জীবনকৃষ্ণ সাহা। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। মাস কয়েক আগে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। জেল থেকে বেরিয়ে দলীয় কর্মীদের শুভেচ্ছা, সংবর্ধনায় ভেসে গিয়েছিলেন জীবন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পর থেকে তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতেই তাঁকে আর বিশেষ দেখা যায়নি। মঙ্গলবার বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রবিউল আলম বার্তা দিয়েছেন, দলীয় নেতাকর্মীরা যেন বড়ঞার বিধায়কের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখেন। এটা ‘ক্যামাক স্ট্রিটের অর্ডার’ বলে জানিয়েছেন রবিউল। যদিও জীবনকৃষ্ণ জানিয়েছেন, এমন কোনও নির্দেশের কথা তিনি জানেন না। রবিউলের বার্তার পর ধন্দে পড়ে গিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক জীবন।
মঙ্গলবার প্রকাশ্য সভা থেকে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, বড়ঞার বিধায়কের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই! মঙ্গলবারের সভা থেকে রবিউল বলেন, “বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে দলের সমস্ত কাজ থেকে দূরে রাখতে বলেছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এর কী কারণ, তা আমাদের জানা নেই। তবে এই কারণে এই মঞ্চে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।” তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি ক্যামাক স্ট্রিটের (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অফিস কলকাতার যে জায়গায়) অর্ডারের কথা জানিয়ে দিচ্ছি। সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আর বারো-চোদ্দটা মাস বিধায়ক হিসাবে যত দিন উনি রয়েছেন, মানুষের পরিষেবা দেওয়ার জন্য থাকবেন। সই-সাবুদ করবেন। তা ছাড়া তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে রাখা যাবে না। (তাঁর সঙ্গে) সমস্ত সম্পর্ক ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। পরবর্তী সময়ে তিনি দলের কোন কর্মসূচিতে ডাক পাবেন না বলেও শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
বড়ঞা বিধানসভা এলাকার কৃষক বাজার চত্বরে তৃণমূলের আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীর ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠানও। ওই মঞ্চ থেকেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা মাহে আলম বলেন, ‘‘এখানকার বিধায়ককে দলের কোনও সাংগঠনিক কাজে রাখা যাবে না। উপরমহল থেকেই এই বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’
নেতৃত্বের ওই বার্তা নিয়ে জীবনকৃষ্ণের বক্তব্য, ‘‘কেন ওঁরা এ রকম মন্তব্য করেছেন, তা আমি জানি না। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি বিধানসভায় যাবতীয় কাজ করছি। আমার কাছে কিন্তু এ রকম কোনও নির্দেশিকা নেই। কে কোথা থেকে কী বলছেন আমি জানি না।”
গত বছরের ১৪ এপ্রিল জীবনকৃষ্ণের কান্দির বাড়িতে টানা তল্লাশি চালায় সিবিআই। তৃণমূল বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। অভিযোগ, সেই জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশির ফাঁকে তাঁর ব্যবহার করা দু’টি মোবাইল ফোন বাড়ির পিছনে পুকুরের জলে ফেলে দিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। জল থেকে জীবনের ফোন খুঁজে বার করতে বেগ পেতে হয় তদন্তকারীদের। তৈরি হয় নাটকীয় পরিস্থিতি। দু’দিন পর ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে কলকাতা থেকে সিবিআইয়ের আরও একটি দল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে বিধায়কের বাড়িতে পৌঁছয়। গ্রেফতার করা হয় জীবনকে। লোকসভা ভোট পর্বের মাঝে গত ১৪ মে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি জীবনকৃষ্ণের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় ১৩ মাস পরে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে জামিন পান বড়ঞার বিধায়ক। এর পর বিধানসভা অধিবেশনেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু মঙ্গলবার বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান জানিয়ে দিলেন, বড়ঞার বিধায়ককে দলের সমস্ত কাজ থেকে দূরে রাখতে বলেছেন রাজ্য নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy