Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

ব্রিগেডের ধাক্কায় দিনভর নাজেহাল

বিরক্ত  মুখে বললেন, “কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে আমার এক আত্মীয় ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখাতে যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাস পেতে যা দেরি হল তাতে আর গিয়ে লাভ হবে না।”

ভরসা অটো। করিমপুরে।নিজস্ব চিত্র

ভরসা অটো। করিমপুরে।নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪৬
Share: Save:

বালিয়া বাস স্ট্যান্ডে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন এক যুবক। শেষ পর্যন্ত যখন বাস এল তখন তিনি বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছেন। বিরক্ত মুখে বললেন, “কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে আমার এক আত্মীয় ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখাতে যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাস পেতে যা দেরি হল তাতে আর গিয়ে লাভ হবে না।”

ওই যুবকের মতো অনেক মানুষ শনিবার বিভিন্ন কারণে রাস্তায় বেরিয়ে যানবাহনের অভাবে নাকাল হয়েছেন। ব্রিগেডে চলে গিয়েছে সব বাস। দুর্ভোগ যে হবে তা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে সকলেই জানতেন। তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হননি। তা ছাড়া, শনিবার বলে অনেক অফিস, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। নেহাত প্রয়োজনে যাঁরা বেরিয়েছেন তাঁদের অনেকেই দুর্ভোগে পড়েছেন।

জেলা বাস মালিক সমিতি সুত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৬০০ র মত বাস প্রতিদিন চলাচল করে বিভিন্ন রুটে। এর মধ্যে প্রায় আশি শতাংশ বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল শাসক দলের ব্রিগেড সমাবেশের জন্য। ফলে রাস্তায় বাসের সংখ্যা ছিল নামমাত্র। সকালে কাজের সময়ে একের পর এক বাসে পতাকা লাগিয়ে ব্রিগেডে গিয়েছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। অধিকাংশ লোকাল ট্রেনের কামরার দখলও নিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। ফলে যাঁরা অফিসে, হাসপাতালে বা অন্য কোনও প্রয়োজনে বেরিয়েছেন তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ। বাসে-ট্রেনে বাদুরঝোলা হয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের। কোথাও বহু ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে বাসের জন্য, আবার কোথাও ভিড়ে বাসে বা ট্রেনে উঠতেই পারেননি।

পেটের যন্ত্রণা নিয়ে করিমপুর হাসপাতালে এসেছিলেন হোগলবেড়িয়ার বাসিন্দা বছর ষাটের রাজ্জাক শেখ। রাজাপুর থেকে বাসে করিমপুর যাওয়ার চেষ্টা করেও বিফল হন। বাস পাননি অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পরেও। পরে রওনা দিলেন অটোতে। বললেন, "বাস না-থাকায় সতেরো টাকা ভাড়া দিয়ে অটোতে উঠতে হল। দেরিও হয়ে গেল।"

শান্তিপুরের গোবিন্দপুরের কাছে জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়েছিলেন সন্তু বিশ্বাস। যাবেন রানাঘাটে। সেখানে স্কুলে জরুরি কাজ রয়েছে। বেশ কিছু সময় বাসের দেখা না-পেয়ে পা বাড়ালেন স্টেশনের পথে। করিমপুর পান্নাদেবী কলেজের ছাত্রী শিরিন সুলতানা ও তামান্না জানান, ব্যারাকপুরের বাড়ি থেকে প্রতিদিন তাঁরা বাসে করেই কলেজে আসেন। এ দিন অটোতে আসতে হয়েছে। বাসের পাঁচ টাকার বদলে অটোতে ভাড়া দিতে হয়েছে পনেরো টাকা। চাকদহ বাসস্টান্ডের ৭০ টি বাসের মধে ৬৪টি বাস এ দিন ব্রিগেডের সভায় ভাড়া গিয়েছিল। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বাসস্ট্যান্ড, রথতলা বাসস্টান্ড থেকেও এ দিন অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম বাস চলাচল করেছে।

যাঁরা শনিবারে রাস্তায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই মত, দলমত নির্বিশেষে ব্রিগেডে সভা হলেই অল্পবিস্তর যাতায়াত নিয়ে যাতনায় পড়তে হয়। সেটা শাসক দলের ডাকা ব্রিগে়ড হলে সমস্যা বাড়ে। যাঁদের বাস ব্রিগেড উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে তাঁদের অবশ্য খুব একটা অসুবিধা হয় না, কারণ, তাঁদের দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়। যেমন চাপড়া, করিমপুর, তেহট্টের থেকে নেওয়া বেসরকারি বাসগুলিকে ভাড়া বাবদ দেওয়া হয়েছে মোটামুটি বারো থেকে আঠেরো হাজার টাকা।

নবদ্বীপেও এ দিন বাসের আকাল ছিল। রেলগেট থেকে কৃষ্ণনগর বা বর্ধমান যাওয়ার জন্য যাত্রীদের নাজেহাল হতে হয়। সকালের দিকে কার্যত কোনও বাসই মেলেনি। একটু বেলার দিকে কৃষ্ণনগর বা কালনা যাওয়ার এক আধটা বাস এসেছে। ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছে অটো ও টোটো। যেমন খুশি ভাড়া চেয়েছে তারা। বিপদে পড়া যাত্রীরাও তা বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE