এক-মনে: বহরমপুরের একটি মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তুলির টানে প্রতিমায় প্রাণ দিচ্ছেন শিল্পী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
পাড়ার পুজো সামলাতেন পুরুষরাই। সব কিছুতেই ওঁদের দাপট ছিল দেখার মতো।
কিন্তু আচমকা এক দিন তাঁরা পাড়ার মহিলাদের ডেকে জানালেন, নিজেদের অসহায়তার কথা। তাঁরা বললেন, ‘‘আমরা আর পেরে উঠছি না। এ বার থেকে পুজোর দায়িত্ব নিতে হবে তোমাদের।’’
সেই শুরু। তার পর থেকেই পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন পাড়ার মহিলারাই। তাঁরা পুজোর দায়িত্ব নেওয়ার পর পুজো কমিটির নামেরও বদল ঘটে। ১৯৯৮ সাল থেকে যা ছিল কৃষ্ণপুর উত্তরপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, ২০০৬ সালে মহিলারা নতুন নামকরণ করেন কৃষ্ণপুর উত্তরপাড়া (মহিলা মহল) সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
কৃষ্ণপুরের উত্তর ও দক্ষিণপাড়া মিলিয়ে যৌথ পুজো আয়োজন করতে বৈঠকে বসেন দুই পাড়ার লোকজন। কিন্তু মতান্তর হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বৈঠক ভেস্তে যায়। পৃথক ভাবে উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়ায় পুজোর প্রচলন হয়। সেই মতো ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয় উত্তরপাড়া পুজো কমিটির দুর্গাপুজো। পুজো কমিটির সভানেত্রী বাণী মজুমদার জানান, তখন পাড়ার যুবক ও বয়স্করা পুজোর আয়োজন করতেন। পরে চাকরি পেয়ে ছেলেরা ব্যস্ত হয়ে যান। কেউ কেউ চাকরি পেয়ে কর্মস্থলে চলে যান। বয়স্ক যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই বাড়ি করে অন্যত্র চলে যান। সব মিলিয়ে পুজো ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়।
তখন পুজো আয়োজনের ভার এসে পড়ে পাড়ার মেয়েদের উপরে। বাণীদেবী জানান, পুজো বন্ধ হয়ে যাবে শুনে পাড়ার সকলের মন খারাপ হয়ে গেল। আলোয় মাতোয়ারা পুজোর কয়েকটা দিন অন্ধকারের মধ্যে যাতে কাটাতে না হয়, তাই মহিলারা এগিয়ে এসে পুজোর দায়িত্ব তুলে নেন। বাণীদেবীর কথায়, ‘‘আমার মতো কমিটির আরও জনা দশেক মহিলা আগে বাড়ির বাইরে বের হতাম না। কিন্তু এখন পুজোর বাজার করা থেকে প্রতিমার বায়না দেওয়া, মণ্ডপ থেকে পুরোহিত— যাবতীয় কাজ সামাল দিই আমরাই।’’
সুষ্ঠু ভাবে পুজো সামাল দিতে কমিটির সভানেত্রী ও সম্পাদিকা মোটা অঙ্কের চাঁদা দেন। এ ছাড়া পুজোর আগে নয়, মহিলা মহলের মাসিক বৈঠকে পুজোর জন্য সদস্যদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদাও সংগ্রহ করা হয়। প্রতিমার দায়িত্ব প্রতি বছর কোনও না কোনও সদস্য নিয়ে থাকেন। তবে কোনও বছর দায়িত্ব কেউ নিতে না পারলে প্রতিমার খরচ বহন করে পুজো কমিটিই।
পুজো কমিটির সম্পাদিকা সুমিতা রায় জানান, পুজোর ভোগের দায়িত্ব ভাগ করে নেন তাঁদের কোনও না কোনও সদস্য। যেমন এ বছর সপ্তমীর ভোগের দায়িত্বে লতা রায়, অষ্টমীর ভোগ দেবেন বাণী মজুমদার, নবমীতে ডলি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সন্ধিপুজোর ভোগের ভার লক্ষ্মী দাসের। সব মিলিয়ে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে তাঁরা কম বাজেটে পুজোর আয়োজন করে সকলকে চমকে দিয়েছেন। তবে কোনও বছর যে বাজেট ছাড়িয়ে যায় না, তা নয়। তখন নিজেরা বসে আলোচনার মধ্যে দিয়ে টাকার অঙ্ক ভাগ করে নেন তাঁরা।
তবে কি পুজোয় পুরুষদের কোনও ভূমিকাই থাকে না?
মুচকি হেসে পুজো কমিটির সভানেত্রী জানান, পৌরহিত্য তাঁরা কেউ করতে পারেন না। আর বিসর্জন ঘাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য মণ্ডপ থেকে ভ্যানে প্রতিমা তোলার কাজটা বেশ কঠিন। তখন তো পাড়ার ছেলেদের ডাকতেই হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy