Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আর্চবিশপের

রানাঘাট কাণ্ডে এ বার প্রশ্ন উঠল তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়েও। শুক্রবার রাতের ঘটনার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনও দুষ্কৃতীকেই গ্রেফতার করতে পারেনি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া রাজ্য পুলিশের অধীনস্থ সিআইডি। এ নিয়ে সোমবারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৩
Share: Save:

রানাঘাট কাণ্ডে এ বার প্রশ্ন উঠল তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়েও। শুক্রবার রাতের ঘটনার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনও দুষ্কৃতীকেই গ্রেফতার করতে পারেনি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া রাজ্য পুলিশের অধীনস্থ সিআইডি। এ নিয়ে সোমবারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজা। আর মঙ্গলবার তিনি প্রশ্ন তুললেন, তদন্তে প্রশাসনের নীরবতা ও পুলিশের কাজে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে। এ দিন তাঁর প্রশ্ন, “দুষ্কৃতীদের কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? সমস্যাটা কী, প্রশাসন তা-ও জানাচ্ছে না। ঘটনার পরে এত দিন কেটে গেলেও এ নিয়ে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না, সেটাই তো বোধগম্য হচ্ছে না!”

গাংনাপুরের কনভেন্ট স্কুলে ডাকাতি ও বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনী ধর্ষণের প্রতিবাদে সোমবার পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে সমাবেশ করেন অনেকে। পরে বিভিন্ন খ্রিস্টান ধর্মীয় সংস্থার প্রধানেরা নিজেদের কথা বলেন। আর্চবিশপ সেখানেই বলেছিলেন, “রানাঘাটে যে ঘটনা ঘটেছে, তা কখনওই কাম্য নয়। ঘটনাটি এতটাই খারাপ উদাহরণ তৈরি করেছে যে, পড়ুয়ারা পর্যন্ত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় যে অভিযুক্তেরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমরা চাই তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।” প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও আর্চবিশপ বলেন, “প্রশাসনের উপর এখনও আমরা আস্থা হারাইনি। তবে, এ কথা ঠিক যে প্রশাসন সময় মতো ব্যবস্থা নিলে ঘটনাটি হয়তো এড়ানো যেত।”

মঙ্গলবার অবশ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ দিন সকালেই এক বৈঠকে যোগ দিতে বেঙ্গালুরু গিয়েছেন আর্চবিশপ। টেলিফোনে তাঁর কাছে রানাঘাট-কাণ্ড নিয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রথমেই তাঁর প্রশ্ন “কোনও দুষ্কৃতী কি ধরা পড়েছে?” কেউই ধরা পড়েনি শুনে প্রশাসনিক স্তরে অস্বচ্ছতা নিয়ে আক্ষেপ করেন আর্চবিশপ। বলেন, “সোমবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর রানাঘাট যাওয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি এ ভাবে সদর্থক বার্তা দিয়েছিলেন বলে আশা করেছিলাম, প্রশাসনিক কাজকর্মে গতি আসবে। নতুন উদ্যমে তদন্ত হবে। কিন্তু কিছুই তো হল না!”


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

তবে সোমবার সন্ধ্যায় রানাঘাটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে যে জনরোষের মুখে পড়তে হয়, তার নিন্দাও করেন আর্চবিশপ। ওই ঘটনা কোনও ভাবেই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রানাঘাটের ওই কনভেন্টের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে আজ, বুধবার বেশ কিছু স্কুলকে নিয়ে ‘সলিডারিটি ডে’-র ডাক দিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অব খ্রিস্টান স্কুলস। পূর্বনির্ধারিত ওয়াই চ্যানেলের পরিবর্তে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে আজই প্রতিবাদসভার আয়োজন করেছে ‘বঙ্গীয় খ্রিস্টিয় পরিষেবা’।

রানাঘাট-কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় কলকাতার বিশপ অশোক বিশ্বাস বলেন, “নতুন কী আর বলব! যে দুষ্কৃতীরা এই কাজ করেছে তারাও যেন এমন জঘন্য কাজকর্ম থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আর কোথাও যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।”

নিন্দায় সরব হয়েছেন কলকাতার নাখোদা মসজিদের ইমাম মহম্মদ সফিক কাসমিও। তিনি বলেন, “এর নিন্দার ভাষা নেই। তবে সিসিটিভি ফুটেজে যখন দোষীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রী নিজে আশ্বাস দিয়েছেন, তখন আশা করছি দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। সংখ্যালঘু বলে নয়, এ ধরনের ঘটনা সব সময়ই নিন্দনীয়।”

কনভেন্টে এ ভাবে তাণ্ডব চালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে সোমবারই প্রশ্ন তুলেছিলেন আর্চবিশপ। তাঁর মতোই ওই দিন অ্যালেন পার্কের সভায় রানাঘাট-কাণ্ডের নিন্দায় সরব হন আরও অনেকে। এন্টালির সেন্ট মেরির সুপিরিয়র জেনারেল সিস্টার অমলা জানান, শুধু রানাঘাট বলে নয়, পৃথিবীর কোনও জায়গাতেই এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, তা দেখতে হবে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের রেক্টর ফাদার ডমিনিক সাভিও বলেন, “এই ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এটি মানবতার প্রতি অপরাধ।”

শহরতলির এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন শহরে আসা বিদেশি বিশিষ্টরাও। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কলকাতার আমেরিকান সেন্টার। ‘আওয়ার ভয়েজ আওয়ার জার্নি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নামী পরিচালক-লেখিকা ফ্রিডা লি মক এবং নারীবাদী মার্কিন লেখিকা তথা বক্তা মেলিস্সা সিলভারস্টেইন। সোমবার মার্কিন কনস্যুলেট-এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা উপস্থিত ছিলেন।

ফ্রিডা মন্তব্য করেন, “ভয়াবহ ঘটনা তো বটেই। এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” আর মেলিস্সা-র কথায়, “এর থেকেই বোঝা যায় সমাজে এখনও মেয়েদের জন্য কোনও স্বাধীনতা এবং বিচার নেই। আমরা এমন একটা বিশ্বে বাস করছি, যেখানে ৭০-৭২ বছর বয়সেও মেয়েদের কোনও নিরাপত্তা নেই।” দু’জনেরই মতে একে শুধু যৌন হামলার ঘটনা হিসাবে দেখাটা ঠিক নয়। তাঁরা বলেন, “এ সব মূলত পুরুষের শক্তি প্রদর্শনের পন্থা। তুমি মেয়ে অতএব তুমি শক্তিতে আমাদের থেকে কম। এই ধরনের ঘটনা আটকাতে সবাইকে বাধ্যতামূলক ভাবে শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষাই বোঝাবে যে ছেলে-মেয়ে সবাই এক।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE