‘ফার্মা ইমপেক্স ল্যাবরেটরিজ়’ নামের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাকে গত বুধবার সমস্ত রকম উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ওই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার যাবতীয় স্যালাইন, ইঞ্জেকশন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ওই দিন স্বাস্থ্য দফতরের ‘সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর’ সব মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে বলেছে, ওই সংস্থার সরবরাহ করা ১৭ ধরনের ওষুধ যদি স্টোরে মজুত থাকে এবং তা যদি ওয়ার্ডে সরবরাহ হয়ে থাকে, তা হলে এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে ওই সব ওষুধ স্থানীয় ভাবে কিনে নিতে পারবেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
এর পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলার সব হাসপাতালে এসে পৌঁছোয় স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা। তাতে উল্লেখ হয়, ‘ফার্মা ইমপেক্স ল্যাবরেটরিজ়’-এর তৈরি ১৭ রকম সামগ্রী ব্যবহার করা যাবে না। বিকল্প হিসেবে নদিয়া জেলা জুড়ে ছোট-বড় সরকারি হাসপাতালে রাতারাতি অন্য প্রস্তুতকারক সংস্থার স্যালাইন ও ওষুধ জোগান করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতি-মৃত্যুর ঘটনার পরেই পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার বিভিন্ন স্যালাইন ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত সামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়। তখন থেকেই বিকল্প স্যালাইন প্রস্তুতকারক সংস্থা হিসেবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের ‘ফার্মা ইমপেক্স ল্যাবরেটরিজ়’-এর তৈরি স্যালাইনের গুরুত্ব ও চাহিদা বাড়তে থাকে। কিন্তু এ বার ওই সংস্থাকেও কালো তালিকাভুক্ত করল ‘ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ড’।
৩১ জানুয়ারি, শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের জারি করা নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও ভাবেই রাজ্যের কোনও মেডিক্যাল কলেজে ওই সংস্থার স্যালাইন, ইঞ্জেকশন, ওষুধ-সহ মোট ১৭ রকম সামগ্রী ব্যবহার করা যাবে না। নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরেই চিন্তায় পড়েছেন জেলায় থাকা ছোট-বড় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। প্রশ্ন উঠছে, নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর ওই সংস্থার স্যালাইন বা অন্য সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিকল্প হিসেবে কী ব্যবহার করা হবে?
ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে চিকিৎসকদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে ব্যবহার হওয়া স্যালাইন বা বিভিন্ন ওষুধ, ইঞ্জেকশন আনাজ বাজারে মেলে না! চাইলেই সহজে তা কেনা সম্ভব নয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের কখনই বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনার কথা বলা যায় না।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা সরকারি হাসপাতালে কোথাও পাঁচ হাজার, কোথাও আবার তারও বেশি বাক্স-বন্দি হয়ে রয়েছে সদ্য আনা ‘ফার্মা ইমপেক্স ল্যাবরেটরিজ় সংস্থার স্যালাইন। আবার, জেলা ও মহকুমা স্তরের হাসপাতালের ক্ষেত্রে নিজস্ব তহবিল থেকে সাময়িক ভাবে খোলা বাজার থেকে স্যালাইন কেনার ক্ষমতা থাকলেও তা-ও যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। আবার, অধিকাংশ গ্রামীণ বা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে সেই সুবিধাও নেই।
কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে?
শনিবার চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার চিকিৎসক সর্বানন্দ মধু বলেন, ‘‘যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরাও চাইলেই বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে পারছেন না। যে পরিমাণ চাহিদা তৈরি হয়েছে, রাতারাতি তা জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’’
আবার, রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে সুপার চিকিৎসক প্রহ্লাদ অধিকারী বলেন, ‘‘নির্দেশিকা জারির পর ওই নির্দিষ্ট সংস্থার সমস্ত সামগ্রীর ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। ওই রাতেই অন্য একটি সংস্থার কাছ থেকে কিছু স্যালাইন এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।’’
শনিবার নদিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা চিকিৎসক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘আপাতত স্থানীয় স্তর থেকে স্যালাইন কেনার কথা হাসপাতালগুলিকে বলা হয়েছে। আশা করছি, মঙ্গলবার থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’
যদিও হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রেও স্যালাইন বা অন্য চিকিৎসা সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মাবলী। যেমন দরপত্র ডাকা, গুণগত মান যাচাই করে নেওয়া ইত্যাদি। ফলে, এই সমস্যা খুব সহজে মিটবে না বলেই মনে করছেন জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)