Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বদলি রুখতে এককাট্টা পড়ুয়ারা

বদলির পরোয়ানা এসেছে তো কি? প্রধান শিক্ষককে স্কুলে রাখার দাবিতে তারা নাছোড়। বছর চল্লিশের প্রবোধ বিশ্বাস হাঁসখালি সমবায় বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন গত ১২ বছর ধরে। এই সময়ের মধ্যে তিনি ক্লাসঘরের সংখ্যা বাড়িয়েছেন।

স্কুলে থেকে যাওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে দাবি জানাচ্ছে পড়ুয়ারা। — নিজস্ব চিত্র

স্কুলে থেকে যাওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে দাবি জানাচ্ছে পড়ুয়ারা। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:১৫
Share: Save:

বদলির পরোয়ানা এসেছে তো কি? প্রধান শিক্ষককে স্কুলে রাখার দাবিতে তারা নাছোড়।

বছর চল্লিশের প্রবোধ বিশ্বাস হাঁসখালি সমবায় বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন গত ১২ বছর ধরে। এই সময়ের মধ্যে তিনি ক্লাসঘরের সংখ্যা বাড়িয়েছেন। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষাগারের প্রভূত উন্নতি করেছেন। তাঁর সময়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ভাল হতে শুরু করেছে। স্কুল চত্বর শুধু তাই নয়, সন্তানস্নেহে আগলে রেখেছেন গোটা স্কুল। এক কথায়, শ্রী ফিরতে শুরু করেছে স্কুলের।

এই অবস্থায় প্রধান শিক্ষকের চলে যাওয়া রুখতে ছাত্রছাত্রীদের কেউ অনুনয়, বিনয় করে। কেউ বা কেঁদে ভাসায়। কয়েক ধাপ এগিয়ে কেউ বা বিক্ষোভ দেখায়। ছাত্রছাত্রীদের দাবির মুখে শেষ পযর্ন্ত হার মানলেন প্রবোধবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওরা যে কাঁদছে। এরপরও কি করে যাই বলুন তো?’’ স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাটের নবপল্লি এলাকার প্রবোধবাবু সম্প্রতি বাড়ির পাশের নাশরা হাইস্কুলে বদলির জন্য আবেদন করেন। সেই মতো নির্দেশ চলে আসে। এরপরে বিষয়টি আর চাপা থাকেনি। বৃহস্পতিবার প্রার্থনা সভা শুরু হওয়ার সময় প্রবোধবাবুর কাছে ছাত্রছাত্রীরা জানতে চায় স্কুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত সত্যি কিনা!

প্রধান শিক্ষক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করতেই কয়েক’শো ছাত্রছাত্রী প্রবোধবাবুকে ঘিরে অনুনয়, বিনয় শুরু করে। সহশিক্ষক অখিল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এমন ঘটনার কথা আগে কাগজে পড়েছি। প্রবোধবাবুকে জড়িয়ে ধরে ছাত্রছাত্রীরা কাঁদতে দেখে মনে হচ্ছিল এক শিক্ষকের কাছে এর থেকে বড় পাওনা আর কি থাকতে পারে?’’

ছাত্রছাত্রীদের দেখাদেখি পরে একই অনুরোধ আসতে থাকে শিক্ষকদের থেকেও। প্রবোধবাবুকে মত বদলের অনুরোধ জানান তাঁরা। ছুটে আসেন কিছু প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী এমনকি অভিভাবকরাও। সকলেরই এক সুর— ‘‘স্যার, চলে যাবেন না।’’ প্রবোধবাবু পিছু হটায় উচ্ছ্বসিত সকলেই। প্রিয় শিক্ষক যাবেন শুনেই কেঁদে ফেলেছিল একাদশ শ্রেণির রিয়া মণ্ডল। রিয়ার কথায়, ‘‘স্কুলের প্রতিটি খুঁটিনাটির প্রতি নজর রয়েছে প্রবোধবাবুর। রেজাল্ট আগের থেকে ভাল হয়।’’

সব শুনে প্রবোধাবাবু বলছেন, ‘‘কোনও দিন বুঝতে পারিনি যে এরা আমাকে এত ভালবাসে। না! এদের ছেড়ে আর কোনও দিন কোথাও যেতে পারব না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE