গত ১৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য দফতর রাজ্যের সব হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি এবং সব জেলার সিএমওএইচদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি ১৪ রকম ওষুধ, ইঞ্জেকশন, স্যালাইনের তালিকা প্রকাশ করে সেগুলির ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি ওষুধ যেখানে যত মজুত আছে, তা দ্রুত তুলে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের ওই নির্দেশের পর বিভিন্ন হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিকল্প যে সব সংস্থার ওষুধ ব্যবহার হচ্ছিল, তার মধ্যে অন্যতম ‘ফার্মা ইমপেক্স ল্যাবরেটরিজ়’ সংস্থা। তবে গত বুধবার ড্রাগ কন্ট্রোল ওই সংস্থার উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিলেও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সরকারি হাসপাতালে সেগুলির ব্যবহার বন্ধের কোনও নির্দেশিকা শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত জারি করা হয়নি। তাতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন চিকিৎসকদের অনেকে। রোগীদের পক্ষে ওই সংস্থার ওষুধ, স্যালাইন ব্যবহার কতখানি নিরাপদ, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। অবশেষে শুক্রবার রাতে ওই নির্দেশ এসে পৌঁছায় জেলার হাসপাতালগুলিতে।
যদিও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা ছিল না বলেই জানিয়েছিলেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল-সহ নদিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালের সুপারেরা। শুক্রবার দুপুরে জেলা হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত সরকার বলেছিলেন, “আমাদের কাছে এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে এই মুহূর্তে ফার্মা ইমপেক্স ল্যাবরেটরিজ়-এর কোনও ওষুধ আমরা ব্যবহার করছি না। সবই স্থানীয় ভাবে কিনে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, আমাদের কোনও অসুবিধা নেই।”
একই ভাবে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও নির্দেশ না পাওয়ার কথা জানান নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার অনঘ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শুক্রবার দুপুরে জানান, ফার্মা ইমপেক্সের পাশাপাশি অন্য একাধিক সংস্থার ওষুধ এবং স্যালাইন ব্যবহার করার কথাই। তিনি বলেছিলেন, “আমাদের কাছে ওই সংস্থার ওষুধ খুব বেশি নেই। তবে আমরা নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।”
অবশেষে নির্দেশ আসে শুক্রবার সন্ধ্যায়। ওই দিন রাতে নদিয়ার সিএমওএইচ জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, “আমরা সন্ধ্যার পরে নির্দেশিকা পেয়েছি। এবং সঙ্গে সঙ্গে জেলার সর্বত্র এই নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আর কোথাও ওই সংস্থার কোনও ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে না।”
এর পরেই শুক্রবার রাতে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার অনঘ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যার সময়ে আমরা নির্দেশ পেয়েছি এবং সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
শনিবার স্বাভাবিক ভাবেই স্বাস্থ্য মহলে এই প্রশ্ন উঠেছে যে, নির্দেশিকা পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত সে সকল রোগী ওই সংস্থার ওষুধ ব্যবহার করলেন, তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়ভার কে গ্রহণ করবেন?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)