আড্ডায় মাতলেন গৌরীশঙ্কর দত্ত।
টানা বিয়াল্লিশ দিন পরে তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমোলেন!
কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনকে ঘিরে ব্যস্ততা শুরু হয়েছিল সেই কবেই। ভোটের দিন ঘোষণার পরে বিজেপির নদিয়া জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দীর ঘুমের সময় কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছিল সাকুল্যে দুই থেকে তিন ঘণ্টায়। শনিবার রাতে তিনি টানা ন’ঘণ্টা ঘুমোলেন। রবিবার সকাল আটটা নাগাদ ঘুম ভেঙেছিল কল্যাণীর গয়েশপুর অঞ্চলের বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ডাকে। ভোটের দিন তৃণমূলের লোকজন তাঁদের উপর কী ভাবে অত্যাচার করেছে সেই কথা বলতে তাঁরা দলবেঁধে এসেছিলেন কল্যাণবাবুর কৃষ্ণনগরের বাড়িতে। ইতিমধ্যেই বাড়িতে চলে এসেছিলেন বিজেপির চাকদহ শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ বারুই। আজ, সোমবার ভোটের ফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত কী করতে হবে সে বিষয়ে তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে দিতেই বেলা গড়িয়ে দুপুর। তড়িঘড়ি স্নান ও গীতাপাঠ সেরে ছোলার ছাতু, মধু আর পাতিলেবুর কবিরাজি ‘স্টেরয়েড’ খেয়েই ছুট জেলা সদরের কার্যালয়ে।
সেখানে জেলা নেতাদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকেই কল্যাণবাবুর চোখ চলে যাচ্ছিল ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচে। স্কোরটা দেখে নিয়ে ফের ডুবে যাচ্ছিলেন আলোচনায়। একসময়ের নিয়মিত ক্রিকেট খেলোয়ার হয়েও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এমন ‘হাই টেনশন’ ম্যাচ নিয়ে এমন নিরাসক্ত কেন? কল্যাণবাবুর উত্তর, “এখন কোনও ক্রিকেটই আমার মাথায় ঢুকবে না। সোমবারের ম্যাচটা আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আগে মিটে যাক।” টেনশনে আছেন? “আমি নিয়মিত গীতা পড়ি। কর্মফল নিয়ে ভাবি না। ভাবি, কাজটা নিয়ে। দলের সভাপতি হিসেবে ভোটটা যে ভাবে করাতে পেরেছি তাতে আমি খুশি। ফলাফল তো আমার হাতে নেই।” হাসছেন কল্যাণবাবু। তাঁর সংযোজন, “যেমন ফল হবে মেনে নেব। দলের কর্মীদেরও বলেছি ভাল-মন্দ যাই ঘটুক, সত্যকে সহজ ভাবেই নিতে হবে।”
বিকেলে রানাঘাট ছুটলেন কল্যাণবাবু। সোমবার যাঁরা গণনা কেন্দ্রে থাকবেন তাঁদের প্রশিক্ষণ দিলেন তিনি। দলীয় কার্যালয়ে বসে ল্যাপটপে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ধরে ধরে শেখাচ্ছিলেন ভোট গণনার সময় টেবিলে বসে কাউন্টিং এজেন্ট হিসেবে কী ভাবে কাজ করতে হবে। সতর্ক করে দিলেন, গণনা সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন কেউ টেবিল ছেড়ে না ওঠেন। প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক পরে শেষ হল প্রশিক্ষণ। কল্যাণবাবু বলছেন, “ছেলেদের বলে দিয়েছি, জেতা-হারা কোনও কিছুতেই ভেসে যাওয়া বা ভেঙে পড়া চলবে না। হারলে খুঁজতে হবে কেন হারলাম, কোথায় খামতি ছিল। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিধানসভার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আর জিতলে দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে।”
দলীয় কার্যালয়ে কল্যাণ নন্দী।
অন্য দিকে, রবিবার বেলা দেড়টা নাগাদ বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের ঠিক পাশেই সাদা রঙের গাড়ি থেকে নামলেন তৃণমূূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। কোতয়ালি থানার সামনে বন্ধু সমীর দেব সদ্য রেস্তোরাঁ খুলেছেন। সেখানে বসে দুই বন্ধু জমিয়ে আড্ডা দিলেন। সঙ্গে ছিলেন চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও। রেস্তোরাঁর সামনে প্লাস্টিকের টুলে বসে এগরোল খেতে খেতে ভোটের ফল নিয়ে একটা কথাও বললেন না গৌরীবাবু। শুধু যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “আগেই তো বলেছি, জেতা নিয়ে কোনও দিন চিন্তা করিনি। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য লোকসভার থেকেও ব্যবধান বাড়ানো।” তাই বলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর দলীয় কার্যালয়ের পাশেই আড্ডা? “কে বলল প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী! আমি তো জানি দূরের তৃতীয়!” চেনা মেজাজে গৌরীবাবু।
ফলের আগের দিন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ভোট গণনা সংক্রান্ত বিষয়ে হরিণঘাটায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। কিন্তু বৈঠক শুরু হতেই তাঁর কাছে খবর আসে দলের দীর্ঘ দিনের প্রথম সারির নেতা, প্রাক্তন জেলা কমিটির সদস্য সুধাংশু চক্রবর্তী মারা গিয়েছেন। খবর পেয়েই তিনি রওনা হয়ে যান কৃষ্ণনগরের উদ্দেশে। জেলা কার্যালয়ের সামনে ‘কমরেড’কে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক মিছিলে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রওনা দেন নবদ্বীপ শ্মশানের দিকে। সন্ধ্যায় সেখানে থেকে কল্যাণী ফিরে দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। সুমিতবাবু বলেন, “আমাদের কাজ হল সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করা। আর এটা নিশ্চিত যে আমরা লড়াইয়ে থাকছি।”
শোক মিছিলে সুমিত দে।
রবিবার সকালেই ট্রেনে কলকাতায় গিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অসীম সাহা। এ দিন প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যালয়ে পিসিসি-র বৈঠক ছিল। দুপুর ২টো পর্যন্ত বৈঠক সেরে সন্ধ্যার ট্রেনে কৃষ্ণনগর ফিরে অসীমবাবু বলছিলেন, “টেনশন তো হচ্ছেই। কারণ এ বার ভোটটা যেমন করেই হোক বাড়াতে হবে।”
আর তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপরেই অপেক্ষার অবসান।
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy