ছবি: ইন্দ্রাশিস বাগচী
লকডাউনে বদলে গেছে ওদের গানের ভাষা। মুর্শিদাবাদের কান্দি থানার দুর্গাপুর গ্রামের রাসিনা বেওয়া, ফুলবানু বিবিরা একসময় মুসলিম বিয়ের গান করে জেলা তথা গোটা রাজ্য জুড়েই সাড়া ফেলেছিলেন। তবে লকডাউনে বন্ধ সমস্ত সামাজিক অনুষ্ঠান। তাই বিয়েবাড়িতে আর গান গাওয়ার জন্য ডাক পড়ে না তাঁদের। তবে ঘরে বসে না থেকে গান গেয়েই লকডাউন সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সচেতনতার পাঠ দিচ্ছেন রাসিনারা। গানের সুর একই থাকলেও বদলে গেছে গানের ভাষা।
৪০ বছর ধরে রাসিনা, তনুজারা মুসলিম বিয়ের গান করে আসছেন। তাঁদের দলে গান গাওয়ার জন্য রয়েছেন ১০ জন মহিলা এবং বাজনা বাজানোর জন্য ২ জন পুরুষ। রাসিনা, গোলবানু, তনুজারা জানান, একসময় অনেক সামাজিক বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গাইতে হতো। পরে সময় পাল্টালে আর বাধার মুখে পড়তে হয় না।স রকারি অনুষ্ঠান হলেও গান গাইতে ডাকা হয় তাঁদের। রাসিনা বেওয়া বলেন, ‘‘ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় গান বাজনার প্রতি টান ছিল। আস্তে আস্তে তা নেশায় পরিণত হয়। এখন অনুষ্ঠান বন্ধ, তাই গানের মাধ্যমেই গ্রামবাসীদের আমরা সচেতন করার চেষ্টা করছি।’’
মুসলিম বিয়ের গানের পাশাপাশি জারিগান, লাঠিখেলা-সহ আরও নানা শিল্পে পারদর্শিতার প্রমাণ দিয়েছেন দলের মহিলা সদস্যরা। বছর ষাটের গোলবানু বিবি থেকে ২৩ বছরের তনুজা বিবি—গ্রামবাসীদের সচেতনতার পাঠ দিতে সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আর অস্ত্র হিসেবে গানকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।তাই কখনও বাড়ির উঠোনেই ঢোল ও খঞ্জনি বাজিয়ে লকডাউনের গানে সুর তুলছেন, কখনও আবার গ্রামের কাদা মাটির পথ পেরিয়ে এ পাড়া থেকে ও পাড়ার মানুষকে গান শুনিয়েই মাস্ক পরার ও ঘরে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। দলের সদস্য ফুলবানু বিবি বলেন, ‘‘গান আমাদের কাছে যেন স্বর্গ। তবে লকডাউনে গানের জন্য ডাক আসছে না। তাই সংসারের কাজের পাশাপাশি গান গেয়ে আর পাঁচটা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’’ তবে শুধু গান গাওয়া নয়। রাসিনা,তনুজারা ঘরে মাস্ক তৈরি করছেন। সেই মাস্ক বাইরে বিক্রিও করছেন, সম্পূর্ণ নিখরচায়। মাস্ক তৈরির পাশাপাশি পাটের নানা জিনিস তৈরি করছেন। রাসিনা বলেন, ‘‘শুধু গান গাইলেই তো আর হয় না। মানুষকে সচেতন করতে তাই কখনও কখনও দলের মেয়েরা মাস্ক বানিয়ে গ্রামবাসীদের দিয়ে আসে।’’ বছর তেইশের তনুজা বিবি বলেন, ‘‘আমরা গান গেয়ে গ্রামের মানুষকে মাস্ক পরার কথা বলছি। পাশাপাশি তাঁরা যাতে ঘরের বাইরে না বেরোন, পাড়ায় জমায়েত না করেন ও ঘরে ঢুকে সাবান দিয়ে যাতে হাত মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলেন,সেই বার্তায় দিচ্ছি।গ্রামের মানুষও অনেক সচেতন হচ্ছেন।’’
প্রায় প্রতিদিনই সকাল হতেই লকডাউনের ভাষায় সুর তোলেন রাসিনারা। তাঁদের গানের কথায় উঠে আসে সচেতনতার বার্তা। আগে বিয়ের গানের ভাষায় ছিল, ‘‘পান বসন্ত ফুল মালা,ও বানা-ও বানা,প্রেমের কোকিলা।’’ লকডাউনে সেই ভাষা বদলে হয়েছে, ‘‘লকডাউন চলছে মোদের বাইরে যাওয়া মানা, তোরা দ্যাখ, দ্যাখ এলো রে করোনা। মাস্ক পরে বাইরে যাব এই পরিকল্পনা, জ্বর সর্দি কাশি হলে যাব ডাক্তারখানা।’’ গোলবানুদের গানে সাড়া পড়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যেও। আসমত আলি বলেন, ‘‘লকডাউনের মধ্যেও মানুষ বাইরে বেরোচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি এই গ্রামের দিকে সে ভাবে পড়ে না। রাসিনা দিদিদের গানে সকলেই লকডাউন সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছে ও ক্রমশ সচেতনও হচ্ছেন।’’
জেলা তথা রাজ্যবাসীকে সচেতন করতে গান গাওয়ার জন্য দূর-দূরান্তে যেতেও রাজি দলের মেয়েরা। রাসিনা বলেন, ‘‘সমাজকে সুস্থ রাখতে যে কোনও জায়গায় যেতে রাজি। এক বার ডাকলেই পৌঁছে যাব।’’ জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক অনুপ কুমার গায়েন বলেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। এ কাজে ওঁরা আবেদন করলে সব রকম সাহায্য পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy