হরিরামপুরের কলসি গ্রামে নির্যাতিতা মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের শিকার হলেন এক প্রৌঢ়া। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর থানার কলসি গ্রামের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়া সম্প্রতি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি তাজমুল হক ও তাঁর দুই সঙ্গী তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। মঙ্গলবার সকালে তাজমুলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। তাজমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে হবে দাবি করে ওই মহিলাকে মারধর করে তারা। ওই প্রৌঢ়ার দাবি, জেলার বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা সোনা পালের প্ররোচনাতেই তিনি তাজমুলের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করেছিলেন বলে সাদা কাগজে তাঁকে লিখে দিতে হবে বলে চাপ দেওয়া হয়। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে রাস্তার উপরে তাঁকে বিবস্ত্র করে নিগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ।
তাজমুল দলের জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্রের ঘনিষ্ঠ। বিপ্লববাবু এ দিনের ঘটনার পরে বলেন, “কোনও মহিলাকে নিগ্রহ করা অনুচিত। তবে ওই মহিলা তাজমুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।” ওই মহিলাকে নিগ্রহের ঘটনায় তৃণমূলের কেউ জড়িত নন বলেও দাবি করেছেন বিপ্লববাবু।
ওই মহিলা অবশ্য পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, এ দিন তাজমুল হকের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মীরাই তাঁর উপরে হামলা করে। পেশায় দিনমজুর ওই মহিলা কলসি গ্রামে একাই থাকেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মহিলা হরিরামপুর থানায় তাজমূল এবং দুই তৃণমূল কর্মী আতাউর রহমান ও তৈমুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। ফলে ওই মহিলা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সোমবার কাগজপত্র সম্পূর্ণ তৈরি না হওয়ায় মঙ্গলবার আদালতে মামলা দায়ের করার কথা ছিল। সোনাবাবুর দাবি, “তার আগেই এদিন সকালে পরিকল্পনা করে ওই মহিলার উপর অভিযুক্ত ব্লক সভাপতির নির্দেশে হামলা চালানো হয়েছে।”
এদিন থানার সামনে দাঁড়িয়ে ওই মহিলা অভিযোগ করেন, বাড়ির সামনে থেকে তাঁকে মারধর করা হয়। তাঁকে সালিশির নামে এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলেও নিয়ে যাওয়া হয়। মহিলার অভিযোগ, সেখানে গিয়ে সোনাবাবুর প্ররোচনাতেই তিনি তাজমুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলে মুচলেকা লিখে দিতে চাপ দেওয়া হয়। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়। গ্রামের মানুষ কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। মারের চোটে মহিলা কয়েক বার বমি করেন। এর পর হরিরামপুর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এসডিপিও রাজীব ভট্টাচার্য থানায় উপস্থিত থেকে মহিলার কাছ থেকে অভিযোগ নেন। কিন্তু অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ তদন্তে যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া জানান, মহিলাকে নিগ্রহের ঘটনায় চার-পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি হরিরামপুরের ডাকসাইটে নেতা তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোনাবাবুকে তৃণমূল থেকে থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেই বিপ্লববাবুর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় সোনাবাবুর গোষ্ঠীর। তাজমুলের দাবি, “সোনাবাবুর উস্কানিতেই ওই প্রৌঢ়া আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।” সোনাবাবুর পাল্টা দাবি, ওই প্রৌঢ়ার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই। তিনি বলেন, “তাজমুলকে বাঁচাতে আমার ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছেন বিপ্লববাবুরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy