Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

সত্যি কি এত দিনে ভিটের মালিক হব?

জেলায় প্রশাসনিক সভা করতে‌ এসে রাজ্যের জমিতে থাকা ১৫টি উদ্বাস্তু কলোনিকে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেমন হাল কলোনিগুলির? কারা থাকেন সেখানে? কী বলছেন তাঁরা? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।ভারত ভাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা আসার পরে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এ দেশে উদ্বাস্তুর ঢল নামে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের পুনর্বাসনের জন্য প্রথমে ‘গভর্নমেন্ট স্পনসরড কলোনি’ তৈরি হয়।

উদ্বাস্তু কলোনি। ভূপেন লোধ নগর। ছবি: প্রণব দেবনাথ

উদ্বাস্তু কলোনি। ভূপেন লোধ নগর। ছবি: প্রণব দেবনাথ

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৯
Share: Save:

পূর্ববঙ্গ থেকে ওঁরা বহু আগে প্রায় শূন্য হাতে চলে এসেছিলেন এ দেশে। মূলত সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলিতে ওঁরা বসতবাড়ি তৈরি করেন। জঙ্গল কেটে বসবাসের অযোগ্য জমিকে করে তোলেন বাসযোগ্য। কিন্তু আজও বহু ছিন্নমূল মানুষ জমির অধিকার পাননি। অনেক কলোনি এলাকায় এখনও নাগরিক পরিষেবা অপ্রতুল।

ভারত ভাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা আসার পরে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এ দেশে উদ্বাস্তুর ঢল নামে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের পুনর্বাসনের জন্য প্রথমে ‘গভর্নমেন্ট স্পনসরড কলোনি’ তৈরি হয়। তার পরে ‘এক্স ক্যাম্প সাইড’ এবং আরও নানা রকম ‘গ্রুপ কলোনি’ তৈরি হয়। এই সব কলোনিগুলি সরকার স্বীকৃত। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পুর্নবাসন পেয়েছেন এই সব কলোনির মানুষ।

শহরের কলোনিগুলির বাসিন্দারা পাঁচ কাঠা বসতবাড়ি পেয়েছেন। গ্রাম্য এলাকার কলোনিবাসীরা পেয়েছিলেন ১০ কাঠা জমি ও বেশ কয়েক কাঠা করে আবাদি জমি। কিন্তু তার পরেও অনুমোদনহীন বহু কলোনি রয়েছে জেলায়। সরকারি সিলমোহর না থাকার কারণে সেগুলির মানুষেরা পুনর্বাসনের শর্ত হিসেবে জমির অধিকার পাননি। অনেক কলোনি আবার প্রতিরক্ষা ও রেল দফতরের জমিতে রয়েছে। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের জটিলতায় সেগুলির বাসিন্দারা আজও জমির অধিকার পাননি।

কল্যাণী মহকুমার প্রায় তিরিশটি কলোনিতে সমীক্ষা করা হয়েছিল। শেষে ১৫টি সম্পর্কে জেলায় রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই মহকুমার ছ’টি কলোনিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গয়েশপুর পুর এলাকার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভূপেন লোধ কলোনি তৈরি হয়েছিল আশির দশকে। ও পার বাংলা থেকে আসা মৎস্যজীবী মানুষেরা নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা লাগোয়া একটি বিলে মাছ ধরার কাজ করতেন। তাঁদের থাকার জায়গা ছিল না। তখন মৎস্য সমবায়ের উদ্যোগে তাঁরা ঝিলের পাশেই কলোনি গড়ে তোলেন। কলোনির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তখন যা জঙ্গল ছিল, শেয়াল ঢুকতে ভয় পেত। কপর্দকশূন্য মানুষেরা জঙ্গল কেটেই সেখানে বাস করতে শুরু করেন। প্রথমে গোটা আটেক পরিবার বসতি শুরু করলেও এখন সংখ্যাটা ৫০ ছাড়িয়েছে। কয়েক বছর আগে পুরসভা জল-বিদ্যুতের সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু জমির পাট্টা বা দলিল কিছুই নেই তাঁদের। ফলে জমির পরিবর্তে ব্যাঙ্কঋণ মেলে না। ঘরবাড়ি তৈরির ঋণ মেলেনি। যে সব ব্যবসা করতে গেলে সরকারি দফতর জমির কাগজ দেখতে চায়, সে ব্যবসা শুরু করার উপায়ও ওঁদের নেই।

কলোনি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অতুল বলছেন, ‘‘যদি সত্যি অনুমোদন মেলে, এত বছর পরে একটু ভিটের মালিক হব।’’ এ কথা বলতে বলতেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জির কথায় এসে যান সত্তর ছোঁয়া বৃদ্ধ। অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীর ফারাক তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘‘জানি না আমাদের অনুপ্রবেশকারী বলে দেশ ছাড়তে হবে কি না। তা হলে ফের ঘরছাড়া হতে হবে।’’ তবে কলোনির মোড়ে জটলা করা ভিড়ের আশা, জমির দলিল পেলে কোনও আইনই তাঁদের তাড়াতে পারবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Land Document Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE