গঙ্গা জলপ্রকল্পের বাস্তবায়ন না হওয়াকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছিল কান্দির পুরভোটের প্রচার। কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দিতে ব্যর্থ—সেই ধুয়ো তুলে প্রচারে সুর চড়িয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু শেষ হাসি হাসল সেই কংগ্রেসই।
এ বারের পুরভোটে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে কংগ্রেস ১৩টি আসন দখল করেছে। বাকি পাঁচটি আসনের মধ্যে তৃণমূল তিনটি ও বাম সমর্থিত নির্দল দু’টি আসন দখল করেছে। গত পুরসভা ভোটে ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে কংগ্রেস ১১টি, তৃণমূল দু’টি, সিপিএম একটি ও ফরওয়ার্ড ব্লক একটি ও বাম সমর্থিত নির্দল দু’টি আসনে জয় লাভ করেছিল। এ বারের ভোটে কংগ্রেস দু’টো আসন খুইয়েছে। তবে পুরবোর্ড নিজেদের দখলে রেখেছে। কিন্তু কোন অঙ্কে তা সম্ভব হল?
স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, ভোটের বাজারে পরিকল্পিত ভাবে অপপ্রচারে নেমেছিল বিরোধীরা। শহরবাসীরা সেই অপপ্রচার কানে তোলেননি। বিদায়ী পুরপ্রধান গৌতম রায় বলেন, ‘‘কান্দি বরাবরই কংগ্রেসের জায়গা। তবে আমরা কাজ করেছি বলেই মানুষ ভোট দিয়ে ফের আমাদের ফিরিয়ে এনেছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কান্দিতে পানীয় জলের সমস্যা পুরোপুরি না মিটলেও সর্বাধিক মানুষ যাতে পরিস্রুত পানীয় জল পান সেদিকে নজর দিয়েছি। আর তাতেই সাফল্য এসেছে।’’
প্রসঙ্গত, ১৮ ওয়ার্ডের কান্দি শহরে জনসংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। তা ছাড়াও কান্দি মহকুমার সদর শহর হওয়ায় কান্দি, বড়ঞা, খড়গ্রাম, ভরতপুর ১ ও ২ নম্বর মোট পাঁচটি ব্লকের কয়েক হাজার বাসিন্দা জরুরি কাজে এই শহরে নিত্য যাতায়াত করেন। সব মিলিয়ে শহরে পানীয় জলের চাহিদা চার লক্ষ গ্যালনেরও বেশি। কিন্তু শহরে মাত্র আড়াই লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ করা হয়। তাই সারা বছরই বাসিন্দাদের জলকষ্ট লেগে থাকে। এবারের পুরভোটে সেই জলকষ্টকে সামনে রেখে পুরভোটের প্রচারে নেমেছিল বিরোধীরা। কান্দিতে গঙ্গা জলের প্রকল্পকে কংগ্রেসের ‘ভাঁওতা’ বলে দাবি করেছিল বিরোধীরা। কংগ্রেসের পাল্টা হিসেবে গঙ্গা জলপ্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ার পিছনে রাজ্য সরকারের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছিল। পুরভোটের ফল তাদের সেই দাবিকে সিলমোহর দিল বলে দাবি কংগ্রেসের।
এ বারের পুরভোটে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা জিতলেও বামেরা একটিও আসন পায়নি। এ জন্য নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছে বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের কান্দি জোনাল সম্পাদক কাজল চক্রবর্তী বলেন, “দু’জন বাম সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হলেও দলের প্রতীকে কোনও প্রার্থী জয়ী হননি। এ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।” তবে তাঁর কথায়, “কান্দি বরাবর কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। সেখানে আমাদের সমর্থনে দু’টি নির্দল জয়ী হয়েছে। এতে আমরা খুশি।”
গতবারের থেকে এ বার তৃণমূল একটি আসন বেশি পাওয়াই খুশি হাওয়া তৃণমূল শিবিরে। নেতাদের দাবি, কংগ্রেসে ক্ষমতায় আসবে জানা ছিল। মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডল বলেন, “মানুষের রায় মেনে নিতেই হবে। তবে জেলা জুড়ে জয়ের নিরিখে তৃণমূল দ্বিতীয় আসনে উঠে আসাকে আমরা একটা বিরাট পাওনা বলে মনে করছি।’’ এতে দলের কর্মীদের মধ্যেও মনোবল বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
এ দিকে, কান্দির বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের গৌতম রায় টানা তিনবারের কাউন্সিলর তৃণমূলের বিবেকানন্দ মিশ্রকে হারিয়ে জয়ী হওয়ায় খুশির হাওয়া কংগ্রেসের শিবিরে। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের রায়ে আমরা খুশি। আগামী দিনে কংগ্রেসের সংগঠন আরও মজবুত করে জেলায় অধীর চৌধুরীর হাত আরও শক্ত করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy