বেহাল বহরমপুরের মধুপুর-বিষ্ণুপুর রাস্তা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
বর্ষার শুরুতেই বেহাল হয়ে পড়েছে মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোড। সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে যাতায়াতের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে বহরমপুর পুর-এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তাও। নির্বিকার বহরমপুর পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যের চেনা বুলি, “পিচের শত্রু বৃষ্টি। ফলে বৃষ্টি না কমলে রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব নয়।”
এদিকে রাস্তার বেহাল দশার কারণে মধুুপুর-বিষ্ণুপুর রোড পার হতে এখন সময় লাগছে অনেক বেশি। বুধবার সকালে ওই রাস্তায় একটি বড় ট্রাক খারাপ হয়ে যাওয়ায় দিনভর যানজটে নাকাল হতে হয় শহরবাসীদের। তার উপরে সারাদিন বৃষ্টির কারণে রাস্তার গর্তও দলে ভর্তি হয়ে যায়। ফলে পথ চলতি মানুষ থেকে যাঁরা গাড়িতে যাচ্ছিলেন এদিন দুর্ভোগে পড়তে হয় সকলকেই। রাত পর্যন্ত যানজট ছিল বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হওয়ার পরেই মধুপুর বাজার থেকে পঞ্চাননতলা মোড় পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে পিচ বলে আর কিছু নেই। তিন মাস আগেও রাস্তার খানা-খন্দ পিচ দিয়ে বোজানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু এখন সেখানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে রাস্তার ভয়াবহ চেহারা হয়েছে। বৃষ্টিতে ওই খানা-খন্দে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় রাস্তা ছোট-খাটো পুকুরে পরিণত হয়েছে।
এই অবস্থায় ওই রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল করতে না পারার কারণে যেমন যানজট হচ্ছে, তেমনি মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডে বহরমপুর পুরসভার তরফে টোল-ট্যাক্স আদায়ে কোনও ছাড়পত্র না মেলায় ওই যানজট আরও তীব্র আকার নিয়েছে। সব মিলিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে শহরের বাসিন্দাদের অসন্তোষ বাড়ছে। ওই রাস্তায় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
এর পাশাপাশি জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়্যাল মিশন (জেএনইউআরএম) প্রকল্পের আওতায় প্রতি পাড়ায় পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য বিভিন্ন জনবহুল ও ব্যস্ততম রাস্তার পিচ তুলে মাটি খুঁড়ে পাইপলাইন বসানোর ফলে জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে রয়েছে পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তা। পুর-কর্তৃপক্ষ পরে ওই রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে উপরের মাটি আলগা হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। পুরপ্রধান অবশ্য বলেন, “পাইপ লাইনের মধ্যে কোনও ত্রুটি না থাকলে সংস্কার করে আগের মতোই রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হবে।” তবে ওই রাস্তা সারাইয়ে ঠিক কত দিন লাগবে? পুরপ্রধানের কাছ থেকে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
এদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই বহরমপুর পুরসভার অধীনে থাকা বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলা রেল গেট পর্যন্ত রাস্তাও বেহাল হয়ে পড়েছে। মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডে পিচের চাদর উঠে গিয়ে ওই রাস্তায় বড় বড় খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার শুরুতেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ভরা বর্ষায় রাস্তার হাল কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত শহরবাসী। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য তাতে কোনও হেলদোল নেই। পুরপ্রধানের সাফ কথা, “পিচের শত্রু জল। তাই এখনই রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব নয়।” তিনি বলেন, “তিন মাস আগেই ওই রাস্তায় যে সমস্ত খানা-খন্দ ছিল, পিচ দিয়ে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে।” গত বছরেও বর্ষার সময়ে মধুপুর-বিষ্ণুপুর রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছিল। পুজোর ঠিক আগে ওই রাস্তা সংস্কার করে পুরসভা। তার আগের তিন-চার মাস যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় শহরবাসীকে। তখনও বর্ষার সময়ে রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব নয় বলে পুরপ্রধান একই কথা বলেছিলেন।
প্রতি তিন মাস অন্তর রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজন হচ্ছে কেন? প্রশ্ন তুলেছেন পুরসভার কাউন্সিলর তৃণমূলের কানাই রায়। কানাইবাবুর অভিযোগ, “মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডের রাস্তা সংস্কার, ওই রাস্তার উপরে টোল আদায়, ওই রাস্তার পাশে দোকান ঘর নির্মাণ, এ সব কিছুর জন্য পুর-কর্তৃপক্ষের একজনই ধরাবাঁধা ঠিকাদার রয়েছেন। তিনি ছাড়া ওই কাজের বরাত অন্য কেউ পায় না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার ঘোষণা থেকে ওয়াকর্ অর্ডার দেওয়া হলে একই ঠিকাদারের পক্ষে সব কাজ পাওয়া সম্ভব নয়!” এ ক্ষেত্রে ঠিকাদার ও পুর-কর্তৃপক্ষের ‘গোপন আঁতাত’ রয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
কানাইবাবু বলেন, “গোপন আঁতাতের কারণে ওই ঠিকাদারও প্রতি ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। মাঝখান থেকে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে নিত্যযাত্রীরা। পুরসভার প্রধান উপদেষ্টা পদে যাঁকে বসিয়ে রাখা হয়েছে, তিনি কি ওই বেনিয়ম দেখতে পাচ্ছেন না? ভোটের আগে পুর-পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যে এখন ভাঁওতায় পরিণত হয়েছে মানুষ তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন।”
পুরপ্রধান বলেন, “ওই অভিযোগ ঠিক নয়। স্বচ্ছতা মেনে দরপত্র ঘোষণার পরে ওয়ার্কঅর্ডার দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে পুরসভার স্বার্থ দেখা হয়। তবে জনবহুল ও ব্যস্ততম ওই রাস্তায় ভারী পণ্যবাহী লরি যাতায়াতের ফলে রাস্তা সংস্কারের কিছু দিন পরেই তা বেহাল হয়ে পড়ছে। বৃষ্টিতে তো আর পিচের কাজ করা যায় না, এটাও মানুষকে বুঝতে হবে। বৃষ্টি থামলেই কাজ শুরু হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy