Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Enforcement Directorate

Manik-ED: ইডি বেরিয়েছে! ফোন আসে তবু তারা আসে কই

শোনা যায়, পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বাড়িতে হানা দিতে এসেছেন ইডি অফিসাররা।

ইডি-র অপেক্ষায় মানিক ভট্টাচার্যের বাড়ির সামনে কাটল দিন। বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জের ঘোড়াইক্ষেত্রে। নিজস্ব চিত্র

ইডি-র অপেক্ষায় মানিক ভট্টাচার্যের বাড়ির সামনে কাটল দিন। বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জের ঘোড়াইক্ষেত্রে। নিজস্ব চিত্র

অমিত মণ্ডল, সাগর হালদার  
কল্যাণী, কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২২ ০৭:২৯
Share: Save:

ইডি আসছে... ইডি আসছে...

গুঞ্জনটা শুরু হয়েছিল বুধবার সন্ধ্যা থেকেই।

নদিয়ায় যে ইডি আসবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই, বরং সেটাই প্রত্যাশিত। নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত, রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের পৈতৃক ভিটে কালীগঞ্জের ঘোড়াইক্ষেত্রে। জেল হেফাজতে থাকা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন এই জেলায় তৃণমূলের দলীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন। বিশেষত কল্যাণী আর হরিণঘাটায় তাঁর ‘শাখা-প্রশাখা’ ভাল রকম বিস্তৃত ছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ একটি সাদা গাড়ি হরিণঘাটার কল্যাণী মোড়ে বিএসএফ ক্যাম্পে ঢোকে। পিছু পিছু কলকাতা থেকে এসে হাজির কয়েকটি টিভি চ্যানেলের গাড়িও। স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও জড়ো হয়ে যান। আধ ঘণ্টা বাদে এসে পৌঁছয় ছাই রঙের আর একটি গাড়ি।

শোনা যায়, পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বাড়িতে হানা দিতে এসেছেন ইডি অফিসাররা। কয়েক দিন ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না ইডি, নোটিসও ধরাতে পারছে না। পলাশিপাড়ার বিধায়ক হলেও পাশের নাকাশিপাড়া কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে মানিকের তাঁর গ্রাম ঘোড়াইক্ষেত্র। কল্যাণী থেকে কৃষ্ণনগর ছুঁয়ে নাকাশিপাড়া শ’খানেক কিলোমিটার দূর, যেতে অন্তত তিন ঘণ্টা তো লাগবেই। জল্পনা শুরু হয়ে যায়, ইডি-র ‘টিম’ কি রাতেই বেরিয়ে যাবে না কি পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে?

শুধুই কি নাকাশিপাড়া? না কি পার্থ-যোগে কল্যাণী-হরিণঘাটাতেও কোথাও হানা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে ইডি-র? সেই কারণেই কি এই ক্যাম্পে এসে আস্তানা গাড়া? জল্পনা শুরু হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে কোথায় কোথায়, কোন নেতার ঘরে তারা হানা দিতে পারে?

বিএসএফ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এল ছাই রঙের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

বিএসএফ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এল ছাই রঙের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

রাত ১১টা নাগাদ মুখে-মুখে খবর ছড়ায়, ইডি-র একটি দল রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ নাকাশিপাড়ার উদ্দেশে বেরোবে। বিএসএফ ক্যাম্পের বাইরে সংবাদমাধ্যমের বিনিদ্র অপেক্ষা শুরু হয়। কেউ কেউ অকুস্থলে না এলেও ফোনে যোগাযোগ রাখতে থাকেন, বিশেষ করে সংবাদ অফিসের নিশিতে পাওয়া কর্মীরা। ঘড়ির কাঁটা মাঝরাত পেরিয়ে ভোর ৪টের দিকে গড়ায়। ক্যাম্পের ফটক খুলে কোনও গাড়ি বেরিয়ে আসে না।

এর পর ভিড় পাতলা হতে থাকে। সংবাদকর্মীরা কেউ কেউ ঘরে, কেউ বা হোটেলে একটু গড়িয়ে নিতে যান।

আলো ফুটতেই কিন্তু আবার সেই ক্যাম্পের সামনে ফিরে আসা। সকাল ৮টা নাগাদ সাদা গাড়িটিকে ভিতরেই অন্য একটি গেটের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। সংবাদ কর্মীদের ভিড় সেই ফটকের দিতে ধেয়ে যায়। কিন্তু পরে মূল ফটক দিয়েই বেরোয় গাড়িটি। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কৃষ্ণনগরের দিকে এগিয়ে পেট্রল পাম্পে তেল ভরে মুখ ঘুরিয়ে কলকাতার রাস্তা ধরে।

আবার অপেক্ষা।

সাড়ে ১০টা নাগাদ বেরিয়ে আসে ছাই রঙের গাড়িটি। জাতীয় সড়কে উঠে সেটি কৃষ্ণনগরের পথ ধরে। দ্রুত ফোন যায় কালীগঞ্জের গ্রামে সকাল থেকে অপেক্ষা করা সহকর্মীর কাছে — ইডি বেরিয়েছে!

বৃহস্পতিবার ভোর হওয়া ইস্তক অপেক্ষায় ঘোড়াইক্ষেত্র গ্রাম। মানিকেরা চার ভাই। এক ভাই মৃত, বাকিরা কেউই এই গাঁয়ের বাড়িতে পাকাপাকি থাকেন না। বাড়ি তালাবন্ধ। কিন্তু সেই বাড়ি ঘিরে গ্রামবাসীর কৌতূহল চরমে। সত্যিই কি ই়ডি আসছে? তারা কি তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকবে? সেখানে কি এমন কিছু পাওয়া যাবে যাতে মানিক আরও বিপদে পড়ে যাবেন?

বাতাসে কান পেতে বোঝা যায়, দুর্নীতি মামলার জেরে যতই নিন্দিত হোন মানিক, গাঁয়ের মানুষ এখনও তাঁকে ভালবাসেন। তাঁর জন্য দুশ্চিন্তা করেন। বাড়ির উল্টো দিকে বাঁশের মাচায় ভিড় থমকে রয়েছে। সেখানে বসেই প্রবীণ ইন্দ্রজিৎ সর্দার জোরের সঙ্গে বলেন, “মানিকবাবু কিছুতেই এই সবে কাজে যুক্ত থাকতে পারেন না, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে। এখন ইডি এসে কী করে, সেটাইদেখতে এসেছি।” জমি থাকা ভিড়ে এমনও অনেকে ছিলেন যাঁরা হাতের কাজ ফেলে এসে বসে রয়েছেন। যেমন অমর শেখ এ দিন আর চাষের কাজে যাননি। তিনি বলেন, “ইডি এখানে এসে কী পাবে? সেটাই দেখতে চাই।” এ দিনের মতো পড়াশোনা মুলতুবি রেখে আসা জিত ভট্টাচার্য বলেন, “শুনছি, কী নাকি লুক-আউট নোটিস লটকাবে দরজায়। সেটা কি আদালতের অনুমতি ছাড়া করা যায়?”

দুপুরে ভাদ্রের আঁচে ভিড় কিছুটা হালকা হয়ে যায়। অনেকে হয়তো স্নান-খাওয়া সেরে নিতে যান। সংবাদ কর্মীদের নড়ার জো নেই। মাঝগগনের রোজ ঢলতে আবার গুটি-গুটি পায়ে ফিরে আসন অনেকে। আসারই সার! ছায়া বাড়িয়ে বিকেল ঢলে যায় সন্ধ্যার দিকে। ইডি আসে না।

সন্ধ্যায় ফোনে পাওয়া যায় মানিকের ভাই পান্নালাল ভট্টাচার্যকে। কাছেই দেবগ্রামে থাকেন। বলেন, “গ্রামের বাড়িতে মাঝে-মধ্যে যাই। কাজের ব্যস্ততায় আজ যাওয়া হয়নি‌। ইডি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি‌।”

অন্য বিষয়গুলি:

Enforcement Directorate Manik Bhattacharya Kaliganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy