অসমাপ্ত সেতু।—নিজস্ব চিত্র।
অর্থ বরাদ্দ হয়েছে এক দশক আগে। কিন্তু বর্ধমান-নদিয়ার সংযোগ রক্ষাকারী নাকাশিপাড়ার আড়পাড়ার সেতু তৈরি হল না এখনও। ‘অ্যাপ্রোচ রোড’ তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে যেমন জটিলতা আছে, তেমনই ঠিকাদারি সংস্থা বদল করা নিয়ে গড়িমসি চলছে। অগত্যা বিকল্প নড়বড়ে সেতুর উপর দিয়েই চলছে বাস, গাড়ি, এমনকী লরিও।
নাকাশিপাড়ার বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের অধীন আড়পাড়া বিল চিতুয়া থেকে পাঁটুলি অবধি বিস্তৃত। ফি বছর আষাড় থেকে কার্তিক মাস অবধি কানায়-কানায় জলে পূর্ণ থাকে বিল। প্রায় দেড়শো মিটার চওড়া ওই বিল পার হয়ে পড়শি জেলা বর্ধমানের অগ্রদীপের লোকজনকে নদিয়ায় আসতে হয়। বিলের পশ্চিম পাড়ে রয়েছে নাকাশিপাড়া ও কালীগঞ্জ ব্লকের গোটা কুড়ি গ্রাম। ওই গ্রামের লোকজনকেও অফিস-আদালত-বাজার-কলেজে আসার জন্য বিল পেরোতে হয়। পশ্চিম পাড়ের কুবেরনগর, কুটিরপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, ঘোষ সুলতানপুর, ঘোড়াইক্ষেত্র, রাজারামপুর, সীতাচন্দনপুর, সামাদপুর, ঘোলা প্রভৃতি গ্রামের লোকজনের দাবি মেনে ২০০৩ সালে তদানীন্তন পূর্তমন্ত্রী অমর ভট্টাচার্য বিলের উপর সেতু তৈরির শিলান্যাস করেন। তারপর কাজও শুরু হয়। বরাদ্দ করা হয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু জমি-জটে সে কাজ থমকে যায়। এখনও পর্যন্ত বিলের বুকে ছোট-বড় মিলিয়ে সাতটা পেল্লাই সাইজের পিলার বসেছে। গেল বছর সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারের মৃত্যুর পর কাজের গতি পুরোপুরি থমকে গিয়েছে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররাও জমি অধিগ্রহণ না হওয়া অবধি কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে থাকায় পিলারগুলি জীর্ণ হয়ে পড়ছে। পূর্ত দফতরের (রাস্তা) অ্যসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কৌশিক সেনগুপ্ত বলেন, “নতুন করে টেন্ডার ডাকা হবে। অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি এ বার কাজে গতি আসবে।”
যদিও পূর্ত দফতরের কথায় মোটেই ভরসা নেই এলাকাবাসীর। অস্বাভাবিক দীর্ঘসূত্রিতার দরুন এলাকার লোকজন ভাবতে শুরু করেছেন এ জন্মে বোধ হয় বিলের উপর তাঁদের আর শক্তপোক্ত সেতু দেখার সৌভাগ্য হবে না। স্থানীয় বাসিন্দা হামজার আলি শেখ বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই শুনছি ব্রিজ তৈরি হবে। কিন্তু সে আর বাস্তবে হচ্ছে কই?” সেতুর আশপাশেই থাকেন নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ-সভাপতি তৃণমূলের আলাউদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, ‘‘এই সেতুর গুরুত্ব অসীম। দৈনন্দিন প্রয়োজন ছাড়া প্রতি বছর বেশ কয়েকদিন ধরে ধুমধাম করে অগ্রদীপের মেলা হয়। ওই মেলায় লক্ষ-লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। সেতু না থাকায় লোকজনের কষ্ট হয়।’’
নির্মীয়মাণ সেতু তৈরি না হওয়ায় কার্যত জীবন হাতে নিয়ে বিকল্প, মেরেকেটে আট ফুট চওড়া নড়বড়ে কাঠের সেতুর উপর দিয়ে লোকজনকে চলতে হয়। ব্রিটিশ আমলে তৈরি ওই সেতুর গোড়াতেই লেখা রয়েছে, ‘‘অপরিসর ও দুর্বল সেতু ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ।’’ কিন্তু কে কার কথা মানে? এই সেতুই এখন পাশাপাশি দুই জেলানদিয়া ও বর্ধমানের একমাত্র সংযোগ রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করছে। এই সেতু ব্যবহার না করলে দুই পাড়ের মধ্যে যোগাযোগের আর দ্বিতীয় কোনও মাধ্যম নেই। ফলে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই কাঠের সেতুর উপর দিয়ে চলছে কৃষ্ণনগর-অগ্রদীপ বাস। এমনকী স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন দশ চাকার মালবোঝাই লরিও পারপার করে এই পলকা সেতুর উপর দিয়ে। সুলতানপুরের বাসিন্দা মুস্তাকিম শেখ বললেন, ‘‘সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনের মধ্যেই সেতুর একাধিক কাঠ ভেঙে গিয়েছিল। আবার ব্লকের লোকজন সারিয়ে দিল। ব্যাপারটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে।’’ সেতুর সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের কল্লোল খান। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি একাধিকবার বিধানসভায় তুলেছি। এ বার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy