রাজ্য সড়ক যখন খেলার মাঠ। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত
বহরমপুর-করিমপুর রাজ্যসড়কের উপর সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকশো গাড়ি। কোনও বেঞ্চ কিংবা বাঁশ নয়, ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্যারিকেড। বেশ অবাক হয়েই গাড়ি থেকে নেমে চালক ও যাত্রীরা দেখলেন জনাকয়েক কিশোরী রীতিমতো প্যাড, গ্লাভস পরে রাস্তায় ক্রিকেট খেলছে। তার থেকে সামান্য দূরে আরও কয়েকজন ব্যস্ত ফুটবলে! বেশ কয়েকজন কিশোর-কিশোরীর হাতে ছিল ফেস্টুন। তাতে লেখা—ফিরিয়ে দাও আমাদের খেলার মাঠ।
“রাস্তা আটকে এসব কী হচ্ছে?” বাস থেকে নেমে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন এক প্রৌঢ়। ঠিক সেই সময়েই মাইকে ভেসে এল—‘আপনাদের এমন ভোগান্তির জন্য আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বিশ্বাস করুন, এ ছাড়া আমাদেরও আর কিছু করার ছিল না। বহু বার প্রশাসনকে বলেও আমাদের খেলার মাঠটা সারিয়ে দিচ্ছে না। আমরা খেলার জায়গা নেই। তাই রাস্তাতে খেলা করেই আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
বৃহস্পতিবার সকালে ডোমকলের এমন প্রতিবাদ নিত্যযাত্রী ও পথচারীরা তো বটেই, এর আগে এমন কখনও দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না প্রশাসনের অনেক পোড়খাওয়া কর্তাও। ডোমকল মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা যেমন বলেই ফেললেন, “পথে নেমে প্রতিবাদ এর আগেও দেখেছি মশাই। বন্ধের দিন রাস্তাতে ক্রিকেটও দেখা যায়। কিন্তু খেলার মাঠ সারিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে ফুটবল? নাঃ, মনে পড়ছে না!”
শেষ পর্যন্ত মহকুমাশাসকের আশ্বাসে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলা ওই অবরোধ উঠে যায়। ডোমকলের মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু মিত্র বলেন, “মাঠ সংস্কারের জন্য অর্থ না পাওয়ার ফলে এই দেরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা করছি দ্রুত মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
গত ২৩ অগস্ট ডোমকল গালর্স কলেজের নতুন ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই সময় হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছিল ডোমকল স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠে। এলাকার একমাত্র খেলার মাঠে হেলিপ্যাড তৈরি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল নানা মহলেও। প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সফরের শেষে দ্রুত ওই মাঠ সংস্কার করা দেওয়া হবে। কিন্তু ঘটনার পর তিন মাস কেটে গেলেও সেই মাঠ সংস্কার করা হয়নি। ফলে এলাকার খেলোয়াড়রাও সেখানে খেলতে পারছেন না।
ডোমকলের মহিলা ক্রিকেট দলে এখন প্রায় ৪০ জন খেলছেন। তাঁদেরই একজন সাহানা খাতুন বলছেন, “২৫ ডিসেম্বর থেকে সিএবি পরিচালিত আন্তঃ জেলা ক্রিকেট শুরু হচ্ছে কৃষ্ণনগর স্টেডিয়াম মাঠে। অথচ তার আগে আমরা নিজেদের মাঠেই অনুশীলন করতে পারছি না। এলাকার একমাত্র এই খেলার মাঠটাকে কেন এ ভাবে অবহেলায় ফেলে রাখা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।” আয়েশা খাতুন বলেন, “নদীর ওপারে ডোমকল বিটি হাই স্কুলের মাঠেও আমরা অনুশীলন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে মাঠটাও ছোট। তাছাড়া অন্য অসুবিধাও রয়েছে।” একই ভাবে বন্ধ রয়েছে ফুটবল খেলাও। সকাল বিকেল যাঁরা প্রাতঃভ্রমণের পরে মাঠে ফুটবল খেলতেন তাঁরাও হতাশ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রপতির সফরের সময় ডোমকলের মতো একই ভাবে বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ ও জঙ্গিপুরের ম্যাকেঞ্জি পার্কে হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছিল। খুব দ্রুত সেই মাঠ প্রশাসনের তরফে সংস্কারও করে দেওয়া হয়। খেলোয়াড়দের অভিযোগ, অথচ ডোমকলের মাঠটি বারবার বলেও প্রশাসন সংস্কার করছে না। স্থানীয় ভোরের আলো ক্লাবের কর্তা সেলিমুর রহমান বলেন, “সকলের কথা ভেবেই প্রশাসনের উচিত মাঠটা দ্রুত সংস্কার করে দেওয়া। আর সেই দাবিতেই এ দিন রাস্তার উপর ফুটবল ক্রিকেট খেলে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।”
এমন প্রতিবাদের পরেও প্রশাসন কত ‘দ্রুত’ মাঠ সংস্কার করে সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy