জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে শহরের রাস্তায় চলছে পুলিশি টহলদারি।—নিজস্ব চিত্র
রাত বাড়তেই ভিড়টা হালকা হচ্ছিল! আর ঠিক তখনই পোস্ট অফিস মোড়ে প্রতিমা নিয়ে উন্মত্ত ভাবে ছুটে আসা এক বারোয়ারির সদস্যেরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আর এক বারোয়ারির প্রতিমার কিছু বেহারার উপর আচমকা চড়াও হল। শুরু হল বেধড়ক লাঠিপেটা। মুহূর্তে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হলেন চার জন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়টা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। ছুটে এলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাও। কিন্তু তার আগেই আক্রমণকারী বারোয়ারির সদস্যেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কালী বা জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানে কৃষ্ণনগর শহরে এই দৃশ্য নতুন নয়। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষের অবশ্য দাবি, তাঁরা উৎসবের দিন গুলিতে পরিস্থিতি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরি। তিনি বলেন, ‘‘অনেক আগে থেকেই শহরে পুলিশি টহল শুরু হয়েছে। মদের ঠেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে আগাম সতর্কতা হিসাবে প্রায় একশো জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” জেলাশাসক পি বি সালিমও বলছেন, ‘‘উৎসবকে সর্বাঙ্গীন ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য আমরা তৈরি।”
এ বার ভিডিও ক্যামেরাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। বিসর্জনের শোভাযাত্রার মূল রাস্তার দু’ধারে একাধিক বাড়ির ছাদে সর্বক্ষণের জন্য থাকবে এই ক্যামেরা। যে সব ক্লাব ও বারোয়ারির বিরুদ্ধে আগে একাধিকবার গণ্ডগোল করার অভিযোগ আছে, তাদের একটা তালিকাও তৈরি করেছে প্রশাসন। বিসর্জনের শোভাযাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত এ বার ক্যামেরাবন্দি করা হবে। পুলিশ সুপার বলছেন, ‘‘কোনও উচ্ছৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। যারা গণ্ডগোল করবে তাঁদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে তাঁদের পুজোর অনুমতি দেওয়া হবে না।”
পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে গোটা বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের তরফে সাবধানও করা হয়েছে। প্রশাসনের এই অবস্থান যে শুধু কথার কথা নয়, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে কালীপুজোর ভাসানের সময়। ভাসানে একটি গোলমালের ঘটনায় তদন্ত করে পুলিশ এক বারোয়ারির বিরুদ্ধে একটি সুয়োমোটো মামলা দায়ের করে। ভবিষ্যতে তাদের আর পুজোর অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্যোক্তাদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এ বার পুলিশ এমন পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করছেন শহরের মানুষ।
কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানের শোভাযাত্রায় গণ্ডগোলের ঐতিহ্য দীর্ঘ দিনের। একাধিকবার খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে। এমন ঘটনা এই শহরের মানুষের কাছে যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বারই একাধিক বারোয়ারির মধ্যে গণ্ডগোল হয়। তাতে গুরুতর জখম হন বহু মানুষ। যথেচ্ছ লাঠিও চালায় পুলিশ। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপরে যারা গণ্ডগোল করে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিন্তু এ বার উল্টো পথে হাঁটতে চাইছে প্রশাসন।
গোটা বিষয়টি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কৃষ্ণনগর পুরসভাও। পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘অনেক সময় বিভিন্ন বারোয়ারির শোভাযাত্রার মধ্যে সমাজ বিরোধিরা ঢুকে যায়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলেই গণ্ডগোলটা ঘটে।’’ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানোর চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কৃষ্ণনগরের একটি রেস্তেয়াঁর মালিক সঞ্জয় চাকি বলেন, ‘‘বাইরের মানুষ আবার উৎসবের দিন গুলিতে আসতে শুরু করেছেন। ফলে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের দিনে গণ্ডগোল শুরু হলে মানুষ আসা বন্ধ করবেন।”
এ বার শহরের বিভিন্ন ক্লাব ও বারোয়ারিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটির কার্যকরী সভাপতি ব্যাসদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জগগ্ধাত্রী পুজো এই শহরের ঐতিহ্য। আমরা চাই না এমন কিছু হোক, যাতে বাইরের জগতের কাছে শহরের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। চেষ্টা করব শান্তিপূর্ণ ভাবে উৎসব করতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy