়াঝাড়ে জমি দখল কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর এলাকায় পুলিশি টহল। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
জমি দখল নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী লড়াইয়ে শুক্রবার দুপুরে রক্তারক্তি হল শিলিগুড়িতে। এ দিন শহরের উপকণ্ঠে পোড়াঝাড়ে নদীর চরের জমি দখলের কর্তৃত্ব কোনও গোষ্ঠীর থাকবে তা নিয়ে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। লাঠিসোটা নিয়ে হামলা ও ঘর ভাঙচুর চলে। সংঘর্ষে জখম হন ৩ জন। নিরঞ্জন সরকার ও শ্যামল রায়কে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শ্যামল ও তাঁর পরিবারের লোকের অভিযোগ, এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য কার্তিক মণ্ডলের নেতৃত্বে একদল লোক তাঁদের দখলে থাকা জমির ঘর ভাঙচুর করেছেন। মারার প্রতিবাদ করতে গিয়েই নিরঞ্জনকেও মার খেতে হয়।
যদিও কার্তিকবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, নিরঞ্জন জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। তা দখলমুক্ত করতে গেলে তাঁদের উপর আক্রমণ করা হয়। পুলিশ গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। ফুলবাড়ি-১ এর তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। শিলিগুড়ির এডিসি কে সাভারি রাজকুমার বলেন, “ঘটনার খবর পেয়েছি। এলাকায় বাহিনী পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, এদিন দুপুর থেকেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ মোতায়েন করার পরেও এলাকা থমথমে ছিল গোটা দিনই। জলপাইগুড়ির তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। ওই এলাকা গৌতম দেব দেখেন। কী হয়েছে আমার জানা নেই।” গৌতমবাবু ঘটনায় তৃণমূলের জড়িত থাকার ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ঘটনায় তৃণমূলের কেউ জড়িত নেই। তবে কী হয়েছে আমি শিলিগুড়ি পৌঁছে খোঁজ নিয়ে দেখব।” রাজগঞ্জ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক অন্য কথা বলছেন। তিনি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “নিজেদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝির ফলে এটা ঘটেছে। নিজেদের মধ্যে তা মিটিয়ে নেব।”
সিপিএমের এনজেপি-ফুলবাড়ি জোনাল সম্পাদক দিবস চৌবে অভিযোগ করেন, “ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই জমি মাফিয়াদেরএকটা চক্র কার্যত সরকারি নেতা-কর্তাদের একাংশের মদতে চলছে। সে জন্য এ সব ঘটনা হচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরও রক্ত ঝরবে।” এলাকায় যে দলেরই একাংশ জমি দখলে জড়িয়ে পড়েছে তা স্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান তপন সিংহও। তিনি বলেন, “দলের অভ্যন্তরীণ ব্যপার। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে জমি দখল না করার। নিজেরাই মিটিয়ে নেব।” তিনি দুই পক্ষকেই ব্যপারটি মিটিয়ে নিতে বারংবারই অনুরোধ জানান।
এদিন সকালে দখলমুক্ত করার নামে পোড়াঝাড়ের মহানন্দা নদী সংলগ্ন এলাকার একটি বাড়ি ভেঙে দিতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য কার্তিক মণ্ডলের নেতৃত্ব জনা বিশেক লোক। তাঁরা শ্যামল রায়ের বাড়ি ভাঙচুরও করেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় শ্যামলবাবু বাধা দিতে গেলে তাঁকে মারধরও করা হয়। তাঁর মাথায় চোট লাগে। এর পরে তাঁকে সাহায্য করতে ঘটনাস্থলে যান নিরঞ্জন সহ এলাকার মহিলারাও। নিরঞ্জনকেও বাঁশ দিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নিরঞ্জন বলেন, “ওঁরা দীর্ঘদিন ধরে নদীর চরের জমি দখল করে বিক্রি করছে। আমি গত অক্টোবর মাসে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়িতে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।”
কার্তিকবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমি কাউকে মারিনি। ওঁরাই সরকারি খাস জমি দখল করেছিল। জন প্রতিনিধি হিসেবে আমি বহুবার অনুরোধ করেছি। ফল না হওয়ায় এদিন আমরা দখল তুলতে অনুরোধ করেছি। ওঁরাই ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের আক্রমণ করে।” তাঁদের একজনকে সদস্যকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। আগে কি অভিযোগ হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এডিসি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকার বাসিন্দারা নিজেরাই জমি দখল করে বিক্রি করছিলেন। যাঁরা নদীর চরের কাছে থাকেন, তাঁরা বেশি জমি দখল করে নিচ্ছিলেন। যাঁরা একটু দূরে থাকেন তাঁদের দখলে কম জমি আসায় তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ করেন। এলাকার বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচনে সিপিআইয়ের হয়ে দাঁড়িয়ে হারিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী নিরঞ্জন সরকারকে। পরে জেতার পরে কার্তিক তৃণমূলে যোগ দেয়। ফলে নব্য তৃণমূল ক্রমেই এলাকায় নিজেদের কর্তৃত্ব ফলাতে থাকলে দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যান তৃণমূল কর্মীরা। তাতেই বিরোধের সূত্রপাত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy