চুরি, ছিনতাই, অস্ত্র কেনাবেচার একটি চক্রের সঙ্গে যোগ-সহ এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে এক সময় তিনি জড়িত ছিলেন জানাচ্ছেন এলাকার মানুষ। নদিয়ার ফুলিয়ায় সেই তৃণমূল যুবার নেতা রঞ্জিত গায়েন খুনের তদন্তে নেমে ধন্দে পুলিশ। তদন্তকারী অফিসারেরা প্রাথমিক ভাবে যে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন, তাতে এই খুনের সঙ্গে বিরোধী দলের সম্পর্ক নেই বলেই তাঁদের মনে হচ্ছে। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুন হয়েছে কিনা, তাও তদন্ত করছেন তাঁরা।
শুক্রবার রাতে খুন হন রঞ্জিত। শনিবার তাঁর দেহ মেলে। রবিবার এলাকায় গিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, সিপিএম এবং বিজেপি এই খুনে জড়িত। রবিবার নিহত নেতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল যুবার সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যুব তৃণমূলের দুই কার্যকরী সভাপতি শুভ্রাংশু রায় ও হিরণ চট্টোপাধ্যায়। ঘটনাস্থলে পুলিশও ছিল। পুলিশ সূত্রেই খবর, জেলার পুলিশের শীর্ষ কর্তারা রঞ্জিতের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে জানান এলাকায় আসা তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতাদেরও। এই খুনের ঘটনা যে শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের পরিণামও হতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথাও বলা হয় নেতাদের।
তৃণমূল যুবার এক সর্বোচ্চ নেতা ফোন করে নদিয়ার এসপিকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক, রং না দেখে তাদের ধরতে হবে। এসপি সব্যসাচীরমণ মিশ্র সোমবার দাবি করেছেন, “আমার সঙ্গে ওই নেতাদের কথা হয়নি।” তিনি জানান, এখনও খুনের কারণ পরিষ্কার নয়।
পুলিশ জেনেছে, ঘটনার দিন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছিলেন রঞ্জিত। বিকেলেতাঁর মোবাইলে ফোন আসে। নিচু স্বরে কথা বলতে বলতে ‘বাজার যাচ্ছি’ বলে তিনি বেরোন। রাতে ফেরেননি। পর দিন মাঠে রঞ্জিতের দেহ মেলে। রঞ্জিতের পরিবার শান্তিপুর থানায় দেহটি শনাক্ত করেন।
জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন সরকার ও রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে বিবাদ বহু দিনের। স্থানীয় রাজনীতিতে ফুলিয়ার রঞ্জিত ছিলেন তপনবাবুর অনুগামী। তাই, রঞ্জিত খুনে ‘অন্য গন্ধ’ পাচ্ছেন তৃণমূলের একাংশ। তাই শাসকদলের জেলার নেতারা ঘটনাটিকে ‘রাজনৈতিক খুন’ বলবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। পরে স্থানীয় আবেগকে কাজে লাগাতে সিপিএম-বিজেপির দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলে তৃণমূল।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় ফুলিয়ায় দাপাত দুই অপরাধী, সঞ্জীব ও ভীষ্ম মালাকার। প্রায় ন’বছর আগে দু’জনে খুন হয়। অভিযুক্ত ছিল পুলিশ। বিরোধীদের অভিযোগ, দুই ভাইয়ের দলে ছিলেন রঞ্জিত। দল ভেঙে গেলে রঞ্জিত বাইরে যান রাজমিস্ত্রির কাজে। পড়ে কোমরে আঘাত পেয়ে বাড়ি ফিরে মুরগির খামারে কাজ করতেন। এরই মধ্যে অপরাধ চক্রের সঙ্গে রঞ্জিত জড়ান। সেই সঙ্গে ফুলিয়ায় তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রঞ্জিতকে অঞ্চল কমিটির আহ্বায়কও করা হয়। বিরোধীদের দাবি, ফুলিয়ায় তৃণমূলের দু’গোষ্ঠীর আশ্রিত দুষ্কৃতীদের রেষারেষিতেই খুন হন রঞ্জিত। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, কিছু দিন ধরে রঞ্জিতের মোবাইলে ফোন আসত। পরিবারের লোকেরা তদন্তকারীদের জানান, ফোনে নিচু গলায় কথা বলত রঞ্জিত।
ফোনের সূত্রে দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy